ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘লক্ষ্মী বাউর’ হতে পারে দেশের দ্বিতীয় সোয়াম্প ফরেস্ট

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৩:০২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
‘লক্ষ্মী বাউর’ হতে পারে দেশের দ্বিতীয় সোয়াম্প ফরেস্ট

‘লক্ষ্মী বাউর’ এর একটি দৃশ্য

বর্ষায় চারদিক পানি থৈ থৈ করে। শুকনো মৌসুম আসলে পানি কমে যায়। তারপরও বিলে পানি জমাট থাকে। আর এই পানিতে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেন। এদিকে হাওর হলেও এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। আর এখানের গাছ গাছালিতে রয়েছে পাখির আবাসস্থল। যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকর্ষণ করছে।

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ১ নম্বর ইউনিয়নের হাওর অঞ্চলখ্যাত জলাবন। তবে তার পরিচিত নাম ‘লক্ষ্মী বাউর।’ যা দেখে মনে হবে দেশের দ্বিতীয় সোয়াম্প ফরেস্ট। এই ‘লক্ষ্মী বাউর’ হয়ে উঠতে পারে দেশের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। 

ইতোমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট দেশ জুড়েখ্যাতি অর্জন করেছে। এই জলাবন দেখতে দর্শনার্থীরাও আসতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে তুলনামূলকভাবে এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। 

বানিয়াচং উপজেলার খরতি নদীর দক্ষিণ দিকে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ একর জমি নিয়ে হাওরের মধ্যে অবস্থিত ‘লক্ষ্মী বাউর’ জলাবন। এলাকাবাসীর কাছে ‘খরতির জঙ্গল’ নামে পরিচিত এই জঙ্গল কবে এবং কিভাবে সৃষ্টি হয় তা অনেকের অজানা। এই জলাবনের প্রকৃতির বিচিত্র রূপ সবাইকে মুগ্ধ করে। বর্ষাকালে চারদিকে হাওরের থৈ থৈ পানির মধ্যে অসংখ্য গাছপালার সবুজ অরণ্য পরিবেশকে এক নান্দনিক রূপ দিচ্ছে। দূর থেকে জঙ্গলটিকে দেখে মনে হবে হাওর যেন পানির উপর ভাসছে। 

হাওরের এই জলাবনে রয়েছে হিজল, কড়চ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, চাইল্লা, নল নামের অসংখ্য গাছ। এ বন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশজুড়ে আলোচনায় আসে। দেশের দ্বিতীয় সোয়াম্প ফরেস্ট হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

হবিগঞ্জ থেকে ১২ মাইল দূরে বানিয়াচং উপজেলা সদরের আদর্শ বাজার নৌকাঘাট থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে হাওরের মধ্যে এ জলাবন। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী জঙ্গলের পূর্বে গঙ্গাজল হাওর ও নূরপুর, পশ্চিমে নলাই নদী, উত্তরে খরতি নদী এবং দক্ষিণে লোহাচূড়া নদী ও শোলাটেকা গ্রাম।

জলাবন দেখতে বর্ষাকালে নৌকা আর শরৎকালে মোটর সাইকেল, ট্রলিসহ হালকা যানবাহনে কিংবা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বর্ষাকালে কয়েকমাস বনের গাছপালা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। কিন্তু গাছের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বনের ভেতর বেশ কয়েকটি খাল ও বিল রয়েছে। এগুলোর স্বচ্ছ পানিতে জঙ্গলের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। শরৎকালে পানি শুকিয়ে গেলেও বনের ভিতরে থাকা ছোট বড় ৩০টি বিলে পানি জমে থাকে। বিলগুলোতে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যায়।

এই জলাবনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও জীবজন্তু। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেছোবিড়াল, শিয়াল, গুই সাপ, কেউটে সাপ, লাড্ডুকা, দারাইশসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের বক, পানকৌড়ি, ডাহুক, কুড়া, বালিহাঁস দেখা গেলেও শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় নির্জন এই জলাবন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের জেলা পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন- ‘লক্ষ্মী বাউরের’ কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে বনবিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবগত হয়েছেন। কিছু দিনের ভেতরে এ স্থানটি পরিদর্শন করে সোয়াম্প ফরেস্ট তৈরির জন্য প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 

তিনি আরো বলেন, জেলার একদিকে হাওর ও অপরপ্রান্তে পাহাড়। পাহাড়কে কেন্দ্র করে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গায় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। এসবস্থানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছেন। হাওরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে দর্শনার্থীরা ভ্রমণে আরো তৃপ্তি পাবে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হবিগঞ্জে হাওরে ‘লক্ষ্মী বাউর’ রয়েছে। বর্ষায় এখানে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি হচ্ছে। কারণ এ স্থানটিতে রয়েছে ছোট বড় অনেক বিল।’ 

লেখক ও বন গবেষক আহমদ আলী বলেন, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট দর্শনার্থীদের কাছে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই ফরেস্ট নিয়ে তিনি বই লিখেছেন বন ও বনায়ণ। তিনি চান রাতারগুলের ন্যায় হবিগঞ্জের ‘লক্ষ্মী বাউরও’ দেশের দ্বিতীয় সোয়াম্প ফরেস্ট তৈরি হোক।

কিভাবে যাবেন: রাজধানীর মহাখালী অথবা সায়েদাবাদ থেকে বাস অথবা ট্রেনে হবিগঞ্জে যাওয়া যায়। সেখান থেকে সিএনজিতে বানিয়াচং যেতে হবে। পরে বানিয়াচং থেকে নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যাবে ‘লক্ষ্মী বাউরে’।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়