ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জাপানি নাগরিক হত্যা: সাড়ে ৬ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২০ মে ২০২২   আপডেট: ১০:২৬, ২০ মে ২০২২
জাপানি নাগরিক হত্যা: সাড়ে ৬ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

জাপানি নাগরিক হিরোই মিয়াতা। ১৬ বছর আগে ২৬ জুন ৯০ দিনের ভিসায় ঢাকায় আসেন। পোশাক ব্যবসায়ীদের গাইড হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় ছিলেন।

ব্যবসার সুবাদে পরিচয় হয় ষ্টক লট ব্যবসায়ী জাকিরের সঙ্গে। জাপানি নাগরিক হওয়ার সুবাদে ব্যবসা বাণিজ্যে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে এমন লোভে হিরোই মিয়াতারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর জাকিরসহ কয়েকজন কৌশলে হিরোই মিয়াতাকে অপহরণ করে আটকে রাখে। পরে হত্যার অভিযোগ উঠে।

এদিকে, হিরোই মিয়াতার মা মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। বিষয়টি তিনি জাপান অ্যাম্বাসিকে জানায়। তারা ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ঘটনা উদঘাটন করে। হিরোই মিয়াতাকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ উত্তর পূর্ব থানায় মামলা করেন।

তবে হিরোই মিয়াতা হত্যার বিচার সাড়ে ৬ বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে তা বলছে পারছে সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা আশা করছেন, শিগগিরই মামলার বিচার শেষ হবে এবং আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে। আসামিপক্ষের দাবি, তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। এটা কোনো হত্যাকাণ্ড না।

মামলাটি ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুনের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওনদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ২৯ মে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

মামলা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের বক্তব্য:
মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন,‘পুলিশ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারছে না। এজন্য মামলার সাক্ষ্য শেষ হচ্ছে না। আদালত থেকে সাক্ষীদের প্রতি সমন পাঠানো হয়। পুলিশের দায়িত্ব সাক্ষীদের হাজির করা। কিন্তু তারা তা করছেন না। গাফিলতি করছেন। এমনকি নিজেরা সাক্ষী হলেও তারা সাক্ষ্য দিতে আসেন না। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রস্তুত রয়েছি সাক্ষ্য শেষ করার। সাক্ষীরা আদালতে হাজির হলে আশা করছি, মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে।’

মামলা সম্পর্কে আসামিপক্ষের এক আইনজীবী জায়েদুর রহমান বলেন,‘জাপানি ওই নাগরিক হিরোই মিয়াতা বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে। অথচ আসামিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে তারা হত্যা করেছে। আসলে এখানে হত্যাকাণ্ডের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

তিনি বলেন, ‘আসামিরা উপকার করতে গিয়ে উল্টো বিপদে পেছে। হিরোই মিয়াতার বৈধ পাসপোর্ট ছিল না। যখন তিনি মারা যান, তখন আসামিরা হতভম্ব হয়ে পড়েন কি করবেন। পরে এক আসামির দাদী পরিচয়ে তাকে দাফন করা হয়। আসলে এখানে কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। তার স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে। মামলার সাক্ষ্য চলছে। আশা করছি, আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর জাকিরসহ কয়েকজন কৌশলে হিরোই মিয়াতাকে অপহরণ করে আটকে রাখে। পরে হত্যার অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনায় উত্তরা-পূর্ব থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান হাওলাদার বাদী হয়ে ঘটনার প্রায় এক মাস পর ২২ নভেম্বর মামলা করেন। 

মামলাটি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর মিয়া ২০১৬ সালের ৩০ জুন ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এরা হলেন-এইচ এম জাকির হোসেন পাটোয়ারী ওরফে রতন, তার ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, মারুফুল ইসলাম, রাশিদুল ইসলাম বাপ্পি, ফখরুল ইসলাম ও ডা. বিমল চন্দ্র শীল। ওই বছরের ৩ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।

/মামুন/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়