ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১৯ বছর আত্মগোপনে ছিলেন সিরাজুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ২৩ জুন ২০২২  
১৯ বছর আত্মগোপনে ছিলেন সিরাজুল

সিরাজুল

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে জুলেখা (১৯) হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। সিরাজুল মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিভিন্ন পেশার আড়ালে ১৯ বছর আত্মগোপনে ছিলেন বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, বুধবার (২২ জুন) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার চর সৈয়দপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সিরাজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০২ সালের জুলাইয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার বাহের চর এলাকার সিরাজুলের সঙ্গে সিঙ্গাইর থানার উত্তর জামশা গ্রামের মো. আব্দুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে বেশকিছু নগদ অর্থ, গয়না এবং আসবাবপত্র বরপক্ষকে দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকে সিরাজুল জুলেখাকে আরও যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেন। টাকা না দিতে পারলে তালাকের ভয়-ভীতি দেখাতেন।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে জুলেখা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরিবার থেকে সিরাজুল যৌতুক না পাওয়ার পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে  সিরাজুল তার প্রতিবেশী মোশারফ নামে এক যুবকের সঙ্গে জুলেখার পরকীয়ার সম্পর্ক আছে মর্মে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তোলেন এবং আরও বেশি নির্যাতন করতে থাকেন। আসামির নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে জুলেখার বাবা ও ভাইসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে  সালিস  হয়।  জুলেখার কোনো দোষ না পেয়ে এবং পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সালিসে।

র‌্যাব জানায়, জুলেখাকে নির্যাতন না করার জন্য সতর্ক করা হয়।  ঘটনার পর  সিরাজুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং মনে মনে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সিরাজুল জুলেখাকে নিয়ে শশুর বাড়ি সিঙ্গাইরের উত্তর জামশা গ্রামে যান। পরেরদিন সিরাজুল জুলেখাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মানিকগঞ্জ শহরে নিয়ে যান এবং বিভিন্ন অজুহাতে ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করে গভীর রাতে শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ শহর থেকে রওনা হয়। মানিকগঞ্জ শহর থেকে  সিরাজুল জুলেখাকে নিয়ে শশুর বাড়ি না নিয়ে কৌশলে তার শ্বশুর বাড়ির নিকটবর্তী কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যান।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি তার ব্যাগে থাকা গামছা বের করে জুলেখার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। জুলেখার নিহত হওয়ার পাশাপাশি তার ৮ মাসের গর্ভের সন্তানও হত্যার শিকার হয়। পরবর্তীতে ৭ ডিসেম্বর থানা পুলিশ জুলেখার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। জুলেখার বাবা আব্দুল জলিল বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় সিরাজুলসহ তার বড় ভাই রফিকুল, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল, চাচা ফাইজুদ্দিন ও তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে  হত্যা মামলা করেন। আদালত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত সাক্ষ্য ও উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে জুলেখাকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ২০০৫ সালের শেষের দিকে চার্জশিটে অভিযুক্ত সিরাজুলকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন এবং অপর ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।

২০০৫ সালে সিরাজুল পুনরায় বিয়ে করেন।  গ্রেপ্তারের মুহূর্তে সিরাজুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার চর সৈয়দপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তবে জুলেখাকে হত্যার পর থেকে আসামি আর কোনদিন মানিকগঞ্জে যাননি। হত্যার ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য সিরাজুল কখনো শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতো। এক জায়গায় সে বেশিদিন অবস্থান করতো না। তাছাড়াও পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে সে প্রতিনিয়ত পেশা পরিবর্তন করত। সে বিভিন্ন সময় রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, সবজি বিক্রেতা, কুলি, রাজমিস্ত্রি, ট্রাকচালক এবং পরিবহন অফিসের দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

/মাকসুদ/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়