ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিসিবিকে ক্রিকেটারদের ভয়ানক বাউন্সার

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ২১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিসিবিকে ক্রিকেটারদের ভয়ানক বাউন্সার

এমন ঘটনার জন্য মিরপুর শের-ই-বাংলা প্রস্তুত ছিল না! ক্রিকেটাররা এখানে উপস্থিত হন খেলার জন্য বা অনুশীলনের জন্য।  কখনো কখনো নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে আসেন অনেকে। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন, কথা বলবেন বোর্ডের নীতি এবং দেশের ক্রিকেট মান নিয়ে; এমনটা হয়নি কখনো।

সোমবার মিরপুরের স্টেডিয়াম অঙ্গন এমন ঘটনার সাক্ষী হল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যাদের ওপরে দাঁড়িয়ে তারা একজোট হয়ে বিদ্রোহ করল বোর্ডের বিরুদ্ধে! তাদেরই একজন সন্ধ্যায় রাইজিংবিডিকে বললেন,‘বোর্ড শেকল পরিয়ে ক্রিকেটারদের খেলাতে চাচ্ছে। এটা কি হয়? দেয়ালে পিঠ ঠেকায় আজ সবাই মুখ খুললো।’

এতোটা সুশৃঙ্খল, পরিপাটি ও গোছানো আয়োজন দেখে মনে হতে পারে দীর্ঘদিন ধরে এমন কিছুর পরিকল্পনা করে আসছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। নানান ইস্যুতে ক্রিকেটারদের চাপা ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সেটারই বিস্ফোরণ ঘটলো এবার।

জাতীয় লিগের শুরুর আগে থেকে ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন। তাদের আলোচনায় যোগ দেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এ আলোচনায় যোগ দেন সিপিএল খেলার সময়। নিজের অবস্থান পরিস্কার করে জানান দেশে ফিরেই বসবেন সবার সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হয়, লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের পর যেকোনো একদিন মিরপুরে হাজির হবেন সবাই।

কিন্তু সোমবারই যে একাডেমি মাঠে ক্রিকেটাররা সংবাদ সম্মেলনে আসবেন তা জানা ছিল না অনেকেরই। হুট করে সিদ্ধান্ত হয় আজই সবাই যাবেন মিরপুরে। কয়েক ঘন্টার নোটিশে প্রায় ৬০ ক্রিকেটার চলে আসেন মিরপুরের একাডেমি মাঠে। তাদের সবার প্রতিনিধি হয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়েছেন ১০ জন।

যে ১১ দাবী নিয়ে ক্রিকেটাররা কথা বলেছেন প্রায় সবকটি পুরোনো ইস্যু। বিপিএল, জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চু্ক্তি ও বেতন বাড়ানো, কোয়াবের কমিটি ভেঙে দেওয়া; এগুলো নিয়ে ক্রিকেটাররা বিভিন্ন সময় বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো সিনিয়ররা গিয়ে বসেছেন। আবার কখনো চা-চক্রেও আলোচনা করেছেন। কিন্তু বিসিবির শীর্ষ কর্তারা গুরুত্ব দেননি কখনোই!

‘কতোবার বলা যায়। এগুলো নিয়ে কথা বললে বলতে টায়ার্ড আমরাও।  তাই এবার সবাই মিলে একজোট হয়ে বিষয়টি জানালাম।’-বলছিলেন এক ক্রিকেটার। বিসিবির কাছে আনুষ্ঠানিক দাবি জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা।  বিসিবির দাবি না মানা পর্যন্ত মিরপুর শের-ই-বাংলায় গড়াবে কোনো বল।  হবে না ব্যাট-বলের ঠুকঠাক আওয়াজ।

যারা বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন তাদেরই কথা, এমন দিনটা দেখতে হতো না ক্রিকেট বোর্ডের যদি বোর্ড ক্রিকেটারদের কথা চিন্তা করতো একবার! নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রিকেটার বলেছেন,‘ঢাকার বাইরের একজন ক্রিকেটার কিভাবে নিজেকে ফিট রাখবে?  বোর্ড কি সেই ক্রিকেটারের জন্য নুন্যতম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  কেন ঢাকা কেন্দ্রিক হতে হবে সবকিছু।  আবার ঢাকাতেও তো সমস্যা। হয় জাতীয় দল অনুশীলনে থাকে, না হয় বিদেশী কোনো দল, নইলে বয়সভিত্তিক বা নারী ক্রিকেট দল।  জিম ব্যবহারের অনুমতি নিতে হলে কি করতে হয় তা তো কারোই অজানা নয়। বলেন তো ইনডোর ব্যবহার করতে দেওয়া হয় কিনা জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের? এগুলো নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে।’

সাকিব তার বক্তব্যে জানিয়েছেন, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটাররা ধর্মঘটের বাইরে। সামনে তাদের বিশ্বকাপ থাকায় তাদের বাইরে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নারী ক্রিকেটারা চাইলে নিজেদের সিদ্ধান্তে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন সাকিব।

‘দাবিগুলো যখন মানা হবে সেটা আলোচনা সাপেক্ষেই হবে। দাবিগুলো মানা হলে আমরা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অবশ্যই ফিরে যাব। আমরা সবাই চাই, ক্রিকেটের উন্নতি হোক। ’- সাকিব ফিনিশিং দিয়েছেন এভাবেই।

সামনেই জাতীয় দলের ভারত সফর। এর আগে ক্রিকেটাঙ্গানে অস্থিরতা। কোনো ইয়র্কার, স্লোয়ার, সুইং কিংবা গতি নয়। বিসিবিকে সাকিবরা দিলেন বাউন্সার। অবশ্য মিরপুরের উইকেটে বাউন্সার কমই দেখা যায়। যখন দেখা যায় সেটা হয় ভয়ানক বাউন্সার। 



ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ