ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

ছাদবাগানেই ‘ইতিহাস’

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ৩ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:২৩, ৩ নভেম্বর ২০২১

বর্তমান সময়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ছাদবাগান।  কেউ শখের বশে, কেউবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে এ বাগান গড়ে তুলেন।  তবে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ ভবনের ছাদবাগানটি একেবারেই ভিন্ন।  সেখানে রয়েছে প্রকৃতি ও ইতিহাসের এক মেলবন্ধন, যা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।

আলোড়ন করা ছাদবাগানটি গড়ে তুলেছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এটি তৈরি করে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন তিনি, নাম রেখেছেন শেখ রাসেল ‘রুফটপ বোটানিক্যাল গার্ডেন’।

উপজেলা পরিষদ ভবনের ছাদে গেলেই চোখে পড়বে বাগানটির। যেখানে শোভা পাচ্ছে আম, জাম, কাঁঠালসহ শত প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলদ গাছ। পাশাপাশি রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির বনজ ও ঔষধি গাছও।

ছাদবাগানটি সরকারি ভবনে হলেও সরকারি তহবিল থেকে এক টাকাও ব্যবহার করা হয়নি। এর পেছনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ ব্যক্তিগত প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। তার দেড় বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার ফসল এই ছাদবাগান। প্রকৃতি আর গাছপালার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি কাজটি করেছেন, যাতে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের গাছপালা ও প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন করা যায়।

শীত শুরু। এরই মধ্যে কোনো কোনো গাছে ফল ধরেছে, বাহারি ফুলের শোভায় রঙিন পরিবেশ। পুরো ছাদই যেন সবুজে ঘেরা এক বৃক্ষরাজ্য আর দুর্লভ গাছপালার সংগ্রহশালা। শুধু গাছপালা নয়, রয়েছে প্রকৃতিপাঠের ব্যবস্থাও। প্রতিটি গাছের নাম, বিবরণ, গুণাগুণ লেখা রয়েছে ডালে ডালে। রয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাসও। বাগান ঘুরলেই পাওয়া যাবে জেলার কৃতী সন্তানদের পরিচিতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলের নামে বাগানে রয়েছে আলাদা কর্নার। সব মিলিয়ে ছাদবাগানের সঙ্গে বহুমুখী বিষয়ের অনন্য সমাহার।

দর্শনার্থীরা রাইজিংবিডিকে জানান, ছাদবাগানটি দেখে তারা অভিভূত। এখানে প্রকৃতির পাশাপাশি জেলার গুণীজনদের ব্যক্তিগত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি গাছের বৈজ্ঞানিক নামসহ বিবরণ লেখা রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম এবং শিক্ষার্থীরা এখানে আসলে অনেক কিছুই শিখতে ও জানতে পারবেন। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে ছাদবাগানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমন উদ্যোগের জন্য তারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান। তারা মনে করেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় এভাবে ছাদবাগানের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাগানটি করেছেন। শিক্ষার্থীরা ছাদবাগানে গিয়ে যেমন চিনতে পারবে গাছগাছালি, তেমনি খেতে পারবে নানা জাতের ফল; জানতে পারবে জেলার প্রথিতযশা ব্যক্তিদের কীর্তি। এ ধরনের উদ্যোগ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’

নিজ বাগান সম্পর্কে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বলেন, ‘এটি আমার স্বপ্ন ছিল। আজ সেটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে টবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়েছি। এখন গাছগুলো বড় হয়েছে, ফলও আসতে শুরু করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় যেমন গাছের প্রয়োজন, তেমনি ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের জানা উচিৎ। শেখ রাসেল রুফটপ বোটানিক্যাল গার্ডেনে গাছের নাম ও গুণাবলীর পাশাপাশি দেশ এবং কিশোরগঞ্জের বরেণ্য ব্যক্তিদের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এ বাগানটি ঘুরে দেখলে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছুই শিখতে পারবে।’

লোকমুখে শুনে ও জানতে পেরে ছাদবাগানটি দেখতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুন। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির রুদ্ররূপ-উত্তাপ ও পরিবেশের ভারসাম্য যেভাবে নষ্ট হচ্ছে, তা ঠিক করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সবুজায়ন।  কোনো বাগান তৈরিতে শুধু সৌন্দর্য ও ফল পাবো তা কিন্তু নয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে এমন সবুজায়ন অত্যন্ত জরুরি।’ তিনি মনে করেন, এ সবুজায়ন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এদিকে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গাছ কেটে ফেলার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যদি প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বাসাবাড়িতে ছাদবাগান করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে প্রকৃতি আবারও নতুন রূপে ফিরে আসবে।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়