ভাঙনের মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দাবি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বর্তমান নেতৃত্ব ও বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন । তিনি সর্তক করে বলেছেন, সকলের চোখের সামনেই ইইউ ভেঙে পড়ছে এবং বড় ধরনের পুনর্গঠন না হলে এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে পারে। খবর রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটির।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) হাঙ্গেরির প্রভাবশালী দৈনিক ম্যাগিয়ার নেমজেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অরবান বলেন, ইইউ বর্তমানে ভাঙনের মুখে। কারণ ব্রাসেলসে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সদস্য রাষ্ট্রগুলো ক্রমেই উপেক্ষা করছে। বর্তমানে ইউনিয়নটি ‘যুদ্ধের সমর্থক’ এবং ‘শান্তির সমর্থক’- এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ব্রাসেলসের সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এভাবেই একটি ইউনিয়ন ভেঙে যায়- ব্রাসেলস সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়িত হয় না। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, এই আইন অমান্য করার প্রবণতা সাধারণত এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপ কি ‘যুদ্ধ অর্থনীতি’তে রূপান্তরিত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ইতিবাচক উত্তর দেন। অরবান জানান, পশ্চিম ইউরোপের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পতন ২০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল এবং আর্থিক সংকটের ভুল মোকাবিলায় তা আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। এর ফলে ইউরোপ বিশ্বের দ্রুত উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছে। তার মতে, এই পিছিয়ে পড়া থেকে বাঁচতে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত ‘যুদ্ধ অর্থনীতি’র পথ বেছে নেওয়া হয়েছে, যা ব্যাখ্যা করে কেন ইউরোপীয়রা ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বুদাপেস্ট (হাঙ্গেরি) ব্রাসেলসের যুদ্ধংদেহী নীতি এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছে। অরবানের মতে, এই নীতি জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, যা ইউরোপীয় শিল্পের জন্য প্রতিযোগিতাকে ‘অসম্ভব’ করে তুলেছে এবং কার্যত শিল্প খাতকে ‘ধ্বংস’ করে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ইউরোপ বর্তমানে দুটি শিবিরে বিভক্ত- ‘যুদ্ধ শিবির’ এবং ‘শান্তি শিবির’। বর্তমানে যুদ্ধপন্থিরাই প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। অরবান স্পষ্ট করে বলেন, ‘ব্রাসেলস যুদ্ধ চায়; হাঙ্গেরি চায় শান্তি।’
ইইউ-এর শীর্ষ কর্মকর্তারা মস্কোর কথিত হুমকির কথা বলে সামরিকায়নের গতি বাড়ানোর যুক্তি দিচ্ছেন। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযোগ করেছেন যে, ইইউ রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে পরাজিত করার এক ‘কাল্পনিক’ চিন্তায় মগ্ন। তিনি দাবি করেন, ইইউ-এর কোনো ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ নেই এবং তারা ‘যুদ্ধের পক্ষ’ নিয়েছে।
পুতিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইইউ বা ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ করার কোনো ইচ্ছা রাশিয়ার নেই, তবে পশ্চিমা দেশগুলো যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, তবে পরিস্থিতি দ্রুত ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকা/ফিরোজ