ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যুদ্ধে শুরু করোনায় শেষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ২২:৫৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
যুদ্ধে শুরু করোনায় শেষ

করোনা মহামারির কারণে টানা দুই বছর বিশ্বকে অর্থনৈতিক মন্দা সামাল দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ শুরু হয়েছিল চলতি বছরের শুরুর দিকে। কিন্তু বছরের প্রথম মাস পেরুতেই ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। মহামারির সময় সঙ্কট যে পর্যায়ে ছিল যুদ্ধ সেই সঙ্কটের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিল। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে চীনে করোনার সংক্রমণ।

ইউক্রেনকে উত্তর আটলান্টিকের সামরিক জোট ন্যাটো তাদের দলে ভেড়াতে চাইছে বলে গত কয়েক বছর ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির। ন্যাটো যোগ না দেওয়ার জন্য ইউক্রেন হুমকি-ধমকিও দিচ্ছিলেন তিনি। পুতিনের দাবি, ইউক্রেন ন্যাটো জোটে যোগ দিলে হুমকির মুখে পড়বে রাশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার হুমকিতে কান না দিয়ে ন্যাটো যোগ দেওয়ার আবেদন করে ফেলেন। ব্যস, এতে চটেন পুতিন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রুশ বাহিনী। এই হামলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সূত্রপাত করে। লাখ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়। 

আরো পড়ুন:

প্রথম দিকে ইউক্রেনের বিশাল অংশ দখল করে ফেলে রুশ সেনারা। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মাথায় রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্ব। ফলে রাশিয়া থেকে গমসহ অন্যান্য প্রয়োজনী দ্রব্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাসের মাথায় ইউরোপের অতিপ্রয়োজনী বস্তু গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেয় রাশিয়া। যুদ্ধের জন্য নিরাপত্তার অভাব থাকায় ইউক্রেনও বন্ধ করে দেয় খাদ্য শস্য রপ্তানি। এতে বিশ্ব খাদ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়। আবার যুদ্ধের কারণে তেলের দামও চড়তে শুরু করে। এর ফলে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে একদিকে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কট দেখা দেয়, আরেকদিকে শুরু হয় মুদ্রাস্ফীতি।

যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোট ইউক্রেনকে বিপুল সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতে শুরু করে। ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় পিছু হটতে শুরু করে রুশ বাহিনী। প্রথম দিকে যেসব অঞ্চল দখল করেছিল রুশ বাহিনী, পাল্টা হামলায় সেসব জায়গা হাতছাড়া হতে থাকে তাদের। এপ্রিলে কিয়েভের আশেপাশের এলাকা থেকে সরতে শুরু করে রুশ সেনারা। সেপ্টেম্বরে শক্তিশালী আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহরগুলো থেকে পিছু হটে রুশ বাহিনী। অবশ্য ডিসেম্বরের শুরুতেই হামলা জোরদার করে রাশিয়া। পুতিন সাফ জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার দাবি মানতে হবে, নতুবা তাদের পরাজয়ের স্বাদ নিতে হবে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে করোনার শুরু হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে পরের বছরের শুরুতেই শূন্য কোভিড নীতি ঘোষণা করে বেইজিং। এই নীতির আওতায়, কোনো এলাকার একটি বাড়িতেও সংক্রমণ শনাক্ত হলে পুরো এলাকায় কঠোর লকডাউন আরোপিত হতো। গত দুই বছর চীনের বাসিন্দাদের এই বিধিনিষেধের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে রাস্তায় নামে মানুষ। প্রবল বিক্ষোভের মুখে ৭ ডিসেম্বর শূন্য কোভিড নীতি প্রত্যাহার করে নেয় চীন সরকার। এরপর থেকেই দেশটিতে হু হু করে বাড়তে শুরু করে করোনার সংক্রমণ।

চীনের পরিস্থিতি যেদিক যাচ্ছে তাতে জানুয়ারিতেই দেশটিতে কোভিডে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ হাজার স্পর্শ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞরা। এমনকি এক বছরের মধ্যে এই মৃতের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর কোভিড ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং সম্ভবত দিনে ১০ লাখের বেশি মানুষকে সংক্রামিত করছে। তবে চীন দৈনিক আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। 

চীনে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের সাব-ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে চীন থেকে আসা যাত্রীদের ওপর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ২০২১ সালে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বহু দেশে ছড়িয়েছিল করোনাভাইরাস। চীনা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বে পুনরায় সঙ্কট সৃষ্টি করে কিনা তা হয়তো জানা যাবে আগামী বছরের শুরুতেই।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়