ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অভিনব কৌশলে এটিএম বুথের টাকা চুরি, গ্রেপ্তার ৮

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ৬ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৫:০৬, ৬ মার্চ ২০২২

অভিনব কৌশলে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। চক্রের মূল হোতা আব্দুর রহমান বিশ্বাসসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

রোববার (৬ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শনিবার (৫ মার্চ) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।  এ সময় আব্দুর রহমান বিশ্বাস, মো. তারেক আজিজ, তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান, মো. রবিউল হাসান, হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস, মো. কামরুল হাসান, মো. সুজন মিয়া এবং মো. আব্দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।  উদ্ধার করা হয় ২টি চেকবই, ১টি এটিএম কার্ড, ৪টি আইডিকার্ড, ১টি স্বর্ণের নেকলেস, ১ জোড়া বালা, ১ জোড়া কানের দোল, ১টি আংটি এবং নগদ ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা।  গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা গত ২/৩ বছর একসাথে চাকরি করার সুবাদে পারস্পরিকভাবে পরিচিত হয়। এক পর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে। গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রহমান সিন্ডিকেটের মূলহোতা।  সে তার এক সহকর্মী থেকে বিষয়টি রপ্ত করে বলে জানায়।  গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্যরা তাদের সহযোগী; যারা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব পালন করে থাকে। গ্রেপ্তারকৃতরা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা স্থাপন ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিল। তারা ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করে থাকে। ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে।

র‌্যাব জানায়, যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে থাকে। এছাড়া টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরি সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত থাকত। গ্রেপ্তারকৃতরা লোডিং ট্রে তে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১০০০ টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত। কোন ক্লাইন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবীনে জমা হতো। পরবর্তীতে সেই টাকা তারা সরিয়ে নিতো। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলো আত্মসাৎ করত। আব্দুর রহমান এই চক্রের মূলহোতা। সে বিগত ৩/৪ বছর আগে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে চাকরি নেয়। তার দায়িত্বপূর্ণ এলাকা মিরপুর, কালশি, বেনারশি, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। সে প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। আব্দুর রহমান, সোহাগ পাঠান, হাবিব ও কামরুল এটিএম বুথে লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্স এর কাজ করে। গ্রেপ্তারকৃত কাদের, সুজন, রবিউল ও তারেক আজিজ এটিএম বুথে শুধু লোডিংয়ের কাজ করে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে।

র‌্যাব জানায়, একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম এটিএম বুথের ব্যবহার শুরু করে।  পরবর্তীতে প্রায় সব ব্যাংকে এর প্রচলন ঘটে।  কিন্তু এটিএম বুথ ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু অভিযোগ আলোচনায় আসে। বিগত সময়ে র‌্যাব এটিএম বুথে ডাকাতি, হত্যা ও অবৈধভাবে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ঘটনায় দেশি বিদেশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।  বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের ব্যবস্থাপনা থার্ড পার্টি বা আউট সোর্র্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। থার্ড পার্টি টাকা স্থাপন, নিরাপত্তা, কারিগরি ত্রুটি ইত্যাদি বিষয়টি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে।  সম্প্রতি  একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়।  ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি পরিবর্তন করে। তথাপি অনিয়ম ও গড়মিল পরিলক্ষিত হতে থাকে।  বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে আস্থার স্থল হিসেবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি বিষয়টি নিয়ে র‌্যাবের শরণাপন্ন হয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু  করে।  ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে র‌্যাব উদঘাটন করে যে, থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরি দলের কোন পরিবর্তন হয়নি। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব তদন্ত অব্যাহত রাখে।

গ্রেপ্তারকৃতরা বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাধিক এটিএম বুথ মেশিন থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সাথে জড়িত।

/মাকসুদ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়