ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মর্গে ধর্ষণ: যা বললেন মুন্নার মামা

সাইফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ২১ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:৩৫, ২১ নভেম্বর ২০২০
মর্গে ধর্ষণ: যা বললেন মুন্নার মামা

মুন্না ভগৎ

মুন্না ভগৎ। বয়স মাত্র ২০ বছর। মামার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করতো সে। কিন্তু জঘন্যতম একটি অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হতো, সেসব লাশের মধ্য থেকে মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো সে।

মুন্না ভগৎ ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে মামা ডোম যতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। গ্রেপ্তারের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মামা ডোম যতন কুমার লাল রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি লজ্জিত। এরকম কাজ করবে তা ভাবতেও পারিনি। ওর মধ্যে আমি এই চার বছরে এরকম বিন্দুমাত্র সিমটম পাইনি।  আমার পুরো জীবনটাই শেষ করে দিয়ে গেলো। 

যতন কুমার বলেন, একটা মানুষের ক্ষেত্রে এই কাজ করা সম্ভব না।  লাশ ধরা থেকে শুরু করে কাটাছিরা করতে সহযোগীর প্রয়োজন হয়।  সেক্ষেত্রে আমরা আত্মীয়-স্বজন নিয়েই কাজ করি।

তিনি বলেন, আমি অনেক সময় জরুরি কাজে বাড়ি যাই।  এক্ষেত্রে মরদেহ রিসিভ করে আমার যেতে হয়। তারপর সকালে গিয়ে কাজ শুরু করি।  আমি কখনো মর্গে ঘুমাই না।  মর্গে থাকতো আমার ভাগ্নে।  কিন্তু এরকম একটা জঘন্যতম কাজ করবে এটা ভাবিনি। 

মুন্না আপনার সহযোগী হলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একদিন ও (মুন্না) আমার সঙ্গে মর্গে আসে।  একটা লাশ ধরতে বললে ও আগ্রহ প্রকাশ করে।  তারপর থেকে নিজের হাতে কাজ শিখিয়ে সহযোগী হিসেবে রেখে দিই।  এই কাজ আমাদের পরিবারের পূর্বপুরুষদের থেকে শুরু করে এভাবে চলতে থাকে। 

মুন্নার এরকম ঘটনায় পরিবারের ওপর প্রভাব আসছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডোম যতন কুমার লাল বলেন, ওর মা-বাবার দিক থেকে আমার অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। হাসপাতালের স্টাফদের কাছে থেকে কথা শুনতে হচ্ছে। আমি সবাইকে বলি আমার ভাগ্নে। আমার কাছে থাকতো আমার সঙ্গে কাজ করতো সত্য কথা। কিন্তু এরকম কাজ করবে তা কল্পনাও করিনি।

মুন্নার কোনো মানসিক সমস্যা বা রোগ ছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওর মধ্যে কোনো মানসিক সমস্যা আমার চোখে পড়েনি। তবে কিছুটা নেশা করতো। অনেকটা সময় আমার সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু এরকম কোনো ঘটনা আমার কখনো চোখে পড়েনি। 

এটা কোনো মানসিক সমস্যা কিনা-এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, এর পেছনে অবশ্যই একটা লম্বা ইতিহাস রয়েছে।  যৌনতার একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে। এর বাইরে বিকৃত আনন্দ পাওয়ার জন্য অনেক বিষয় কাজ করে। একে বলে প্যারাফিলিয়া। তবে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা না বলে ও তার ইতিহাস না জেনে বলা যাচ্ছে না যে, প্যারাফিলিয়া কি না।

সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া মুন্না ভগত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ডোম জতন কুমার লালের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। দুই-তিন বছর ধরে সে মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। সম্প্রতি এরকম একটি অভিযোগ পেয়ে মুন্নার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না মৃত নারীদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সাইফুল/সাইফ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়