ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রাথমিক চিকিৎসায় মারাত্মক যত ভুল (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:২১, ২৬ জানুয়ারি ২০২১
প্রাথমিক চিকিৎসায় মারাত্মক যত ভুল (শেষ পর্ব)

কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিঃসন্দেহে মারাত্মক পরিণতি প্রতিরোধে অবদান রাখে। এক্ষেত্রে একটি প্রধান শর্ত হলো, সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা। কারণ প্রাথমিক চিকিৎসায় ভুল করলে সমস্যা না কমে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে অথবা জীবন সংশয়ে পড়তে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি এড়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে কিছু ভুল প্রাথমিক চিকিৎসার সংশোধনী দেয়া হলো।

* মচকানো স্থানে গরম সেঁক দেয়া: ভুলেও মচকানো স্থানে গরম সেঁক দিতে যাবেন না। এ প্রসঙ্গে আর্জেন্ট কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র উইলিয়াম গ্লুকম্যান বলেন, ‘শরীরের কোথাও মচকে গেলে অথবা ফ্র্যাকচার হলে সেখানে গরম সেঁক দিলে প্রদাহ বেড়ে যাবে। তাপ রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে আরো ফুলিয়ে তুলবে। তবে ব্যাক স্পাজমের মতো মাংসপেশির অনৈচ্ছিক সংকোচনে গরম সেঁক দিতে পারেন। মচকানি বা ফ্র্যাকচারে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন।’

* আহত চোখ থেকে ময়লা বের করা: চোখে কোনো ময়লা পড়লে অথবা গেঁথে গেলে তা নিজে নিজে অপসারণের চেষ্টা করা উচিত নয়। কারণ এতে চোখে বড় ক্ষত হতে পারে অথবা স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এমনকি অন্ধত্বেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাই চোখে কোনো ময়লা পড়লে ওটা বের করে আনতে চিকিৎসকের কাছে চলে যান। কেমিক্যালের ক্ষেত্রে এক মুহূর্তও দেরি না করে নিজে নিজেই প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে, অন্যথায় অন্ধত্বের মতো পরিণতি আসতে পারে। চোখে কেমিক্যাল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে কাজটি করুন। এরপর চিকিৎসককে দেখান।

* রক্তক্ষরণের স্থান থেকে গজ তুলে ফেলা: ক্ষতস্থানে যে গজ বা প্যাড লাগানো হয় তা রক্তে ভিজে গেলে তা তুলে ফেলার জন্য মনের ভেতর সহজাত প্রবণতা কাজ করে। কিন্তু সেন্ট লুইসে অবস্থিত ক্রিস্টিয়ান হসপিটালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিসেসের প্রধান ক্রিস সেবোলেরো বলেন, ‘ক্ষতস্থানের প্যাড রক্তে ভিজে গেলেও তা অপসারণ করে নতুন আরেকটি লাগানো উচিত নয়। কারণ রক্তপড়া বন্ধ করতে ক্লটিং ফ্যাক্টরের (রক্তকে জমাটবদ্ধ করার প্রোটিন) কাজ শুরু হয়। পুরোনো গজ তুলে ফেললে ওগুলো দূর হয়ে যায়। যার ফলে রক্তক্ষরণের মাত্রা বেড়ে যায় অথবা আবারও রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।’ কোথাও কেটে গেলে ক্ষতস্থানে পরিষ্কার গজ লাগিয়ে নিন। গজটি নিজে নিজে ওঠে আসলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চেপে ধরুন। তারপর সংক্রমণ প্রতিরোধে ক্ষতস্থানটিকে পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে পুনরায় ব্যান্ডেজ বেধে দিন।

* গাড়ি দুর্ঘটনার পর মেডিক্যালের সেবা না নেয়া: গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হবার পর আঘাত পেলেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার অনুভূতি নাও হতে পারে। ডা. সেবোলেরোর মতে এর কারণ হলো, মানুষের অ্যাড্রিনালিন চালিত ফাইট-অর-ফ্লাইট রেসপন্স ব্যথাকে সাময়িকের জন্য অনুভূতিহীন করে রাখে। তিনি আরো জানান, ‘গাড়ি দুর্ঘটনার পর ব্যথা অনুভব করতে দশ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লাগতে পারে।’ সাহায্য করতে আসা জরুরি বিভাগের লোকেরা দুর্ঘটনাস্থলেই মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ অথবা হাড়ের ভাঙন অবধারিতভাবে শনাক্ত করতে পারেন না। তাই কখনো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে (সৃষ্টিকর্তা না করুক) সঙ্গে সঙ্গে ওঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন না, যদি অন্যকোনো বিপদের আশঙ্কা না থাকে। আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলুন।

* ভেঙে যাওয়া দাঁতকে পরিষ্কার করা: আঘাতজনিত কারণে দাঁত ভেঙে গেলে, সে ক্ষেত্রে দাঁতের ভাঙা অংশ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে আগের জায়গায় বিশেষ পদ্ধতিতে লাগিয়ে দেওয়া যায়। দাঁত ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর ভাঙা অংশসহ দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার মনে হতে পারে যে, এটাকে পরিষ্কার করে নিয়ে যাওয়াই ভালো। কিন্তু ডা. স্যাম্পসনের মতে, ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ভেঙে যাওয়া দাঁতকে পরিষ্কার করলে এটাতে আরো ড্যামেজ হতে পারে।’ এর পরিবর্তে দাঁতটিকে এক কাপ দুধে রাখুন এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যান।

* পোকাকে রেখে দেয়া: কেউ কেউ পোকায় কামড়ে ধরলে সেটাকে চিকিৎসককে দেখানোর জন্য ওই অবস্থায় রেখে দেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এমনটা না করতে পরামর্শ দিয়েছে। শরীর থেকে পোকাকে দ্রুত তুলে ফেলতে হবে। আপনি কামড়ে ধরা পোকাকে যত তাড়াতাড়ি অপসারণ করবেন, শরীরে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের ঝুঁকি তত কমে যাবে। পোকাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে না ফেললে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হবে। একটা টুইজার দিয়ে পোকাটিকে ধরে সোজাসুজি টান দিয়ে তুলে ফেলুন। পোকাটিকে অপসারণ করতে ম্যাচ বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করবেন না। কামড়ের স্থান পরীক্ষা অথবা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যত দ্রুত চিকিৎসা করবেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তত কমে যাবে।

পড়ুন: প্রাথমিক চিকিৎসায় মারাত্মক যত ভুল (১ম পর্ব)

 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়