ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১২:৩৮, ২ জুলাই ২০২৫
হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি

ফাইল ফটো

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এই হামলায় ২০ জন জিম্মি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বিদেশী নাগরিক। এছাড়াও নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক নাড়া দেয়। ইতোমধ্যে বিচারিক আদালতে মামলার সাত আসামিকে বিচার সম্পন্ন হয়ে মৃত্যুদণ্ড রায় দেওয়া হয়েছে। তবে আসামিদের আপিলে উচ্চ আদালতে বিচারের অপেক্ষায় আছে মামলাটি।

আরো পড়ুন:

ঘটনার দিন রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকার গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর প্লটে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গি প্রবেশ করে। তারা সেখানে থাকা দেশি-বিদেশি লোকজনকে জিম্মি করে এবং নির্বিচারে গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালায়। নব্য জেএমবির এই জঙ্গিরা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল এবং আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছিল।

তারা বেকারির ভেতরে প্রবেশ করেই এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে এবং বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। হামলাকারীরা ছিল নব্য জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ)-এর সদস্য। হামলার খবর পেয়ে র‍্যাব ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং এলাকাটি ঘিরে ফেলে। জঙ্গিরা ভেতরে জিম্মিদের ওপর নির্যাতন চালায় এবং নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন।

এছাড়া দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রবিউল করিম এবং বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ সালাউদ্দিন খান), রেস্তোরাঁর দুই কর্মচারী (অভিযান শেষে ও হাসপাতালে) নিহত হন। এ হামলায় আরো অনেকে গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

এরই মধ্যে হামলার খবর শুনে ভেতরে জিম্মি হয়ে থাকা অতিথিদের স্বজনেরর বেকারির আশপাশে এসে অবস্থান নেন। তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক, স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর প্রায়; করতে থাকেন আহাজারি। অনেকেই ভেতরে জিম্মিদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া না আসায় বাড়তে থাকে হতাশা।

জঙ্গিরা রেস্টুরেন্টের অতিথিদের মধ্যে যারা পবিত্র কোরআনের আয়াত বলতে পেরেছিল, শুধু তাদেরই রেহাই দিয়েছিল। বাকিদের, বিশেষ করে বিদেশিদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তারা।

হামলার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং রাত সাড়ে ৯টার দিকে তৎকালীন বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দীনসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। সালাউদ্দিন খান পরে হাসপাতালে মারা যান।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে। পরদিন সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কমান্ডো দল ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামে একটি উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া এই অভিযানে প্রায় ১২ ঘণ্টার জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে। অভিযানে পাঁচ হামলাকারী জঙ্গি নিহত হয় এবং ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং একজনকে খালাস দেওয়া হয়। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মোহাম্মদ আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন। এই রায় পরবর্তীতে উচ্চ আদালতেও আপিল হয়।

হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনাটি বিশ্ব জুড়ে নিন্দিত হয়। বিভিন্ন দেশ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানায় এবং বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। এই হামলা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করলেও এর পরবর্তীতে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। হামলার পর থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়, যার ফলে নব্য জেএমবিসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে অনেকটাই ভাটা পড়ে।

এই হামলা বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে একটি নতুন মোড় এনেছিল এবং এটি প্রমাণ করেছিল যে, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের প্রভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও প্রসারিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জঙ্গিবাদ দমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই যে হবে, তা ঠিক না। এজন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কেননা মতাদর্শ কখনো মরে যায় না। এ কারণে নিখুঁত হামলা আমলে রেখে জঙ্গিরা যে এসব সুযোগ আবারো নেবে না, সেই সন্তুষ্টি নেওয়ার সুযোগ নেই।  তাদের বিরুদ্ধে সবসময় নিবিড় নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা তারা দমে থাকলেও নির্মূল হয়নি।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়