ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘ডান পায়ের হাড়-মাংস উড়ে গিয়েছিলো’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ২১ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘ডান পায়ের হাড়-মাংস উড়ে গিয়েছিলো’

গ্রেনেড হামলার ঘটনাস্থল ও ইনসেটে নাসিমা ফেরদৌস

গ্রেনেডের আঘাতে ডান পায়ের হাড়-মাংস উড়ে গিয়েছিলো তৎকালীন ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসিমা ফেরদৌসের। ১৭ বছর পর এখনও কোনোরকমে পা ফেলতে পারেন। এখনও শরীরে দেড় হাজারের মতো স্প্লিন্টার। শারীরিক অবস্থাও ভালো না।  এভাবেই চলছে তার জীবন।

২০০৪ সালের একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সেদিনের ঘটনা এবং বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে আছি।’

ভয়াল সেই দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে নাসিমা বলেন, ‘নেত্রী বক্তব্য শেষ করে মাইক্রোফোনটা কারো হাতে দেবেন, তখন একজন সাংবাদিক বললেন, আপা আমি আপনার ছবি নিতে পারিনি। তখন আপা একটু দাঁড়ালেন। এর মধ্যে বিকট শব্দ। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ধোঁয়ায় কালো হয়ে গেছে পুরো এলাকা। বুঝতে পারছি না কি হলো? উঠে দাঁড়াতে চাইছি, কিন্তু পারছি না। আমার ডান হাতের দিকে আইভী আপা ‘মা’ বলে চিৎকার করে পড়ে গেলেন। দুমড়ে-মুচড়ে গেছেন তিনি। তাকে যে আমি ধরবো, আমিই উঠে দাঁড়াতে পারছি না।’

‘আমার পেটের মধ্যে স্প্লিন্টার ঢুকে গেলো। পা জ্বলে যাচ্ছে। তখন হাত দিয়ে পা টেনে আনলাম। পায়ের অবস্থা দেখলাম ভীষণ খারাপ। আমার চারপাশে লাশ আর রক্ত। এগুলো দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি লাশের ট্রাকে। পরে আমাকে ঢাকা মেডিক্যালের করিডোরে রাখা হলো। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। তখন এক সাংবাদিক আমাকে পরিচিত কারো মোবাইল নম্বর আছে কি না, জিজ্ঞেস করলেন। আমি বলতে পারছিলাম না। তারপর এক সময় আমি এক আত্মীয়র কথা বলি।’

নাসিমা বলেন, ‘চিকিৎসকরা আমার পা কাটতে চেয়েছিলো। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনরা তা করতে দেয়নি।  চিকিৎসকরা বললো অনেক রক্ত লাগবে। ডোনার রেডি করলো, কিন্তু রক্তের ব্যাগ পেলো না। ব্যাগ পাওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার পর নিচ্ছে না কোনো হাসপাতাল। এইভাবে রাত কেটে গেলো। এর মধ্যে ডা. রুহুল হকের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, এখন যেকোনো একটা হাসপাতলে রাখো। আমি সকালে এসে দেখবো। সকালে আমার চিকিৎসা শুরু হলো। এরপর নেত্রী আমাকে দিল্লিতে পাঠান। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ৯ মাস পর আমি প্রথম গোসল করি। ৬ বছর পর হাঁটা শুরু করেছিলাম স্ক্র্যাচে ভর করে। এই ১৭ বছরের মধ্যে তিন বছর আগে লাঠি দিয়ে হাঁটছি কোনোরকমে।’

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যই ওই হামলা হয়েছিলো উল্লেখ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন আহত নাসিমা। তিনি বলেন, ‘ভাগ্যক্রমে নেত্রী বেঁচে গেছেন।  তিনি না থাকলে আমার দুই পায়ে ভর করে হাঁটা হতো না। আহত নিহতের পরিবারের অস্তিত্ব থাকতো না।  এজন্য আল্লাহ ওনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

‘মাথায়, শরীরে স্প্লিন্টার। মাথা ব্যথা করে। শরীর ব্যথা করে। সবসময় ব্যায়াম করতে হয়, থেরাপি দিতে হয়, ম্যাসেজ করতে হয়, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। আসলে বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে আছি।’

ঢাকা/পারভেজ/জেডআর

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়