ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মাস্ক ব্যবহারে মাস্কনি: যা জানা প্রয়োজন

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৬:২৯, ১১ আগস্ট ২০২১
মাস্ক ব্যবহারে মাস্কনি: যা জানা প্রয়োজন

করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। একারণে বাইরে বের হলেই দেখা যায় মানুষজন মাস্কে মুখমণ্ডল ঢেকে চলাফেরা করছে। প্রায় দেড়বছর ধরে মাস্ক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে আছে। কিন্তু এতে একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, মাস্কনি।

দুটি শব্দ ‘মাস্ক’ ও ‘একনি’ এর সমন্বয়ে মাস্কনি। একনি মানে হলো ব্রণ, আর মাস্কনি বলতে মাস্কের ব্যবহারে সৃষ্ট ব্রণকে বোঝায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাস্ক লাগিয়ে রাখলে কেবল ব্রণ নয়, ত্বকে অন্যান্য সমস্যাও হয়। যারা দীর্ঘসময় মাস্ক পরে থাকেন, তাদের অভিযোগ হলো- ত্বক লাল হয়ে গেছে, চুলকাচ্ছে, যন্ত্রণাদায়ক গোটা ওঠেছে ও অন্যান্য। দীর্ঘসময় ধরে মাস্ক পরে আসা লোকদের ত্বকে আবির্ভূত কিছু সমস্যা হলো-

ব্রণ: ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে ব্রণ ওঠে বা হোয়াইটহেডস/ব্ল্যাকহেডস হয়।

রোসাসিয়া: এটা হলো ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা, যেখানে ত্বক লাল হয়ে যায়।

ফলিকিউলাইটিস: এটা হলো লোমগ্রন্থির সংক্রমণ যা ব্যথা ও চুলকানি সৃষ্টি করে।

কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস: সংবেদনশীল কোনোকিছু ত্বকের সংস্পর্শে আসলে সমস্যাটি হয়। সংবেদনশীল বলতে ত্বকে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন ঘটায় এমনকিছু। এ সমস্যাতে লাল ও চুলকানিযুক্ত র‍্যাশ ওঠে।

* মাস্কনি হয় কেন?

দীর্ঘসময় মাস্ক পরে থাকলে আমাদের ত্বক বাতাসের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে শ্বাসক্রিয়ার সময় যত আর্দ্রতা বের হয় তা মাস্কে থেকে যায়, এমনকি ঘামও। এর ফলে ত্বকের ছিদ্রগুলো বুজে যায়। এটা ব্রণ সৃষ্টি করে, ত্বককে লাল করে ফেলে ও চুলকানির উদ্রেক ঘটায়।এছাড়া মাস্ক ও ত্বক পরস্পরে ঘষা খেয়েও ব্রণ ওঠে। প্রতিনিয়ত মাস্কের ঘর্ষণে ত্বক উক্ত্যক্ত হয়ে অন্যান্য সমস্যায়ও ভুগতে পারে। মাস্কে অ্যালার্জেন থাকলে সংবেদনশীল ত্বক সহজেই ভুগতে পারে।

* মাস্কনি প্রতিরোধে কি করবেন?

ত্বকের অন্য সমস্যার মতো মাস্কনিও প্রতিরোধ করা যায় এবং এর চিকিৎসাও রয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে সচেতন থাকলে ত্বকে মাস্কের ব্যবহারজনিত ব্রণ এড়ানো যাবে।

মাস্কনি প্রতিরোধে প্রথমত সঠিক মাস্ক পরতে হবে। এমন মাস্ক পরবেন না যা ত্বককে বেশি উক্ত্যক্ত করে। নাইলন ও কৃত্রিম তন্তুর মাস্ক এড়িয়ে চলুন। আপনার ত্বক সংবেদনশীল হলে কটনের মাস্ক পরুন। যদি দেখেন যে কোনো মাস্ক পরাতে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হয়েছে, তাহলে ওটা কি দিয়ে তৈরি জেনে নিন ও অন্য উপকরণের মাস্ক পরুন।

যেহেতু প্রত্যেক মাস্কই ত্বকে কিছু না কিছু ঘষা খায়, তাই অযথা দীর্ঘসময় মাস্ক না পরাই ভালো। কিছু লোকের করোনাভীতি এতটাই বেশি যে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মুখে যে মাস্ক লাগায় তা প্রয়োজনে খুলতেও চরম অস্বস্তিতে ভুগেন। কিন্তু এটা অমূলক ভয় ব্যতীত আর কিছুই নয়। তাই আশপাশে লোকজন না থাকলে মাস্ক খুলে ফেলুন। নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করলেও মাস্ক খুলে ফেলতে পারেন। এভাবে সুযোগমত মাস্ক খুলে নিলে ত্বক বাতাসের সংস্পর্শে আসবে ও ব্রণের প্রবণতা কমে যাবে।

মাস্ক পরার আগে সকল ধরনের মেকআপ পরিহার করাই ভালো। এ পরামর্শ মানতে না চাইলে নন-কমিডোজেনিক মেকআপ ব্যবহার করতে পারেন অর্থাৎ ত্বকের ছিদ্রকে বন্ধ করে না এমন মেকআপ বেছে নিতে পারেন। কমিডোজেনিক মেকআপ ও মাস্কে জমে থাকা আর্দ্রতায় ত্বকের ছিদ্রগুলো সহজে বুজে গিয়ে ব্রণ ওঠতে পারে। মেকআপে বেশি কেমিক্যাল থাকলে ত্বকে বেশি প্রদাহ ও লাল হয়। তাই কম কেমিক্যালের প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

এছাড়া নিয়মিত মুখমণ্ডল পরিষ্কার করতে হবে। বাইর থেকে এসে অবশ্যই মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলতে হবে। যতবারই বাইরে যান না কেন, বাসায় ফিরে মুখমণ্ডল ধুয়ে নিন। বিশেষ করে ঘেমে গেলে মোটেই অবহেলা করা যাবে না। এছাড়া সকালে ও রাতে ঘুমানোর পূর্বেও ধুতে হবে। এসবে মনোযোগী হলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে ও প্রাণবন্ত দেখাবে। মুখমণ্ডল ধোয়ার পরে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার মাখতে পারেন। অবশ্যই নন-কমিডোজেনিক ক্রিম, অন্যথায় ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশি-হাঁচির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায় এমন মহামারিতে মাস্ক ব্যবহারে মোটেও উদাসীন থাকা যাবে না। একজন মানুষ সংক্রমিত হলে ব্যাপারটা কেবল তার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, ওই ব্যক্তি থেকে বহুজনে সংক্রমণটি ছড়াতে পারে। তাই মাস্ক পরতে হবে। নিজের কথা ভাবেন না ভাবেন, মাস্ক ছাড়া বেপরোয়া চলাচলে সমাজের মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলানোর অধিকার কারো নেই। এমনকি যারা সম্পূর্ণ টিকা নিয়েছেন তাদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়