ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে নতুন তথ্য

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে নতুন তথ্য

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে নতুন তথ্য দিলেন বিশেষজ্ঞরা। এত দিন বলা হচ্ছিল, উপসর্গ না থাকলে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। কিন্তু চীনা গবেষকরা এবার নিশ্চিত হয়েছেন যে, উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। উহানের ২০ বছর বয়সি এক নারী থেকে তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, কিন্তু তিনি তখনো শারীরিকভাবে অসুস্থ হননি।

এই কেস স্টাডিটি একটি শক্তিশালী প্রমাণ যে, উপসর্গবিহীন ব্যক্তি থেকেও অন্যদের মাঝে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। এই বিষয়টি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থামানোকে আরো কঠিন করে তুলেছে। ইতোমধ্যে এই ভাইরাসটি চীনের বাইরে কিছু দেশেও উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে, যেমন- দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে যথাক্রমে ৭, ৫ ও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ২ হাজার ৬১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৮০ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছে।

এই কেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলেছেন, ২০ বছর বয়সি চীনা নারীটিকে পরিবার থেকে আলাদা করে আন্যাংয়ের ফিফথ পিপল’স হসপিটালে ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হননি, কিন্তু তারপরও তার পরিবারের সদস্যদের জ্বর এসেছিল। তাদের মধ্যে দুজনের তীব্র নিউমোনিয়া হয়েছিল।

সাধারণ মানুষের কাছে এটা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে যে, উপসর্গ বা অসুস্থতা ছাড়াও ভাইরাস ছড়ায়। কিন্তু গবেষকদের কাছে এটা প্রত্যাশিত, কারণ এর আগে তারা উপসর্গ দেখা যায়নি এমন লোকের ভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ রেজাল্ট পেয়েছেন।

চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা ৮ ডিসেম্বর থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনাভাইরাস বিষয়ক চীনের সকল রিপোর্টড কেস বিশ্লেষণ করেছেন। দেখা গেল যে, ১.২ শতাংশ সংক্রমিত রোগীর উপসর্গ দেখা যায়নি।

উচ্চ সংখ্যক উপসর্গবিহীন কেস পাওয়া গেছে ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরীতে। প্রমোদতরীটিতে ৬২১ জনের মধ্যে ৩২২ জনের টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট এসেছিল, কিন্তু তাদের কোনো উপসর্গ ছিল না।

২০ বছর বয়সি চীনা নারীটি ১০ জানুয়ারি উহান থেকে আন্যাংয়ে বেড়াতে এসেছিলেন। তিনদিন পর তিনি পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে একজন রোগীকে দেখতে আন্যাং ডিসট্রিক্ট হসপিটালে যান।

১৭ জানুয়ারি নারীটির পরিবারের এক সদস্যের জ্বর আসে ও গলাব্যথা হয়। পরের সপ্তাহে অন্য চার সদস্যেরও জ্বর আসে ও শ্বাসতন্ত্রীয় উপসর্গ দেখা দেয়। তাদেরকে ২৬ জানুয়ারি ফিফথ পিপল’স হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল।

চিকিৎসকেরা চীনা নারীটিকে যখন করোনাভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করেন, তখন রেজাল্ট এসেছিল নেগেটিভ। তার সিটি স্ক্যানও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু একদিন পর করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে, কিন্তু তার কোনো উপসর্গ ছিল না। ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ পর্যন্ত নারীটির জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা অথবা পেটের পীড়া ছিল না।

চিকিৎসকেরা জানান যে চীনা নারীটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ছিল ১৯ দিন। শরীরে ভাইরাসের প্রবেশ থেকে উপসর্গ প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে।

পূর্বে চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন যে করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড হচ্ছে ১ থেকে ১৪ দিন, কিন্তু এই কেসটি তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। এই কেসের আলোকে গবেষকদের নতুন ধারণা হচ্ছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ২৪ দিন বা আরো বেশি হতে পারে। সম্ভবত যে মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হবে, ইনকিউবেশন পিরিয়ডও তত দীর্ঘায়িত হবে।

তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ