ভূমিকম্পে দেশের কোন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর
নরসিংদীর মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্পের পর আশুলিয়ার বাইপাইলে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। দেশে পরপর এমন ভূমিকম্প হওয়া বিপদ সংকেত বলে মনে করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।
ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট দিয়ে তৈরি পৃথিবীর ভূখণ্ড। এগুলো নরম পদার্থের ওপর ভাসছে। যখন এসব প্লেট সরে যায়, নড়াচড়া করে, একটি অন্যটিকে ধাক্কা দেয়, তখন ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে শুরু হয়। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিকভাবে তিনটি বড় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত যেগুলোর চ্যুতি দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঞ্চিত শক্তি যখন শিলার ধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে যায়, তখন সেই শক্তি কোন বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্টে কম্পন তৈরি হয়। বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটে সংযোগস্থলে এমন শতবর্ষের শক্তি জমা হয়েছে। যে কারণে দেশে ৮ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “পূর্বে অবস্থিত বার্মা প্লেট ও পশ্চিমে ভারতীয় প্লেটের সংযোগস্থলের ওপরের ভাগটি অর্থাৎ সুনামগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পূর্বে মণিপুর ও মিজোরাম পর্যন্ত অঞ্চলটি লকড হয়ে আছে। যেটি এখন ধাবিত হতে শুরু করেছে। ভারতীয় প্লেট পূর্বদিকে এবং বার্মা প্লেট পশ্চিমদিকে ধাবিত হচ্ছে। যে কারণে বার্মা প্লেটের নিচে ভারতীয় প্লেট তলিয়ে যাচ্ছে। এই ‘সাবডাকশন জোন’-এ ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি সঞ্চিত রয়েছে।”
ভূমিকম্পে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবাইয়াত কবির গণমাধ্যমেকে বলেন, “দেশের ‘আর্থকোয়েক রিস্ক জোন’-এর মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেদিক থেকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে ঝুঁকি সর্বোচ্চ। মধ্যাঞ্চলের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মাঝারি ঝুঁকিতে এবং খুলনা ও সাতক্ষীরা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।”
এর শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে কম্পনটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। এ ঘটনায় শিশুসহ ১০ জন নিহত ও ৬ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে নরসিংদীতে। ঢাকায় ৪ ও নারায়ণগঞ্জে এক জন মারা যান।ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন। এছাড়া কিছু ভবন হেলে পড়ে ও ফাটল দেখা দেয়।
ঢাকা/এসবি