তাইওয়ানের চারপাশে চীনের বড় ধরনের সামরিক মহড়া
তাইওয়ান ঘিরে বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) চীনের সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছে যে, তারা তাইওয়ানের চারপাশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং রকেট ফোর্সকে মোতায়েন করেছে। খবর বিবিসির।
‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই মহড়াটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে ১১ বিলিয়ন ডলারের ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। বেইজিং এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তাইওয়ান এ বছর তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতেও ক্ষুব্ধ হয়েছে বেইজিং। চীন এই স্বশাসিত দ্বীপটিকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় চীনের এই মহড়ার সমালোচনা করে একে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির প্রতি এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে তারা তাইওয়ানের আশেপাশে চীনা বিমান ও জাহাজ শনাক্ত করেছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য নিজস্ব বাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, তাইওয়ানকে রক্ষা করতে এবং ‘জনগণকে সুরক্ষা দিতে’ তাদের বাহিনী ‘উচ্চ সতর্কাবস্থায়’ রয়েছে।
চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে এক পোস্টে এই সামরিক মহড়াকে ‘ন্যায়বিচারের ঢাল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। পোস্টটিতে বলা হয়, ‘যারা স্বাধীনতার ষড়যন্ত্র করছে, তারা এই ঢালের মুখে পড়লে নির্মূল হয়ে যাবে!’
প্রাথমিক মহড়া ইতিমধ্যে শুরু হলেও, চীনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বড় ধরনের মহড়া চালাবে।
চীন দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’-এর কথা বললেও, তাদের ‘বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী আইন’ রয়েছে, যা ২০০৫ সালে পাস হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী তাইওয়ান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বা ‘বিচ্ছিন্ন’ হওয়ার কোনো কাজ করে, তাহলে চীন সামরিক শক্তি প্রয়োগসহ ‘অ-শান্তিপূর্ণ উপায়’ অবলম্বন করতে পারবে বলে উল্লেখ আছে।
বেইজিং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং তের বিরুদ্ধে ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ ঘোষণার করার পায়তারা করার অভিযোগ এনেছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট লাই-এর অবস্থান হলো, তাইওয়ান ইতিমধ্যে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং তাই নতুন করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করার কোনো প্রয়োজন নেই।
গত রবিবার একটি স্থানীয় টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে লাই বলেন, “তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এমন স্তরে নিয়ে যেতে হবে যাতে (চীন) কখনোই আক্রমণের সাহস না পায়।”
তিনি আরো বলেন, তার প্রশাসন ‘স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং চীনকে উসকানি দেবে না। তবে তিনি যোগ করেন, শান্তি নির্ভর করে ‘প্রকৃত শক্তির’ ওপর।
বিভিন্ন জনমত জরিপ অনুসারে, তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ ‘স্থিতাবস্থা’ চায়। অর্থাৎ তারা চীনের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না, আবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণাও করতে চায় না।
বেইজিং ২০২২ সাল থেকে তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক মহড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালে মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর এবং ২০২৪ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লাই-এর নির্বাচিত হওয়ার মতো ঘটনাগুলোকে হুমকি হিসেবে গণ্য করে তারা এই প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এর আগে গত এপ্রিলে, তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের সর্বশেষ সামরিক মহড়ায় প্রধান বন্দর এবং জ্বালানি স্থাপনায় হামলার অনুকরণ করা হয়েছিল। সেই মহড়ার পাশাপাশি চীনা সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্ট লাই-কে ‘পরজীবী’ হিসেবে চিত্রিত করে বেশ কিছু কার্টুন প্রকাশ করেছিল।
এই সপ্তাহের চীনের সামরিক মহড়াটি ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের নতুন প্রধান ইয়াং ঝিবিন-এর অধীনে প্রথম মহড়া, যিনি গত অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
তাইওয়ানও তার জনগণকে সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত করতে এবং বেইজিংয়ের কাছে নিজের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রদর্শন করতে সামরিক মহড়া পরিচালনা করে থাকে। এ বছরের ‘হান কুয়াং’ মহড়াটি ছিল ১০ দিনব্যাপী, যা ছিল এ পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম মহড়া।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে লাই প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মুখে দ্বীপটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ