ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গাড়লে ভাগ্যবদল

তানজিমুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাড়লে ভাগ্যবদল

মাঠে গাড়ল চরাচ্ছেন মতিবুর রহমান (ছবি : তানজিমুল হক)

তানজিমুল হক, রাজশাহী : প্রায় দুই যুগ আগের কথা। মতিবুর রহমান তখন দিনমজুর। অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে সংসার চালান। সে সময় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের জনৈক ব্যক্তি ভারত থেকে দুই জোড়া গাড়ল আনেন এ দেশে।

গাড়লগুলো আকৃষ্ট করে মতিবুরকে। তিন গুণ দাম দিয়ে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে এক জোড়া গাড়ল সংগ্রহ করেন মতিবুর রহমান। এর পর থেকে গাড়ল পালনই তার পেশা। গাড়ল পালন করে মতিবুর রহমান কিনেছেন ১৬ বিঘা আবাদি জমি। এখন তিনি সচ্ছল।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শিয়াল বাবনপুকুর গ্রামের মতিবুর রহমান এখন ৭০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু দুই যুগ আগের মতোই তিনি এখনো মাঠে যান গাড়ল চরাতে। ভেড়ার উন্নত জাতটিই গাড়ল।

হুবহু ভেড়ার মতো দেখতে হলেও গাড়ল ও ভেড়ার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। গাড়লের লেজ ও কান ভেড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বড়। আকারেও বড় গাড়ল। পূর্ণবয়স্ক একটি ভেড়া থেকে ১৭ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক একটি গাড়লের ৩০ থেকে ৪০ কেজি মাংস হয়। আর যেকোনো প্রাণীর মাংস অপেক্ষা গাড়লের মাংসের স্বাদও ভালো। তবে দাম চড়া। প্রতি কেজি ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা।

 

বর্তমানে মতিবুর রহমানের বাড়িতে ৪০টি গাড়ল আছে। রোববার সকালে গৌরাঙ্গবাড়ী মন্দিরের পেছনে গাড়ল চরাচ্ছিলের মতিবুর রহমান ও তার নাতি আহামত আলী। মতিবুরের সঙ্গে কথা হয় সেখানেই।

 

মতিবুর জানান, গোদাগাড়ীর পথে-ঘাটে বা রাস্তার পাশে হরহামেশাই ভেড়া পালন চোখে পড়লেও গাড়ল তেমন চোখে পড়ে না। দুই যুগ আগে সীমান্তবর্তী এলাকা গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ গ্রামের এক ব্যক্তি ভারত থেকে দুই জোড়া গাড়ল কিনে আনেন।

 

সেখান থেকে তিন গুণ দাম দিয়ে তিনি এক জোড়া গাড়ল সংগ্রহ করেন। অল্প দিনেই সফলতা পান মতিবুর। বর্তমানে তার বাড়িতে ২৭টি গাড়ল ও ১৫টি উন্নত জাতের ভেড়া রয়েছে। এই ১৫টি ভেড়া আবার ভারতীয় গাড়লের সঙ্গে দেশি জাতের ভেড়ার সংকরায়ন (ক্রস) করে উৎপাদিত।

 

মতিবুর রহমান বলছিলেন, গাড়ল পালনই তার প্রধান পেশা। মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন আগে সর্বনিম্ন ৮ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দরে প্রায় দুই লাখ টাকার ৪০টি গাড়ল বিক্রি করেছেন। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে আগেভাগেই এসব গাড়ল বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে আগাম টাকা দিয়েছিলেন কোরবানিতে গাড়ল নেওয়ার জন্য।

এ ছাড়া বাড়িতে পালনের জন্য অনেকে গাড়লের বাচ্চাও নিয়ে যান তার কাছ থেকে। আগাম টাকাও দিয়ে যান কেউ কেউ। ইতিমধ্যে তার উৎপাদিত গাড়ল পৌঁছেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। তবে গোদাগাড়ীতে বড় পরিসরে গাড়ল পালন করেন একমাত্র মতিবুর রহমানই।

মতিবুর রহমান বলেন, গাড়লের খাবার তালিকায় কোনো ‘না’ নেই। পালনপদ্ধতি ভেড়ার মতোই। মাঠে চরতেই বেশি পছন্দ গাড়লের। তবে চারণভূমি কমে গেলে বাড়িতেও পোষা যায় গাড়ল। সে সময় তাদের খৈল ও ভুসির সঙ্গে ছোট ছোট করে ধানের চারা (খড়) কেটে খাওয়ানো হয়।

 

মতিবুর রহমানের মতে, গাড়লের তেমন রোগবালাই নেই। তবে মৌসুম বুঝে বিভিন্ন রকম টিকা প্রয়োগ করলেই চলে। গাড়লের প্রজনন সম্পর্কে মতিবুর রহমান জানান, দেড় বছর বয়স হওয়ার পর একটি গাড়ল বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার দুটি থেকে চারটি পর্যন্ত। তবে বেশি হয় তিনটি বাচ্চা। এসব বাচ্চার বয়স তিন মাস হলেই তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। ছয় মাসের বাচ্চা বিক্রি হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। এক বছরের একটি পূর্ণবয়স্ক গাড়ল বিক্রি হয় আট থেকে দশ হাজার টাকায়।

মতিবুর রহমান আরো জানান, গোদাগাড়ীর বাজারে গাড়লের মাংস বিরল। তবে মাঝে মাঝে তিনি গাড়লের মাংস গ্রামে বিক্রি করেন। গাড়লের মাংসের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ খাসির থেকেও বেশি হওয়ায় মাংসও বিক্রি হয় বেশি দামে। প্রতি কেজি গাড়লের মাংসের দাম ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা। প্রায় ২৫ বছর ধরে গাড়ল পালন করে মতিবুর রহমান এখন ১৬ বিঘা জমির মালিক। তাকে দেখে এলাকায় অনেকেই গাড়ল পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই উপজেলায় গাড়ল পালনে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কবির হোসেন বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই অঞ্চলের আবহাওয়ার মিল থাকায় এখানেও গাড়ল পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। গাড়লের মাংস অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। গাড়ল পালন খুব লাভজনকও বটে।

 

এই দফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. কাওসার আলী বলেন, মেহেরপুরে ব্যাপক আকারে গাড়ল পালন করা হয়। সেখানে তিনি কর্মরত ছিলেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি গোটা উপজেলায় গাড়ল পালন ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

 

 


রাইজিংবিডি/রাজশাহী/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪/তানজিমুল/রণজিৎ/এএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়