ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না: ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ৮ জুন ২০২৩  
আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না: ফখরুল

ফাইল ছবি

সংলাপের কথা বলে জনদৃষ্টিকে সরকার ভিন্নদিকে ঘোরাতে চায় মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে যায় না। এরা শুধু মিথ্যা কথা বলে। নির্বাচনের সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই। সুতরাং আগে পদত্যাগ করুন। তারপর দেখবো তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিভাবে করতে হয়। দেশের মানুষ সেটা জানে। আজকে আমাদের লড়াই কিন্তু বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করছি আমরা। গোটা দেশের মানুষ আজকে আমাদের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করছে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট উত্তরণ প্রয়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা-একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের স্বাধীনতার ৫২ বছরেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর পদ্ধতি তৈরি করতে পারিনি। তবে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গণতান্ত্রিক মানসিকতার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া; যিনি গৃহবধূ থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি সবার মতামতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কারণ জনগণ তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি দলের কথা চিন্তা করেননি। কিন্তু ২০১১ সালে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছেন। এরপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেদিন গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন দেশকে অনিশ্চয়তা ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো।

তিনি বলেন, এখন আমাদের মাঝে কেনো জানি সাহসের অভাব। আসুন আমরা যে যেখানে আছি সাহস করে দাঁড়াই। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলুন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বলুন, সবকিছুকে অর্জন করতে হলে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। আজকে সংকটটা কঠিন। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এখনো আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। পাকিস্তান বিভাজনের পর থেকে এখানে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। বারবার গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার মুখে বার বার গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু সেই দলটির হাতে গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে। গণতন্ত্র আমাদের অস্থিতে মজ্জায় ছিল। যা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ একে একে গণতান্ত্রিক সব অধিকার হরণ করেছে। তারা জরুরি অবস্থা, সামরিক আইন এবং শেষে বাকশাল কায়েম করেছিলো।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে যায় না। মানুষ যা চায় আওয়ামী লীগ তার উল্টো করে। তাদের চরিত্র হলো ফ্যাসিবাদী। তারা উগ্রবাদী। তারা অন্যকে কথা বলতে দেয় না। গত ১৪ বছর ধরে হিংসাত্মক কথা বলে আসছে। তারা হলো ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। তারা তো আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে মেরে বের করে দিয়েছে। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হলো ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসী।

তিনি বলেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যে কারণে বিএনপির মনোভাব হলো গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সুতরাং যারা রাজনীতির বাইরে আছেন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে জড়িত, যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চান তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একদল আরেক দলকে বিশ্বাস করে না। যে কারণেই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে চারটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমরা স্বাধীনতার ৫২ বছরেও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে লড়াই করছি। প্রধানমন্ত্রী তো প্রাণ নিচ্ছেন।

বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের নাকি বিদ্যুৎ ফেরি করে বিক্রি করতে হবে। তো ৩ ঘণ্টাও তো বিদ্যুৎ মিলছে না। হাসপাতালে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। কৃষিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। সবাই তো বিল দিচ্ছি। তাহলে টাকা গেলো কোথায়? তারা তো কয়লা আনতে পারে না। আসলে তারা শুধু মিথ্যা কথা বলে। তাদের টাকা নেই ডলারও নেই। জাতির কাছে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। কলকাতা- পশ্চিমবঙ্গে লোডশেডিং নেই। তাহলে আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে কেনো সেটা করতে পারলাম না।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ডাইভারশন খুব ভালো পারে। তারা একটি ইস্যু আরেকদিকে নিতে বেশ পটু। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের তিন নেতা তিনরকম কথা বললেন। আসলে আমরা যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবো না সেটা এবং বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এসব করছে।

আজদের দিনে গণমাধ্যম ঠিকমত স্বাধীনভাবে লিখতে ও বলতে পারেন না। কারণ ফ্যাসিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ইতিমধ্যে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাতিসংঘসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বলেও জানান তিনি ।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজ যারা জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে আছেন তারা আরব উপন্যাসের দ্বৈত্যের মতো। এরা তো বিরোধী মতকে সহ্য করতে পারেনা। সেজন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখেছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশে বাধা। আজকে সরকারের সমালোচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের চাকরি থাকে না। আজকে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও তারা সহ্য করে না।

রিজভী বলেন, এই সরকারের সময় ফুরিয়ে আসছে।  সেজন্যই আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমেরিকা যাবো না। অন্য মহাদেশে যাবো। এখানেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাকে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ শেখ হাসিনার দুঃশাসন থাকবে না।

ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নুরুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায় সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল ও খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম শিমুল।

আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী, ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক সাজেদুল করিম, অধ্যাপক মতিনুর রহমান, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক আবুল হাশেম, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক শের মাহমুদ অধ্যাপক মাসুমা হাবিব প্রমুখ।

এ সময় ইউট্যাবের অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, ড. আবু জাফর খান, অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক-পেশাজীবী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

/মেয়া/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়