ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫১ শতাংশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০২, ১৯ মে ২০২২  
নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫১ শতাংশ

রমজানে প্রতিবছরই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, এবারও বেড়েছে। তবে বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শুধামাত্র মে মাসে নিত্যপণ্যের দাম রোজায় বাড়া দামকেও হার মানিয়েছে। ১৮ এপ্রিল থেকে ১৮ মে এই এক মাসে শুধু ব্রয়লার মুরগি ছাড়া আর কোনো নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। বেড়েছে অধিকাংশ পণ্যের দাম। কিছু নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান টিসিবি রাজধানীর বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের হিসাব রাখে। তাদের গত এক মাসের হিসাবে দেখা গেছে, ৩২ খাদ্যপণ্যের মধ্যে ১৯টির দাম বেড়েছে। কেবল একটি পণ্যের দাম কমেছে। আর স্থিতিশীল রয়েছে ১২টির মূল্য।

টিসিবি হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বাজারে মোটা চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন, পাম অয়েল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, আদা, জিরা, তেজপাতা, গুড়া দুধ, চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে। শুধু কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত মাসের তুলনায় ব্রয়লার মুরহি কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে, গত একমাসের ব্যবধানে মুগডাল, অ্যাংকার ডাল, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনিয়া, রুই মাছ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস, খেজুর ও লবণের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্য রমজানে যে দামে বিক্রি হয়েছে, এখনো সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে।

যেসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তা সর্বনিম্ন দেড় শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এই এক মাসে। এর মধ্যে সবেচেয় বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়া আটা-ময়দা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ডিম, আদা, রসুন ও আলুর দাম বেড়েছে ১০-২৯ শতাংশ পর্যন্ত। 

গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৩-১৫ টাকা, আটা ৭, ময়দা ১০-১৪, সয়াবিন তেল ৩০-৩৫, পাম অয়েল ৩০-৩২, রসুন ৩০, আদা ৩০, মসুর ডাল ১০-১৫, আলু ৪-৫, ডিম (হালি) ৫-৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ক্রেতারা অভিযোগ করে বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এসব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। যেহেতু এসব পণ্য না কিনে চলা যায় না, তাই ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করে পকেট কাটছেন।

সয়াবিন তেল নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সারাদেশে ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে হাজার হাজার টন ভোজ্যতেল উদ্ধার, তাদেরকে জরিমানা করার পর ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের ওপর আরও বিশ্বাস হারিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছেন, যার অন্যতম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে বলে দাবি তাদের। এছাড়া কিছু পণ্যের আমদানি- রপ্তানিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকালে হাতিরপুল বাজারে কেনাকাটা করতে আসা রুমানা ইসলাম বলেন, 'ব্যবসায়ীরা যতই কারণ বলুক, তারা আসলে একটা অসৎ সিন্ডিকেট হয়ে সব জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। বিশ্ববাজারে এক টাকা বাড়ার খবর পেলে তারা পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের এখানে আর দাম কমানো হয় না।'

নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা মোস্তফা চৌধুরী বলেন, 'বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেমন নজরদারি থাকা উচিৎ ছিল সেটা নেই। যা আছে, সেটা লোক দেখানো আর মিডিয়া কাভারেজের জন্য। বাজারে যখন চরম অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়, তখন  কিছু অভিযান চলে। দু-চারজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে, এই পর্যন্তই।'

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, 'নানাবিধ যৌক্তিক-অযৌক্তিক কারণে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে যৌক্তিক যা বাড়ার কথা তার কয়েকগুণ বেশি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবসময় বাড়তি মুনাফার সুযোগ খোঁজেন ব্যবসায়ীরা।'

তিনি আরো বলেন, 'ব্যবসায়ীদের অজুহাতের সীমা নেই। তারা কারণে- অকারণে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। তাদের এ অসৎ প্রবণতা ঠেকাতে দেশে আইনও আছে। তবে সে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নেই। ফলে দিন দিন ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।'

কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে- খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট, নারিকেল তেল, সেভিং ফোম, টালকম পাউডার, রেজারসহ অন্য পণ্যের দামও 

পাশাপাশি আটা-ময়দা-চিনির দাম বাড়ায় রুটি, কেক, বিস্কুটের মতো বেকারি পণ্যের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। চায়ের দোকানে যে কেক ৮ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ১০ টাকা। ৩০ টাকা দামের ফ্যামেলি রুটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।

আজকের বাজারে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৯৫, ময়দা ১২৫, ভোজ্যতেল ১ লিটার ১৯৮, ২লিটার ৩৯৪, ৫লিটার ৯৮৫, মসুর ডাল ১৪০, ডিম (ডজন) ১২০, আদা ১২০, রসুন ১৮০, আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইজাম চাল ৪৫ টাকা, নাজির ৮০, মিনিকেট ৬৫, আটাশ ৫০, চিনি (সাদা) ৮৫, চিনি (লাল) ১১০, গুড়ো দুধ ৫০০ গ্রাম ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের।

মাছের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। রুই ৩৫০ টাকা, কাতল ৩২০, শিং ৫৫০, পাবদা ৪৫০, চিংড়ি ৬০০-৮০০, ইলিশ (কেজি) ১৫০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগী ১৭০ টাকা, কক ৩৫০, দেশি মুরগী ৬৫০, লেয়ার ৩০০, গরু মাংস ৭০০ এবং খাসির মাংস ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মেয়া/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়