ঢাকা     সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

‘কিডনি রোগ ভবিষ্যতে মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৫, ১৪ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৭:৩৮, ১৪ মার্চ ২০২৪
‘কিডনি রোগ ভবিষ্যতে মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে কম-বেশি কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এদের মধ্যে আকস্মিক কিডনি রোগীর সংখ্যা ২৫-৩০ হাজার, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর সংখ্যা ৩৫-৪০ হাজার। কিডনি চিকিৎসক রয়েছেন ৩০০ জন। কিডনি রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে ১০ বছর পূর্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮০ লক্ষ থেকে ১ কোটি। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ কোটি। বৃদ্ধির হার এতই ব্যাপক যে, অদুর ভবিষ্যতে এটা মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৪ উপলক্ষে শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

'সুস্থ কিডনি সবার জন্য, বৃদ্ধি পাচ্ছে ন্যায়সঙ্গত সেবার সমান সুযোগ আর নিরাপদ ও সর্বোত্তম ওষুধের অনুশীলন’- প্রতিপাদ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৪ পালিত হয়। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজনও করে কিডনি বিভাগ।

কিডনি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তৌহিদ মো. সাইফুল ইসলাম দিপু, কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএইচএম হামিদ আহমেদ, অধ্যাপক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক প্রমুখ।

বক্তারা জানান, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০-১২ লক্ষ ছাকনি রয়েছে। মানুষ জন্মগ্রহণ করার ছয় সপ্তাহের মধ্যেই কিডনির ছাকনি বা ফিল্টার মেমব্রেন পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। কিডনি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে। এই পরিশোধিত রক্তের মধ্যে ১-৩ লিটার শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কোনো কারণবশতঃ এ ধরনের ফিল্টার বাঁধাপ্রাপ্ত হলে আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে।

তারা বলেন, কিডনির কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন নামক জৈব পদার্থ পরিমাপ করা হয়, যার মাধ্যমে কিডনি কতটুকু কাজ করছে তা বোঝা যায়। একজন সুস্থ পুরুষের শরীরে ক্রিয়েটিনিন সাধারণভাবে ১.১ মি.গ্রা. এবং মহিলার ১.০ মি.গ্রা. হিসাবে স্বাভাবিক ধরা হয়। যদি এই ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিকের উপরে তিনমাস বা ততোধিক স্থায়ী থাকে, তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী হিসাবে শনাক্ত করা হয়। রক্তে ক্রিয়েটিনিন ছাড়াও প্রস্রাবে নির্দিষ্ট মাত্রার অধিক প্রোটিন বা অ্যালবুমিন থাকলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ আছে বলে ধরা হয়। বাংলাদেশে তিন হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা প্রায় ১৮ ভাগ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে ১১ ভাগ, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ ভাগ এবং আইসল্যান্ডে ১০ ভাগ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত।

আকস্মিক কিডনি রোগের কারণ সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ডায়রিয়া, রক্তক্ষরণ, কিডনি প্রদাহ, তীব্র সংক্রমণ, আকষ্মিক হৃদরোগ, কিডনির ক্ষতিকারক কিছু ঔষধ, মুত্রনালীর প্রতিবন্ধকতা। এর লক্ষণসমূহ হচ্ছে- প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, শরীরে পানি আসা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া। এ অবস্থায় প্রয়োজনে রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া লাগতে পারে। 

অপরদিকে, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের কারণসমূহ হচ্ছে- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাইটিস ও অন্যান্য। লক্ষণ  হচ্ছে- বমি বমি ভাব, ক্ষুধা মন্দা, প্রথম দিকে ঘন ঘন প্রস্রাব, পরবর্তীতে কমে যাওয়া, ক্রমান্বয়ে দুর্বলতা বৃদ্ধি পাওয়া,  রক্ত স্বল্পতা, ও শ্বাস কষ্ট।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রিত প্রোটিনযুক্ত খাবার, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ,  ডায়ালাইসিস, কিডনি সংযোজন ইত্যাদির ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন বক্তারা।

ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন বিষয়ে বক্তারা বলেন, নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে একজন রোগী ৫ থেকে ১৫ বছর এবং সফল কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে ১০-১৫ বছর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। কন্টিনিউয়াস এমুলেটরি পেরিটনিয়াল ডায়ালাইসিস এক ধরনের ডায়ালাইসিস যাতে রোগীর পেটের ভিতরে স্থায়ীভাবে একটি ক্যাথেটার সংযোজনের মাধ্যমে পেরিটনিয়াল ফ্লুইড ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি হেমোডায়ালাইসিস এর চেয়ে অধিকতর সুবিধাজনক। যাদের হেমোডায়ালাইসিস দেয়া সম্ভব নয়, তাদের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশে সিএপিডি এর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।

অকেজো কিডনী রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে তারা বলেন, ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন কিডনি অকেজো রোগী যদি নিয়মিত হেমোডায়ালাইসিস করেন, তাহলে মাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে, সিএপিডি করলে মাসে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। উভয়ক্ষেত্রেই অন্যান্য ওষুধ খেতে হয়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধ ও হাসপাতালে থাকা বাবদ ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়। অপারেশনের পর ওষুধ বাবদ প্রথম বছরে খরচ হয় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ এবং পরবর্তীতে প্রতি বছর খরচ হয় ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং রোগীকে ওষুধ সারাজীবন নিয়মিত খেতে হয়।

/ঢাকা/মেয়া/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়