ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সড়ক দুর্ঘটনা জাতির জন্য স্থায়ী অভিশাপ: কাদের গনি চৌধুরী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৫  
সড়ক দুর্ঘটনা জাতির জন্য স্থায়ী অভিশাপ: কাদের গনি চৌধুরী

সড়ক দুর্ঘটনা এখন আর কেবল বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং জাতির জন্য এক ‘স্থায়ী অভিশাপ’ এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) আয়োজিত ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল মতপক্ষের রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা জরুরি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন নিসচার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য লিটন এরশাদ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, ডিআরইউয়ের সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সিনিয়র সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন শিকদার, নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (ভার্চুয়ালি) মিরাজুল মইন জয়, মহাসচিব এসএম আজাদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান ও সদস্য মান্নান ফিরোজ।

কাদের গনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই সংবাদপত্র খুললে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর দেখা যায়। এসব মর্মান্তিক ঘটনা শুধু পরিবার নয়, গোটা সমাজ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’’

তিনি জানান, বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৮০ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৪৪৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৮২ জন।

ওয়ার্ল্ড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় দেড় শতাংশ।

বিএফইউজের মহাসচিব বলেন, “দুর্ঘটনায় নিহত বা আহতদের জন্য সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও সাধারণ মানুষ আইনটি সম্পর্কে জানেন না। নিহতের পরিবার ৫ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতরা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা সহায়তা পাওয়ার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়, যা অনেক শোকাহত পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, আবেদন করার সময়সীমা অন্তত ৯০ দিন করা হোক।”

তিনি অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মহাসড়কে এখনো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে। এসব যান প্রায়ই দুর্ঘটনার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলেন তিনি।

কাদের গনি বলেন, ‘‘বিআরটিএর হিসাবে দেশে ছয় লাখ ফিটনেসবিহীন গাড়ি আছে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। ঈদের সময় পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে, ক্লান্ত চালকদের দিয়ে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা বাড়ে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখনো পরিবহন খাতকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ফলে চালকদের নির্দিষ্ট বেতন, কর্মঘণ্টা বা ছুটি নেই। ট্রিপভিত্তিক আয়ের কারণে চালকরা অতিরিক্ত কাজ করেন, ক্লান্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটান।’’

দুর্ঘটনা রোধে সরকার, পরিবহন মালিক, চালক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে কাদের গনি বলেন, ‘‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ, রোড ডিভাইডার স্থাপন, রাস্তা সংস্কার, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।’’

ঢাকা/এএএম//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়