ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রোজা রেখেও যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৫ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোজা রেখেও যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে

ডা. সজল আশফাক : রোজায় রোগী কীভাবে রোজা রাখবেন, নিয়মিতভাবে গ্রহণকৃত ওষুধগুলোর কী হবে, ইনহেলার, স্প্রে, ড্রপ কি রোজা রেখে গ্রহণ করা যাবে? চিকিৎসা সংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইসলামী গবেষকদের মতামতের আলোকে আর্ন্তজাতিক চিকিৎসা গবেষণাপত্রের নিবন্ধের আলোকে রচিত এই নিবন্ধ।

 

রোগী কোন অবস্থায় রোজা রাখতে পারবেন, কখন পারবেন না এ বিষয়ে ধর্র্মীয় দিক নিদের্শনা থাকলেও অসুস্থ অবস্থা যারা রোজা রাখতে চান তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রয়োগ নিয়ে অনেকের মাঝেই নানা রকম বিভ্রান্তি রয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় অনেকেই রোজা রাখতে আগ্রহী থাকেন। কিন্তু ওষুধ গ্রহণ বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে অনেকেই রোজা রাখতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন।

 

আবার এমন রোগীও আছেন যারা বলেন, যা হবার হবে, তবুও রোজা ছাড়ব না। এমতাবস্থায় রোগীর রোজা থাকাকালীন চিকিৎসা অথবা চিকিৎসার প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রয়োগ নিয়ে ডাক্তার ও রোগীদের মাঝে সংশয় ও বিভ্রান্তি দেখা যায়।

 

এ নিয়ে ডাক্তারাও অনেক সময় অসুবিধায় পড়েন। রোজা থাকাকালীন কোনটি উচিত, কোনটি অনুচিত তা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারেন না। এই সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ১৯৯৭ সালের জুন মাসে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত নবম ফিকাহ-চিকিৎসা সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই সম্মেলনে জেদ্দা ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি, আল আজহার ইউনিভার্সিটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর এবং ইসলামিক শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (আইএসইএসসিও) প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞ প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে মূল আলোচনার বিষয় ছিল- রোজা অবস্থায় যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রয়োগে রোজ নষ্ট হবে না, সে বিষয়ে একটা সঠিক দিক নিদের্শনা দেওয়া। এ লক্ষ্যে ইসলামিক চিন্তাবিদগণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও গবেষণা করে রোজা অবস্থায় ওষুধ প্রযোগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে সুচিন্তিত তথ্য উপস্থাপন করেন, যা ২০০৪ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে (বিএমজে) বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয়।

 

নিবন্ধে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অসুস্থ অবস্থায় যেসব ওষুধ গ্রহণে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না বলে মত দেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হল-

 

রোজা অবস্থায় চোখ, নাক ও কানের ড্রপ, স্প্রে, ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে। হার্টের এনজাইনার সমস্যার জন্য বুক ব্যথা উঠলে ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিাসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে জিহবার নিচে ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। শিরাপথে খাদ্য উপাদান ছাড়া কোনো ওষুধ ত্বক, মাংসপেশি, হাড়ের জোড়ায় ইনজেকশন হিসেবে প্রযোগ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজা রাখা অবস্থায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ জাতীয় কোনো তরণ শিরাপথে গ্রহণ করা যাবে না।

 

চিকিৎসার প্রয়োজনে রোজা রেখে অক্সিজেন কিংবা চেতনানাশক গ্যাস গ্রহণে রোজা নষ্ট হবে না।
এ ছাড়া চিকিৎসার প্রয়োজনে ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে এবং এসব উপাদান ত্বকের গভীরে প্রবেশ করলেও রোজার কোনো সমস্যা হবে না।

 

রোজা রেখে দাঁত তোলা যাবে এবং দাঁতের ফিলিং করা যাবে এবং ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া দাঁত পরিষ্কারের সময় অসাবধানতাবশত কোনো কিছু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না।
রোজা রেখে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে এবং কাউকে রক্ত দানেও কোনো বাধা নেই। একই সঙ্গে রক্ত গ্রহণ করতেও বাধা নেই রোজা রেখে। রোজা রেখে চিকিৎসার জন্য যোনিপথে ট্যাবলেট কিংবা পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহারে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যোনিপথ কিংবা পায়ুপথে চিকিৎসক বা ধাত্রী আঙ্গুল প্রবেশ করালেও রোজা নষ্ট হবে না।

 

এ ছাড়া রোজা রেখে জরায়ু পরীক্ষার জন্য হিস্টোরোস্কোপি এবং আইইউসিডি ব্যবহার করা যাবে।
হার্ট কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের এঞ্জিওগ্রাফি করার জন্য কোনো রোগ নির্ণয়ক দ্রবণ শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। একইভাবে কোনো অঙ্গের অভ্যন্তরীণ চিত্রধারণের জন্য সেই অঙ্গের প্রবেশ পথে কোনো ক্যাথেটার বা নালীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তরল রঞ্জক প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হবে না।

 

রোগ নির্ণয়ের জন্য এন্ডোস্কেপি বা গ্যাস্ট্রোস্কেপি করলেও রোজ নষ্ট হয় না। তবে এন্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করার সময় ভিতরে তরল কিংবা অন্য কোনো কিছু প্রবেশ করানো যাবে না, যার খাদ্যগুণ রয়েছে।

 

রোজা রাখা অবস্থায় না গিলে মাউথ ওয়াশ, মুখের স্প্রে ব্যবহার করা যাবে এবং গড়গড়া করা যাবে।

 

রোজা রেখে লিভারসহ অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে। রোজা রাখা অবস্থায় পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যাবে।

 

সূত্র: ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল

 

 
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৬/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়