ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আলজাজিরার অনুসন্ধান: ‘হাসিনা– জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ সম্প্রচার আজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২৪ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ২১:৫৮, ২৪ জুলাই ২০২৫
আলজাজিরার অনুসন্ধান: ‘হাসিনা– জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ সম্প্রচার আজ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটো

‘হাসিনা–জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ শিরোনামে একটি টেলিভিশন প্রতিবেদন তৈরি করেছে আলজাজিরা। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ কয়েকদিনে কীভাবে পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছিলেন সেই বিষয়ে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কৃতকর্মের বিষয়টি উঠে এসেছে।

‘হাসিনা– জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ প্রতিবেদনটি গ্রিনিচ মান সময় বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১২টায় অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় সম্প্রচার করার ঘোষণা দিয়েছে আলজাজিরা। এর ওপর একটি অনলাইন প্রতিবেদন এক দিন আগে মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে নিউজ নেটওয়ার্কটি।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার যে অভিযোগ রয়েছে এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অনুমোদন দেওয়ার বিষয়েও যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে আলজাজিরার অনুসন্ধানী বিভাগ ‘আই-ইউনিট’। 

আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পতনের আগ মুহূর্তে এক নির্মম, অমানবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন শাসকের চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে ছাত্রদের রক্তে ভেসেছে রাজপথ, থমকে গেছে ইন্টারনেট, আর ভয়ের ছায়া গ্রাস করেছে পুরো জাতিকে।

আলজাজিরার ‘আই-ইউনিট’ গোপনে রেকর্ড করা ফোনালাপ প্রকাশ করেছে; যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আলজাজিরা লিখেছে, তিন সপ্তাহব্যাপী রক্তাক্ত এই বিক্ষোভে দেড় হাজার মানুষ নিহত ও ২৫ হাজারের বেশি আহত হন। শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী তিন মিলিয়নের বেশি গুলি চালায়।

শেখ হাসিনার গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের একটি রেকর্ডিংয়ের কথা বলেছে আলজাজিরা। শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলেন, “আমার নির্দেশ তো দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো খোলামেলাই নির্দেশ দিয়েছি। এখন ওরা ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করবে, যেখানে ওদের (আন্দোলনকারী) পাবে, সেখানেই গুলি করবে... এই তো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; এতদিন তো আমি ওদের থামিয়ে রেখেছিলাম… আমি তো চিন্তা করছিলাম ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে।”

রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠ অনুযায়ী আলজাজিরা লিখেছে, শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিলেন।

“....যেখানেই লোক দেখা যাচ্ছে,  ওরা ওপর থেকে করছে—এখন ওপরে থেকেই করছে— কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে।”

আলজাজিরা লিখেছে, এক চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন যে, অনেক শিক্ষার্থী হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত ও আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে আওয়ামী লীগের হুমকি ও ঘুষের বিষয়। এই হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল।

আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনার অন্যতম প্রভাবশালী সহযোগী সালমান এফ রহমান শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন। 

আলজাজিরা লিখেছে, সেই রিপোর্ট পাঁচবার পরিবর্তন করা হয়েছিল, যাতে গুলির কথা মুছে ফেলা যায়। এছাড়া, আবু সাঈদের পরিবারকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

আলজাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিটের খুঁজে পাওয়া গোপন নথিপত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার কীভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে রক্তাক্ত ঘটনার ছবি বিশ্ব থেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছিল।

আলজাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা কখনও ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করেননি এবং তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘লেথাল উইপেন’ ব্যবহার করে বল প্রয়োগের নির্দেশ দেননি। বিবৃতিতে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের রেকর্ডিংয়ের সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, আবু সাঈদের পরিবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে থাকলে তাতে তারা দুঃখিত। তবে এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সবার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দুর্ব্যবহার তদন্তে আন্তরিকতা ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিশ্বাস ছিল ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছিল বিক্ষোভকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে।

ঢাকা/ইভা/রাসেল   

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়