ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সানিকে হারিয়ে এখনো কাঁদছেন মা-ভাই

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০১, ৯ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ১১:৩৭, ৯ অক্টোবর ২০২২
সানিকে হারিয়ে এখনো কাঁদছেন মা-ভাই

তারিকুজ্জামান সানি

বুয়েট থেকে পাশ করার পর তারিকুজ্জামান সানির ইচ্ছে ছিল উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার। পরিবারও চেয়েছিল। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে পদ্মায় ঘুরতে গিয়ে সেই স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায়। সানির লাশ উদ্ধার হলেও মেধাবী সন্তানকে হারিয়ে এখনো কাঁদছেন মা ও ভাই। 

সানিকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন জানা যায়নি তিন মাসেও। আসামিপক্ষের স্বজনরা বলছেন, এটা হত্যা নয়, দুর্ঘটনা। পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা।

গত ১৪ জুলাই বিকেলে ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন মৈনট ঘাটে ১৫ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানি। ১৫ জুলাই সকাল ১১টা ২৬ মিনিটে মৈনট ঘাট থেকে সানির লাশ উদ্ধার করা হয়। 

আরো পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থী সানির মৃত্যু: প্রতিবেদন ২৫ অক্টোবর

ঘটনার পরদিন সানির ভাই হাসানুজ্জামান দোহার থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে আসামিদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। বর্তমানে আসামিরা কারাগারে আছেন। এদিকে মামলাটির তদন্ত চলছে। সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন পুলিশ প্রতিবেন দাখিল করতে পারেনি। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ চৌধুরী আগামী ২৫ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

সানির ভাই হাসানুজ্জামান বলেন, ‘সুখের সংসার ছিলো আমাদের। দুই বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। সেই শোক কাটতে না কাটতে ভাইটাও চলে গেলো। ভাইকে হারিয়ে জীবন কেমনে চলছে এটা বর্ণনা করা সম্ভব না। আমাদের সবার আশা-ভরসা ছিল ওকে নিয়ে। দেশের সম্পদ ছিল সে। মেধাবী ভাইটাকে হারিয়ে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। মা এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। কান্নাকাটি করেন। আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।’ 

আরো পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু: ১৫ বন্ধু তিন দিনের রিমান্ডে

তিনি আরও বলেন, ‘বুয়েট থেকে পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য ওকে জার্মানি পাঠানোর প্রস্তুতি ছিল। সানিরও ইচ্ছে ছিল তাই। পড়াশোনার প্রজেক্টের কাজে ওকে বাইরে যেত হতো। এজন্য বাইকও কিনে দিয়েছিলাম।’

হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনার দুই মাস আগে বাড়িওয়ালার ছেলে শাকিলের সঙ্গে সানির পরিচয় হয়। এরপর ১৪ জুলাই তারা আটটি বাইকে ১৬ জন ঘুরতে যান। তারা সবাই ঢাকায় থাকতো। সবার সঙ্গে কিন্তু সানির পরিচয় ছিলো না। ও ২/৩ জনকে চিনতো। দুপুর আড়াইটার দিকে হাজারীবাগের বাসা থেকে বের হয় সানি। আমাকে বা মাকে বলে যায়নি। ঘটনা ঘটে বিকেলে। কিন্তু আমরা খবর পাই রাত ১০ টার দিকে।’

তিনি বলেন, সানির মৃত্যুর বিষয়টা সন্দেহজনক। কয়েকজন বলেছে সানিকে খেয়াল করেনি। আবার কয়েকজন বলছে, সানি পড়ে গেলে তাকে তারা সাহায্য করতে যান। ১৫ জনের ৩০ টা হাত। কিন্তু ¯্রােতের কারণে ওকে ধরতে পারেনি। যদি এত ¯্রােতই থাকতো তাহলে তো সানির লাশ মৈনট ঘাটের পাশে ড্রেজারের পাশ থেকে উদ্ধার করা যেত না। লাশ পাওয়া যেত চাঁদপুর থেকে। তখন এই প্রশ্ন মনে জাগে, এটা ঘটনা না দুর্ঘটনা। তা জানতে মামলা করি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মামলাটি তদন্ত করছে। তারা যথেষ্ট চেষ্টা করছে। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে। আমাদের আশা, দোষীরা সাজা পাক। নির্দোষরা যেন মুক্তি পায়। কারণ তারাও কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কারো না কারো ভাই। যার যাই সে বুঝে স্বজন হারানোর বেদনা। তবে আমাদের প্রত্যাশা দোষীরা যেন সাজা পাই।’ 

আরো পড়ুন: ‘সানিকে ধাক্কা মেরে নদীতে ফেলে হত্যা করে বন্ধুরা’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুতুবপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তভার গ্রহণ করি। এরপর আসামিদের রিমান্ড আবেদন করি। বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। মামলার তদন্ত চলছে।’ 

এটা হত্যা না দুর্ঘটনা জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে এটা হত্যা না দুর্ঘটনা। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনা উদঘাটন করে আমরা বিষয়টি সবাইকে জানাবো।’

আসামির নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আত্মীয় আকাশ বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে ঘুরতে যায়। ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনাটা ঘটে গেছে। মাঝে মধ্যে আমরাও ঘুরতে যাই। দুর্ঘটনাবশত ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমাদের ধারণা তাকে (সানি) হত্যা করা হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই বিকেলে ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন মৈনট ঘাটে ১৫ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানি। বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম সেশনের ছাত্র সানির বাবার নাম হারুন অর রশিদ। বাড়ি রাজধানীর হাজারীবাগে।

নিখোঁজ হওয়ার পর সানির সন্ধানে নামে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে ডুবুরি দল। ওইদিন রাতে রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ১৫ জুলাই বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে মৈনট ঘাট থেকে ওই বুয়েট শিক্ষার্থী মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ১৫ জুলাই বিকেলে সানির বড় ভাই হাসাদুজ্জামান একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় সানির সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া অন্য ১৫ বন্ধুকে। মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে আছেন।

আসামিরা হলেন-শরীফুল হোসেন, শাকিল আহম্মেদ, সেজান আহম্মেদ, রুবেল, সজীব, নুরজামান, নাসির, মারুফ, আশরাফুল আলম, জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন, নোমান, জাহিদ, এটিএম শাহরিয়ার মোমিন, মারুফুল হক মারুফ ও রোকনুজ্জামান ওরফে জিতু।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়