ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন জাতীয় জাদুঘর

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ২৪ এপ্রিল ২০২৩  
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন জাতীয় জাদুঘর

ফাইল ছবি

১৯১৩ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একটি কক্ষে ঢাকা জাদুঘর নামে পথ চলা শুরু হয় জাতীয় জাদুঘরের। গভর্নর লর্ড কার মাইকেল ঢাকা জাদুঘরের উদ্বোধন করেন।

১৯৮৩ সালে ঢাকা জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের অবস্থান শাহবাগ মোড়ে, প্রায় ২০ হাজার বর্গমিটারের চারতলা ভবনটিতে রয়েছে ৪৬টি গ্যালারি। আর এতে রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন। দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ আমাদের জাতীয় জাদুঘর।

জাতীয় জাদুঘরে গেলে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতিটি ধাপের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে। শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর মূল ভবনের প্রবেশ দরজার দুপাশে রয়েছে দুটি সুসজ্জিত কামান। ভবনের ভেতরে রয়েছে নান্দনিক নভেরা ভাস্কর্য। মূল ভবনের নিচতলায় শুভেচ্ছা স্মারক বিপণি, ব্যাগ রাখার স্থান এবং কয়েকটি খাবারের দোকান। উপরের প্রতিটি তলাতেই রয়েছে গ্যালারি নির্দেশক। নির্দেশকের মাধ্যমে জানা যাবে জাদুঘরের ভেতরে কোথায় কী রয়েছে।

বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে শুরু হওয়া জাদুঘরের প্রথম তলায় পুরো বাংলাদেশকেই তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আরও রয়েছে বাংলাদেশের গাছপালা, প্রাণী, সুন্দরবন, উপজাতীদের জীবনধারা, খনিজ শিলা, ভাস্কর্য, মুদ্রা এবং প্রাচীন যুগের নানাবিধ ভাস্কর্য। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বাংলাদেশের সভ্যতা ও ইতিহাসের ক্রমবিবর্তন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ের অস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, চীনামাটির হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, পাণ্ডুলিপি, সমকালীন শিল্পকলা এবং বাংলাদেশের নানাবিধ ঐতিহ্য। জাদুঘরের তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের প্রতিকৃতি, চিত্রকর্ম ও বিশ্বসভ্যতার নানা নিদর্শন।

সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার এবং সব সরকারি ছুটির দিনে জাতীয় জাদুঘর বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকি ছয় দিনই জাদুঘর খোলা থাকে। তবে সরকারি বন্ধের দিন হলেও বিশেষ দিনগুলোতে, যেমন-বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ এমন দিনে জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।

তবে বিভিন্ন সময়ে দর্শনার্থীদের পরিদর্শনের জন্য সময়সূচি কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এই ৬ মাস পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

অক্টোবর থেকে মার্চ এই ৬ মাস সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাতীয় জাদুঘর খোলা থাকে।

প্রত্যেক দর্শনার্থীকে টিকিট কেটে জাদুঘরে প্রবেশ করতে হয়। জাদুঘরের মূল গেটের পাশে টিকেট কাউন্টার। ৩ থেকে ১২ বছরের শিশুদের টিকিটের মূল্য ১০ টাকা। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সবার জন্য টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা হলেও সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকরা ২০ টাকার টিকিটে জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবেন। বিদেশি নাগরিকদের জন্যে গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য টিকিট ছাড়াই জাদুঘরে যাওয়ার সুযোগ থাকে। 

যারা জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করতে যাবেন, তাদেরকে কিছু নিয়ম মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে রয়েছে-
: জাতীয় জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলা যাবে না। তাই ভেতরে যাওয়ার সময় সাথে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যাবে না। 
:জাদুঘর পরিদর্শনকালে ভেতরে মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবে না।
: জাদুঘরের ভেতরে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না।
: বাইরে থেকে কোনো খাবার বা পানি নিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করা যাবে না।
: জাদুঘরে রাখা কোনো নিদর্শনগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না।

ঈদের ছুটিতে বা আপনার সময় মতো কোনো দিন নির্দিষ্ট সময় মেনে ঘুরে আসুন জাতীয় জাদুঘর থেকে। সঙ্গে আপনার সন্তান বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যান। একটা বিকেল কাটিয়ে আসুন, জাতীয় জাদুঘরে থাকা বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাসের সঙ্গে। রাজধানীর যে কোনো প্রান্ত থেকে জাতীয় জাদুঘরে যেতে পারবেন। এর অবস্থান: শাহবাগ মোড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ঠিক দক্ষিণ পাশে। 

/মেয়া/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়