ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা
লিমন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের প্রতীকী ছবি
লিমন আহমেদ
ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি : দিবসটি নিয়ে অনেকেই অনেক মতবাদ দিয়েছেন। কারো কাছে এর মাহাত্ম্য বিশাল। কেউ আবার করপোরেট ফ্যান্টাসি বলে উড়িয়ে দেন। যে যা-ই বলুক, সভ্যতার হাত ধরে ভালোবাসা দিবস আজ সারা বিশ্বের প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে মহা উৎসবের আয়োজনে পরিণত হয়েছে।
আজ ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। প্রতিবছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় এই দিনটি। মনের মানুষকে নতুন করে ভাবতে, কাছে পেতে, ভালোবাসতে ভালোবাসা দিবসের তাৎপর্য লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস
এই দিনে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ডেটিং-এ হারিয়ে যেতে চান সবাই। উপহার আর ভালোবাসার নানা চমকে মুগ্ধ করে রাখতে চান সঙ্গীকে। আবার একঘেয়ে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা দিবস আসে চৈত্রের খরায় এক পশলা বৃষ্টি হয়েই। মনের কোণে জমা সব হতাশা দূর করে সজীব হয়ে ওঠে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। পাশাপাশি যিনি প্রেমে পড়েন বা পড়বেন বলে ভাবছেন, তিনিও ভালোবাসা দিবসে বুকে বেশ বল পান। নতুন পরিকল্পনা সাজান পছন্দের মানুষকে নিয়ে।
তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, কী করে এল এই ভালোবাসা দিবস? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই দিবসের উৎপত্তি বা প্রচার নিয়ে নানা মত। একেক ইতিহাসবিদ একেক রকম গল্প লিখেছেন ভ্যালেন্টাইন ডের ইতিহাস নিয়ে। কারোটা পড়লে আবার মনে হয় রূপকথা। তবে একটা বিষয়ে সবাই একমত। তা হলো ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। রোম শহরের এই যাজকের নামানুসারেই সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
অনেক মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গৃহীত এবং জনপ্রিয় ইতিহাস এটি : ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের কথা। সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাসু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সেনাবাহিনীর। একসময় তার সেনাবাহিনীতে সেনাসংকট দেখা দেয়। কিন্তু কেউ তার সেখানে যোগ দিতে রাজি নন। সম্রাট লক্ষ করলেন যে অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে বেশি ধৈর্যশীল হন। ফলে তিনি যুবকদের বিয়ে কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করেন। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা খেপে যান। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াস নামের এক রমণীকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
পাশাপাশি তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন। একটি রুমে বর-কনেকে বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিসফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময় সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে গেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনেহিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন।
তারপরেই ভালোবাসা দিবসের আরেকটি গ্রহণযোগ্য ইতিহাসে হলো : ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে গোটা ইউরোপে ছিল খ্রিষ্টধর্মের জয়জয়কার। তখনো ঘটা করে পালিত হতো রোমান একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সব যুবক সব মেয়ের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করতেন। অতঃপর ওই বাক্স থেকে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলতেন, যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠত, তিনি পূর্ণবছর ওই মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকতেন। আর তাকে চিঠি লিখতেন এই বলে : ‘প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।’ বছর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো। এ রীতিটি কয়েকজন পাদরির গোচরীভূত হয়। তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খ্রিষ্টধর্মায়ণ করে দেন। তারা ঘোষণা করেন, এখন থেকে এ পত্রগুলো ‘সেন্ট ভ্যালেনটাইন’-এর নামে পাঠাতে হবে। কারণ এটা খ্রিষ্ট নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
আরেকটি ইতিহাস আছে। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে বহুকাল আগের রোম শহরে। সম্রাট তখন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। এক ধর্মযাজক ছিলেন সেন্ট ভ্যালেনটাইন নামে। তিনি ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। ওই সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসতেন এবং ফুল উপহার দিতেন। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখতেন। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেতেন। অনেকক্ষণ ধরে তারা দুজন প্রাণ খুলে কথা বলতেন। একসময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যান। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই থেকে ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসাকে সম্মান জানাতে পালিত হয়ে আসছে ভ্যালেন্টাইন ডে।
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে
১৯৯৩ সালের দিকে বাংলাদেশে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আর্বিভাব ঘটে। যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান এর প্রবক্তা। তিনি পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের প্রভাব নিয়ে দেশে এসে লন্ডনি সংস্কৃতির চর্চা শুরু করেন। তিনি প্রথম যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশিদের কাছে তুলে ধরেন। তেজগাঁওয়ের একটি রোডের নামকরণও করেছিলেন লাভ রোড।
সবাইকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।
রাইজিংবিডি / লিমন / ক.কর্মকার
রাইজিংবিডি.কম