ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নারীদের শ্রদ্ধা দেখায় একদিন, উত্ত্যক্ত করে ৩৬৪ দিন: মাবিয়া

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৮ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৮:২৭, ৮ মার্চ ২০২১
নারীদের শ্রদ্ধা দেখায় একদিন, উত্ত্যক্ত করে ৩৬৪ দিন: মাবিয়া

পুরস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি। ভিনদেশের মাটিতে মাইকে বাজছে, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’; পাশে উড়ছে জাতীয় পতাকা। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। স্যালুট দিয়ে গাল ভাসিয়েছেন চোখের জলে।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১৬ সালের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ) ভারোত্তলনে স্বর্ণপদক জিতেছেন। এরপর অশ্রু ভেজা চোখে জাতীয় পতাকাকে স্যালুট দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাঙালির হৃদয়ে। মাবিয়ার হাত ধরে ২০১৯ সালের এসএ গেমসেও স্বর্ণপদক জেতে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে প্রশ্ন আছে রেকর্ড গড়া মাবিয়ার। তার মতে একদিন নয়, বছরের ৩৬৫ দিনই নারী দিবস। মাবিয়ার সঙ্গে যখন মুঠোফোনে কথা হয়, তিনি কোথাও যেন যাচ্ছিলেন। চারদিকে গাড়ির হর্ন, হৈ-হুল্লোড়কে ছাপিয়ে তার কথা শোনা যাচ্ছিল খুব স্পষ্ট। কথাগুলো ছিল খুব তীক্ষ্ণ, ভারী।

অভিযোগের সুরে মাবিয়া বলেন, ‘নারী দিবস বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে একদিন হয়। একদিন শুধু নারী দিবস না। এই একটা দিন, আমাদের প্রতি সমতা দেখায়, অনেক শ্রদ্ধা দেখায়। তারপরে মেয়ে মানুষকে উত্যক্ত করে।’ নারীর উন্নতির জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমাজকেই পরিবর্তন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

‘সমাজের দেখার দৃষ্টি যদি ভালো হয়, সমাজ যদি ভালোভাবে গ্রহণ করে, তাহলে আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারবো। সমাজই সবচেয়ে বড় দায়ী একটা মানুষের ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য। সমাজ কী বলবে এটা সবাই চিন্তা করে। সমাজের কাছে আমি কীভাবে মুখ দেখাবো! সমাজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের চক্ষু দৃষ্টি পরিবর্তন করতে হবে‘-ঠিক এভাবেই বলছিলেন তিনি।

সমাজের চক্ষু দৃষ্টি উপেক্ষা করে মাবিয়া বিশ্বজয় করেছেন। ভারোত্তলনের মতো ভারী খেলা কেন বেছে নিয়েছেন? মাবিয়া জানালেন প্রত্যেকটা পেশাই কঠিন। তার মতে ঘরে-দোরে কোথাও নারী নিরাপদ না। মাবিয়া বলেন, ‘প্রত্যেকটা ক্ষেত্র মেয়ে মানুষের জন্য খুব কঠিন। মনে হয় আমরা ঘরে থাকলেই নিরাপদ থাকবো, সেইফ থাকবো। এখন তো ঘরে থাকাও অনিরাপদ। কারণ হচ্ছে ঘরে যে টর্চারিং হয় তার তো কোনও ঠিকই নাই। রিস্কের অবস্থায় আমরা যেভাবে বের হয়ে আসছি, এটা বলবো যে আমাদের ফ্যামিলির সাপোর্ট ছিল। এবং আমাদের মনোবল বেশি ছিল। তাই আমরা চলে আসছি। বের হতে পারছি।‘  

তিনি একনাগাড়ে বলে গেলেন, ‘একটা জিনিস বলবো, যদি আমাদের সমাজের চক্ষু দৃষ্টি, আমাদের মেন্টালিটি ভালো হতো, তাহলে আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ আরও উন্নতি করতে পারতো। এবং আমরা (মেয়েরা) ভালো পর্যায়ে  যেতে পারতাম। দেখুন বাধা যদি বলি, আমি মনে করি না যে,আমি কোনও অংশে কম। আমি সবকিছু পারি, তো আমি বাইরেও পারবো, বাসায়ও পারবো। যদি আমার চেষ্টা থাকে তাহলে আমরা সব কাজই করতে পারি। একটা জিনিস যে, নিজের ইচ্ছা শক্তি বেশি থাকতে হবে একটা কাজের জন্য। ইচ্ছা শক্তি যদি অনেক অটুট থাকে, তাহলে জীবনে অনেক কিছু করা যাবে।’

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়