আমরা গ্রিনল্যান্ড পেতে যাচ্ছি: ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

আবারো গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ব্যাপারে নিজের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষায়িত উড়োজাহাজ ‘এয়ার ফোর্স ওয়ানে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র স্বায়ত্তশাসিত ড্যানিশ অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ বুঝে পাবে। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি আমরা এটি পেতে যাচ্ছি এবং দ্বীপটির ৫৭ হাজার বাসিন্দা আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়।”
ট্রাম্প এমন সময় এই মন্তব্য করলেন যার কয়েক ঘণ্টা আগেই ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট্টে ফ্রেডেরিকসেন ট্রাম্পকে ফোনে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রয়ের জন্য নয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প আরো বলেন, “আমি মনে করি মানুষ (গ্রিনল্যান্ডবাসী) আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়। আমি জানি না ডেনমার্কের কী দাবি আছে, কিন্তু যদি তারা এটি হতে না দেয় তবে এটি একটি খুব অ-বন্ধুত্বসুলভ কাজ হবে। কারণ এটি (গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করা) বিশ্বের সুরক্ষার জন্য মুক্ত করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমি মনে করি গ্রিনল্যান্ড আমরা পাব। কেবল আমরাই স্বাধীনতা দিতে পারি, তারা (ডেনমার্ক) তা পারে না।”
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব করেছিলেন এবং তখন থেকেই তিনি এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ‘একটি আবশ্যকতা’ বলে মনে করেন।
তবে গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী উভয়েই আগেই বলেছেন, দ্বীপটি বিক্রয়ের জন্য নয়।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেডে বলেছেন, এই অঞ্চলের ভূমির ব্যবহার গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও খনিজ সম্পদ নিয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেনও বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ডবাসীদেরই এবং শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে ৪৫ মিনিটের উত্তপ্ত ফোনালাপে ফ্রেডেরিকসেন তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সংবাদমাধ্যমটি অজ্ঞান একজন ইউরোপীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ট্রাম্প-ফ্রেডেরিকসনের মধ্যে ‘কঠিন’ কথোপকথন হয়েছে। অন্য একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ব্যাপারে ট্রাম্পের আগ্রহ ‘গুরুতর এবং সম্ভাব্যভাবে খুব বিপজ্জনক’।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, দ্বীপটি বিক্রির জন্য নয়। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রহ বড়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত রুটের মাঝে অবস্থিত, যা এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এছাড়া এখানে একটি বড় মার্কিন মহাকাশ কেন্দ্র রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিরল খনিজ, ইউরেনিয়াম এবং লোহা।
দ্বীপটি যদিও স্বায়ত্বশাসিত, কিন্তু এটি ডেনমার্কের অংশ। তবে গ্রিনল্যান্ডে একটি সাধারণ ঐক্যমত্য রয়েছে যে, দ্বীপটি একসময় স্বাধীন হয়ে উঠবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন ধরনের সম্পর্কের পথ তৈরি করতে পারে।
তবে ‘গ্রিনল্যান্ডের মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকতে চায়’ বলে ট্রাম্প যে দাবি করেছেন, তা দ্বীপটির অনেক বাসিন্দাকে অবাক করেছে।
কাপিসিলিট এলাকার একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণের জন্য ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে পারি কিন্তু ‘গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীদের’।
স্থানীয় গির্জার প্রধান কালিরাক রিঙ্গস্টেড বলেছেন, ট্রাম্পের ভাষা ‘গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়’।
চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড দখলে সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ