গাজা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে লিবিয়ায় স্থানান্তরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
শনিবার (১৭ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অবগত পাঁচজনের বরাতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনাটি এতটাই অগ্রাধিকার পেয়েছে যে মার্কিন সরকার ইতিমধ্যে লিবিয়ার নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছে।
পরিকল্পনাটির বিষয়ে সরাসরি অবগত দুজন ব্যক্তি এবং একজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এনবিসি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিনিময়ে বিনিময়ে লিবিয়াকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা কোটি কোটি ডলারের তহবিল ছেড়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এখনো চূড়ান্ত কোনো চুক্তি হয়নি এবং আলোচনার আপডেট ইসরায়েলকে জানানো হয়েছে।
এনবিসি নিউজ বলছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার আগে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ মন্তব্যের জন্য একাধিক অনুরোধের জবাব দেয়নি। প্রকাশের পর, একজন মুখপাত্র এনবিসি নিউজকে বলেন, “এই প্রতিবেদন অসত্য।”
মুখপাত্র বলেন, “মাঠের পরিস্থিতি এমন পরিকল্পনার পক্ষে অগ্রহণযোগ্য। এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি এবং এর কোনো অর্থ হয় না।”
হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো আলোচনা সম্পর্কে তারা অবগত নয়।
এনবিসি নিউজকে নাইম বলেন, “ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমিতে খুব প্রোথিত, স্বদেশের প্রতি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে এবং তাদের ভূমি, তাদের মাতৃভূমি, তাদের পরিবার ও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।”
নাইম আরো বলেন, “(ফিলিস্তিনিরা) একমাত্র পক্ষ যাদের গাজা ও গাজার বাসিন্দাদের জন্য কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয় তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে।”
ইসরায়েলি সরকারের প্রতিনিধিরা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর গত ১৪ বছর ধরে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। পশ্চিমে আব্দুল হামিদ দ্বেইবেহ ও পূর্বে খলিফা হাফতারের নেতৃত্বে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার সক্রিয় এবং আধিপত্যের জন্য লড়াই করছে। যার ফলে লিবিয়ার বর্তমান জনসংখ্যার জীবনযাপন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
লিবিয়ায় ‘অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, অবিস্ফোরিত ল্যান্ডমাইন, নাগরিক অস্থিরতা, অপহরণ ও সশস্ত্র সংঘাতের কারণে’ মার্কিন নাগরিকদের দেশটিতে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর।
গাজার কতজন ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছায় লিবিয়ায় যেতে রাজি হবেন- তা সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত প্রশ্ন। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা যে ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন তা হলো- ফিলিস্তিনিদের বিনামূল্যে আবাসন এবং এমনকি একটি উপবৃত্তির মতো আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা।
এনবিসি নিউজ বলছে, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা কখন বা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তার বিস্তারিত তথ্য অস্পষ্ট এবং সেখানে ১০ লাখ মানুষকে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা সম্ভবত উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হবে।
এই ধরনের প্রচেষ্টা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে এবং ট্রাম্প প্রশাসন এর জন্য কীভাবে অর্থ প্রদান করবে তা স্পষ্ট নয়। অতীতে, মার্কিন প্রশাসন বলেছে, আরব দেশগুলো যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে গাজা পুনর্নির্মাণে সহায়তা করবে, তবে তারা ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের ট্রাম্পের ধারণার সমালোচনা করেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ট্রাম্প প্রশাসন লিবিয়াকে এমন একটি জায়গা হিসাবেও দেখেছে যেখানে তারা কিছু অভিবাসীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করতে চায়। তবে, এই মাসে একজন ফেডারেল বিচারক অভিবাসীদের একটি দলকে লিবিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করে দেন।
১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তরিত করা বিপর্যস্ত দেশটির ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার মতে, লিবিয়ায় ফিলিস্তিনিদের কোথায় পুনর্বাসিত করা হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
পরিকল্পনাটির বিষয়ে সরাসরি অবগত একজন ব্যক্তি বলেছেন, “মার্কিন কর্মকর্তারা লিবিয়ায় ফিস্তিনিদের আবাসনের বিকল্পগুলো খুঁজছেন এবং গাজা থেকে লিবিয়ায় তাদের পরিবহনের জন্য সম্ভাব্য প্রতিটি পদ্ধতি বিবেচনা করা হচ্ছে- আকাশপথে, স্থলপথে এবং সমুদ্রপথে।”
ঢাকা/ফিরোজ