ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২৮ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৪:১৫, ২৮ এপ্রিল ২০২১
৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা

ফাইল ছবি

লকডাউনের কারণে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে।  তবে প্রবাসী কর্মীদের বিষয়টি বিবেচনা করে কয়েকটি দেশে বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে এসব ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে নির্দিষ্ট দেশে যাওয়া যায়, বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি নেই। রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিকদের চাহিদা এবং বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া প্রবাসীদের দেশে ফেরার লক্ষ্যে ৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক রুটে সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

জানা গেছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত নিজ দেশে যেতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করেছেন। যেহেতু বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেখভাল করে, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেবিচকের সাথে আলাপ করছে। আবার কয়েকটি দেশের দূতাবাসের কর্মীরা বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ফ্লাইটের আপডেট জানতে চেয়েছেন। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় বর্ধিত লকডাউন শেষে যে কোনো একটি প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে করোনায় আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা দেশে ফিরতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করছেন। দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসব তথ্য এসেছে বলেও জানা গেছে।

জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকায় নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।  কিছু পরামর্শও এসেছে।  তাই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বর্তমানে বিশেষ ফ্লাইট চালু থাকলেও সেটি কয়েকটি দেশের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এসব ফ্লাইটে বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া যায়, প্রবেশ করা যায় না।

লকডাউন বাড়ানোয় নতুন করে দেশের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে বেবিচক। গত ১৪ এপ্রিল থেকে চলা বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বেড়ে ৫ মে পর্যন্ত কার্যকর হবে। এই এক সপ্তাহ কীভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে বেবিচক। তবে এই সময়ে দেশের শ্রমবাজারের কথা বিবেচনায় রেখে আগের মতোই সাতটি দেশে বিশেষ ব্যবস্থায় ফ্লাইট চলবে।

বর্তমানে চলমান লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার (২৮ এপ্রিল)। বিধিনিষেধ শেষে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে প্রায় স্বাভাবিকভাবে আন্তর্জাতিক রুটে সিডিউল ফ্লাইট শুরু করার বিষয়ে পরিকল্পনা করছিল বেবিচক। যেসব দেশে করোনার প্রকোপ বেশি, ওসব দেশকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রেখে অন্যসব দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে আগ্রহী ছিল বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে এবং চলতি সপ্তাহে কয়েক দফা বৈঠক হয়।  কোন কোন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল করবে না সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। কিন্তু লকডাউন বাড়ানোয় সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। এবার ৫ মে লকডাউন শেষে হলে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক রুটে সিডিউল ফ্লাইট শুরুর, কিংবা বিশেষ ফ্লাইটের।  সেক্ষেত্রে এবার বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি দেওয়া হলেও তা যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে- এমন বিষয় ভাবা হচ্ছে।

নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে লকডাউনের মেয়াদ। সেই সাথে বাড়ানো হয়েছে ফ্লাইট চলাচলের নিষেধাজ্ঞাও। বর্তমানে শুধুমাত্র বিশেষ ট্রানজিট ফ্লাইট, কার্গো ফ্লাইট, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং কক্সবাজার বাদে সব অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু রয়েছে। আর বিশেষ ফ্লাইটের মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহারাইন, কুয়েত, চীন, কাতার ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।

এদিকে, করোনা নেগেটিভ সনদসহ বিদেশ থেকে দেশে আসা যাত্রীদের জন্য বেশকিছু বিধি-নিষেধ জারি করেছে বেবিচক। বাইরের দেশ থেকে এলে প্রত্যেক যাত্রীকে এ বিষয়গুলো অবশ্যই মানতে হবে।

প্রথমত, প্লেনে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। পিসিআরভিত্তিক পরীক্ষাটি ফ্লাইট ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা হবে।  দ্বিতীয়ত, আগত যাত্রীরা যারা এর মধ্যে করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন তারা টিকা দেওয়ার প্রমাণপত্রসহ পিসিআরভিত্তিক করোনা নেগেটিভের সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখবেন। তাদেরও ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করবে। তৃতীয়ত, আগত যাত্রীরা যারা পিসিআরভিত্তিক করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট ও করোনার প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছেন (টিকা দেওয়ার প্রমাণপত্রসহ) এবং যারা এখনো ভ্যাকসিন নেননি তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকার মনোনীত সুবিধাসহ হোটেল বা যাত্রীর নিজ খরচে ৩ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।  কোয়ারেন্টিন শেষে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। রিপোর্ট যদি নেগেটিভ আসে তবে ১১ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আর রিপোর্ট পজিটিভ এলে সরকার মনোনীত সুবিধার আওতায় নিজ খরচে আইসোলেশনে থাকতে হবে। চতুর্থত, সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস যাত্রীদের বোর্ডিং পাস দেবে কিছু শর্তসাপেক্ষে। ক. দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রমাণ থাকতে হবে।  খ. যারা ভ্যাকসিন নেননি তাদের সরকারি ব্যবস্থায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার অথবা নিজ উদ্যোগে যে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকবে তার বুকিং থাকতে হবে। সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আসন না পাওয়া গেলে হোটেল রিজার্ভেশনের বিষয়টি নিশ্চিত করার পরেই যাত্রীকে প্লেনে উঠতে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে বিধি-নিষেধ আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। দেশে গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বেড়ে ৫ মে পর্যন্ত কার্যকর হবে৷

হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়