ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রিকারসর কেমিক‌্যাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা

জুনায়েদ শিশির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:৪৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২১
প্রিকারসর কেমিক‌্যাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা

শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বাংলাদেশে প্রিকারসর কেমিক্যালের বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র বা লাইসেন্স নেই বলে দাবি করছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (আইএনসিবি)। এজন্য চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। কারণ, ১৯৮৮ সালের এ সংক্রান্ত তফসিলে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এজন্য প্রতিবছর এ ধরনে রাসায়নিক দ্রব‌্য আমদানি ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হয়।

সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, মিস ডিক্লারেশন বা মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে প্রিকারসর কেমিক্যাল আমদানি করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে না পারলে আইএনসিবি বাংলাদেশে প্রিকারসর সংশ্লিষ্ট ৩০টি কেমিক্যাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। সম্প্রতি অধিদপ্তর থেকে জরুরি চিঠিতে প্রিকারসর আমদানি, ব্যবহার ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাত-আট বছর ধরেই কেমিক্যাল আমদানিতে নজরদারি বাড়িয়েছে সরকার। সেজন্য মিস ডিক্লারেশনের মাধ্যমে আমদানি করা সম্ভব নয়। তবে বৈধভাবে এনেও অনেকে এর ভিন্ন ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নজরদারি জরুরি।

সচেতন মহল মনে করে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ভালোভাবে নিতে পারছে না বিরোধী পক্ষ। এ অগ্রযাত্রায় বাধা তৈরি করতেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বিদেশিদের উস্কানি দিচ্ছে তারা।

জানা গেছ, বাংলাদেশে গার্মেন্টস, প্যাকেজিং, কালি, ওষুধ, ভ্যাটেরিনারি-পোল্ট্রি-ফিশারিজ ওষুধ, রাবার ও জুতা তৈরিতে ও মুদ্রণ শিল্পে ব‌্যবহার করা হয় প্রিকারসর কেমিক্যাল। নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সংশ্লিষ্ট শিল্প ও এসব শিল্পের সহযোগী শিল্পে সমস্যা হবে। যা পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে চরম জটিলতা তৈরি করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ‌্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ‌্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ ধরনের কেমিক‌্যাল সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। কারা এগুলো আমদানি করে, সে সম্পর্কে বলতে পারছি না।’

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বেপজা কর্তৃপক্ষ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিঠি পেয়েছে। চিঠিতে যে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে বেপজার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। কারণ, ইপিজেডে এলাকায় যারা ব্যবসা করেন, তাদের যথাযথ লাইসেন্স আছে বলেই তারা বাণিজ্যিক কার্যক্রম করতে পারছেন। অবৈধ বা কৃর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ইপিজেড এলাকায় কারও ব্যবসা করার সুযোগ নাই। তারপরও তারা (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) আমাদের অবহিত করেছেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবসায়ী ও অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে বেপজা।’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেছেন, ‘প্রিকারসর আমদানি বন্ধ হলে শিল্পের ক্ষতি হবে, এটা স্বাভাবিক। যারা এসব ব্যবহার করছেন, তারা সরকারের নিয়ম মেনেই করছেন। এখন দেখার বিষয়, কারা এর অপব্যবহার করছেন। সেক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করলেই সমস‌্যার সমাধান হবে আশা করছি। কারণ, একই গ্রুপে অনেক ধরনের কেমিক্যাল আছে, তার বহুমুখী ব্যবহার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে শিল্প সুরক্ষার জন্য।’

এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সুরক্ষা সেবা বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার প্রিকারসর সংক্রান্ত চিঠিতে বলেছেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে প্রিকারসর কেমিক্যাল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আওতায় আনা সম্ভব না হলে আইএনসিবি কর্তৃক বাংলাদেশে উক্ত কেমিক্যাল আমদানি করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আশঙ্কা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রিকারসর কেমিক্যাল ব্যবহারকারী সব প্রতিষ্ঠানকে জরুরি ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাইসেন্স গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার যেসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া প্রিকারসর কেমিক্যাল ব্যবহার করছে, তাদের জরুরি ভিত্তিতে লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরামর্শ প্রদানের জন্য বিশেষভাব অনুরোধ করা হলো।’

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর লাইসেন্স দিতে সহযোগিতা করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

যেসব কেমিক্যাল প্রিকারসর:
এসিটিক অ‌্যানহাইড্রাইড, এন-অ‌্যাসিটাইল এনথ্রানিলিক এসিড, এফিড্রিন, এরগ্রোমেট্রিন, এরগ্রোটামিন, আইসোস্যাফরোল, লাইসারজিক এসিড, মিথঅইলনডাই ওক্সিফিনাইল-২ প্রোপানন, নরএফিড্রিন, ১-ফিনাইল-২ প্রোপানন (পি-২-পি), পিপারোনাল, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট, সিউডো এপিড্রিন, স্যাফরোল, এসিটোন, এনথ্রানিলিক এসিড, ইথাইল ইথার, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, মিথাইল ইথাইল কিটোন, ফিনাইলএসিটিকএসিড, পিপারডিন, সালফিউরিক এসিড, টলুইন, আপান (আলফা-ফিনাইলএসিটোএসিটোনিট্রাইল), এএনপিপি(৪-এ্যানিলিনো-এনফেনইথাইল পাইপিরিডিন), এনপিপি (এন-ফেনইথাইল-৪ পাইপেরিডোন)। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আইএনসিবি নতুন চারটি রাসায়নিককে প্রিকারসর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে—৩,৪-এমডিপি-২-পি মিথাইল গ্লাইসিডেট (পিএমকে গ্লাইসিডেট), ৩-৪ এমডিপি-২-পিমিথাইল গ্লাইসিডিক এসিড, আলফা-ফিনাইল এসিটোএসিটামাইড (এপিএএ) এবং মিথাইল আলফা-ফিনাইলএসিটেড (এমএপিএ)।

ঢাকা/শিশির/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়