‘অন্যদিনে গণভোট অযৌক্তিক’
কমিশনের ‘অগ্রহণযোগ্য’ সুপারিশ জাতিকে বিভক্ত করবে: মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সনদ বাস্তবায়নে ঐক্যমত কমিশনের সুপারিশ ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে এই সুপারিশ জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। সেখানে যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না।’’
“আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, এই সকল সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে।’’
মনগড়া যে কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে বলেও এ সময় হুঁশিয়ার করেন মীর্জা ফখরুল।
নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক :
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিকে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সেক্ষেত্রে নির্বাচন (সংসদ) অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘সময় স্বল্পতা, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মত বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।’’
‘‘আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণ এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা,’’ বলেন বিএনপির এই শীর্ষনেতা।
জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা সকলের কাম্য জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।’’
“আমরা আন্তরিকভাবেই চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অবস্থান প্রকাশে আমরা দায়বদ্ধ,’’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
উল্লেখ্য জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সেখানে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। তবে কখন সেই ভোট হবে তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/তারা