ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনায় কেন বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণ, সমাধান কী

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২০:২৫, ২৬ জুলাই ২০২১
করোনায় কেন বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণ, সমাধান কী

ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড মিটারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৬ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ও সংক্রমণ কমেছে। এ সময় মারা গেছেন আরও ৬ হাজার ৮৫৯ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮০ জন।

অথচ, বাংলাদেশের চিত্র একদম উল্টো। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪৭ জন। অক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ১৯২ জন। দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের (৮ মার্চ, ২০২০) পর থেকে আজ (২৬ জুলাই) পর্যন্ত মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যায় এক দিনের হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ।

সরকারিভাবে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন দেওয়া, গণপরিবহন বন্ধ রাখা, বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে জরিমানা করাসহ বিভিন্নভাবে মানুষকে সচেতন করার পরও কোনোভাবেই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত। দিন দিন কেন বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা? এই ব্যাপারে কী পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা?

মিরপুর এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ফরহাদ মনজুর বলেন, 'ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সারা দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শরীরের ইমিউন সিস্টেমের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারছে না। ভাগ্য সব সময় আমাদের পক্ষে কাজ নাও করতে পারে। সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে নতুন কোনো পরামর্শ নেই। টিকা নেওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

ল্যাবএইড হাসপাতালের অধ্যাপক মনজুর রহমান বলেন, 'মানুষজন গত দুই ঈদে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাড়িতে গেছে এবং ফিরে এসেছে, তার খেসারত এখন গোটা জাতিকে দিতে হচ্ছে। সবাইকে মুভমেন্ট কমাতে হবে। যারা টিকা নিয়েছেন, যারা নেননি- সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। লকডাউন মেনে বাসায় থাকতে হবে।’

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার বলেন, 'ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ধনী-গরিব কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। শহরের মানুষরা গ্রামে যাওয়ায় গ্রামের মানুষদের মাঝেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে পারলে মৃত্যুও কমানো যাবে। তাই, যে যেখানে আছেন, তাকে সেখানেই থাকতে হবে। কোনোভাবে বাইরে বের হওয়া যাবে না। একান্তই বের হতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। প্রয়োজনে লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ঈদের সময় বিধিনিষেধ শিথিলের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, সেটাই সত্যি হলো। সংক্রমণ ও মৃত্যু সারা দেশে বাড়ছে। তাই, সবার প্রতি অনুরোধ, আতঙ্কিত না হয়ে সরকার যে নির্দেশনা দেয়, সবাইকে সেটা মানতে হবে। এজন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রতি নজর দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

রোবেদ আমিন বলেন, ‘সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে দেওয়া লকডাউনে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অসুবিধার সৃষ্টি করলেও এ মুহূর্তে এর কোনো বিকল্প নেই। ক্রমবর্ধমান করোনায় মৃত্যু কমিয়ে আনার ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এই মুহূতে অন্য
কোনো বিকল্প নেই।’

উল্লেখ্য, করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৬২ জনের।

আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১৪ লাখ ৯ হাজার ৬৩৯ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৯৬ জনের।

করোনা আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৯ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ লাখ ৬ হাজার ৫৪১ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৭৪ জন।

এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৯ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৬২ জন।

আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, তুরস্ক সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, কলম্বিয়া নবম ও ইতালি দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম।

ঢাকা/এমএম/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়