ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শিশুর আমবাত হলে কী করবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৯:৪০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
শিশুর আমবাত হলে কী করবেন

শরীরের একটি পরিচিত অ্যালার্জি জনিত রোগ হচ্ছে আমবাত। মেডিক্যালের পরিভাষায় এটাকে আর্টিকেরিয়া বলা হয়। আমবাতের ক্ষেত্রে শরীরে হঠাৎ করে চুলকানি শুরু হয়ে বিভিন্ন মাপের ও আকৃতির চাকা ওঠে। চাকাগুলো ছোট থেকে বড় গোলাকৃতির অথবা অসমাকৃতির হতে পারে। এগুলো শরীরের নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা সারা শরীরে ওঠতে পারে।সাধারণত একদিনের মধ্যে চাকাগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়।কখনো কখনো এগুলো মিলিয়ে যেতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি লাগতে পারে।

অ্যালার্জির আক্রমণ বেশি হলে চুলকানির সঙ্গে মাথাব্যথা, বমিভাব/বমি ও পেটে ব্যথা করতে পারে। এসময় শিশুদের জ্বরও থাকতে পারে। আমবাত থেকে অ্যানজিওএডিমা হতে পারে। অ্যানজিওএডিমার ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে ফুলে যায়, পৃষ্ঠে নয়। ত্বকের বিভিন্ন অংশে গভীর ফোলা দেখে এটা চিহ্নিত করা যায়, যেমন- চোখের চারপাশ, গোপনাঙ্গ, হাত ও পা।অ্যানজিওএডিমার স্থায়িত্ব আমবাতের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এর বিস্তার ঠোঁট বা জিহ্বায় হলে শ্বাসক্রিয়া কঠিন হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘনিয়ে আসতে পারে। এ অবস্থায় জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।

সাধারণত আমবাত ওঠলে মেডিক্যাল চিকিৎসার দরকার হয় না, এমনিতেই সেরে ওঠে। কিন্তু শিশুর গলা বা মুখমণ্ডলে গভীর ফোলা দেখলে অথবা শ্বাস নিতে সমস্যা হলে আর দেরি না করে মেডিক্যাল সেবার জন্য নিয়ে যেতে হবে। এটা তীব্র অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের লক্ষণ হতে পারে, যেক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। শিশুর মৃদু থেকে মধ্যম মাত্রার আমবাত ওঠলে তাকে স্বস্তি দিতে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ঠান্ডা সেঁক দিন: ত্বকে ঠান্ডা প্রয়োগ করলে শিশু আরাম পাবে ও চুলকানির প্রবণতা কমবে। একটি তোয়ালেতে বরফ নিয়ে আমবাতের ওপর কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, ১০ মিনিটের বেশি নয়। প্রয়োজনানুসারে রিপিট করুন।

চুলকানিনাশক দ্রবণ ব্যবহার করুন: শিশুকে আমবাতের চুলকানি থেকে স্বস্তি দিতে কিছু প্রোডাক্টের বাথ ব্যবহার করা যেতে পারে। পানিতে কলোইডাল ওটমিল অথবা অল্প বেকিং সোডা মিশিয়ে গোসল করাতে পারেন।

তাপ থেকে দূরে রাখুন: তাপমাত্রার বৃদ্ধি আমবাতের চুলকানি বাড়াতে পারে। শিশুকে সরাসরি সূর্যের আলোতে নিয়ে যাবেন না। ঘরের তাপমাত্রাকে শীতল ও আরামদায়ক রাখুন। হালকা পোশাক পরান।
ত্বককে উক্ত্যক্তকারী প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন: কিছু সাবান ত্বককে শুষ্ক করে আমবাতের চুলকানি বাড়াতে পারে। একারণে এসময় সংবেদনশীল ত্বকের সাবান, ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। সাধারণত সংবেদনশীল ত্বকের প্রোডাক্টে সুগন্ধি ও অন্যান্য উক্ত্যক্তকারী কেমিক্যাল থাকে না। গোসলের পরপরই ময়েশ্চারাইজার বা লোশন প্রয়োগ করলে চুলকানি প্রশমিত হতে পারে।

অ্যালোভেরা জেল লাগান: প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক টোটকা হিসেবে শিশুর ত্বকে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি সরাসরি আমবাতের ওপর প্রয়োগ করলে ব্যথা, লালতা ও ফোলা কমবে। কিন্তু শিশুর ত্বক অ্যালোভেরা জেলের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা জানতে আমবাত ওঠেনি এমন স্থানে একটু করে লাগিয়ে দেখুন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখলে এই জেল ব্যবহার করবেন না।

নখ ছোট করে দিন: আমবাতকে চুলকালে আরো ছড়াবে, এমনকি রক্তক্ষরণও হতে পারে। তাই শিশুর নখ বড় থাকলে কেটে ছোট করে দিন। এর ফলে চুলকালেও আমবাতের বিস্তার সীমিত থাকবে।

গ্রিন টি পান করান: গ্রিন টি;র যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- এতে অ্যান্টিহিস্টামিন ও প্রদাহ প্রশমক উপাদান রয়েছে, যা আমবাতের ভালো চিকিৎসা হতে পারে। আমবাত ওঠলে শিশুকে দৈনিক ২-৩ বার গ্রিন টি পান করাতে পারেন অথবা আরো দ্রুত আরামের জন্য ভেজা টি ব্যাগ সরাসরি আমবাতের ওপর রাখতে পারেন।

কিছু খাবার বাদ দিন: শিশুর শরীরে আমবাত দেখা গেলে সেরে না ওঠা পর্যন্ত কিছু খাবার খাওয়াবেন না। গরুর গোশত, দুধ, ডিম, মাছ, বেগুন, কুমড়া, কচু, কচুর লতি, আলু, গম ও বাদাম আমবাতের বিস্তার বাড়াতে পারে।

ওটিসি অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়ান: আমবাতের সর্বোত্তম প্রথম স্তরের চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিহিস্টামিন। এসব ওষুধ শরীরে হিস্টামিন রেসপন্সকে দমন করে আমবাতের উপসর্গ প্রশমিত করতে পারে। শিশুর বয়সানুসারে কোন অ্যান্টিহিস্টামিন সবচেয়ে ভালো হবে ও ডোজ কেমন হবে তা জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা ভালো।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ