ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

টেস্টে পেছন দিকে হাঁটছে বাংলাদেশ 

সালেক সুফী, মেলবোর্ন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৮:২৭, ৪ মে ২০২১
টেস্টে পেছন দিকে হাঁটছে বাংলাদেশ 

পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্ট ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা দলের ৪৯৩/৭ এবং ১৯৪/৯ স্কোরের বিপরীতে বাংলাদেশ ২৫১ এবং ২২৭। ভঙ্গুর উইকেটে বাংলাদেশ টেকনিক, টেম্পেরামেন্ট এবং স্কিল প্রয়োগের অভাবে হেরে গেছে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে কিছু অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলো। আইপিএল খেলার জন্য সাকিব আল হাসান এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে ছুটি দেয়া হলেও দলটি নিয়ে অনেকে আশাবাদী ছিলেন হয়তো কিছু একটা অর্জন হবে।  

একেবারেই যে কিছু হয়নি বলবো না। পেস বোলার তাসকিন আহমেদকে আবার নতুন করে আবিষ্কার করা গাছে। পাল্লেকেলের নিষ্প্রাণ উইকেটে প্রথম টেস্ট ভালো খেলে সম্মানজনক ড্র হয়েছে। কিন্তু একই মাঠে স্পিন সহায়ক উইকেটে যে ভাবে উভয় ইনিংসেই বাংলাদেশ ব্যাটিং ভেঙে পড়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে তা থেকে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট দৈন্যতার করুন চিত্র আবারো ফুটে উঠেছে।

পাল্লেকেলের এই উইকেটই যে কিছুটা স্পিন বান্ধব হবে সেটি কিন্তু ম্যাচ পূর্ববর্তী স্বাগতিক দলের কথাবার্তা থেকে কিছুটা আঁচ করা গিয়েছিলো। ম্যাচের জন্য আনকোরা নবীন বাম হাতি স্পিনার প্রাবীণ জয়াবিক্রমাকে নেয়া হলো। বাংলাদেশের হয়তো দ্বিধা ছিল। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট তো উইকেট দেখেই একাদশ ঠিক করেন।

প্রথম টেস্ট উইকেটে আবু জায়েদ রাহী সহ কোনো পেসারের জন্য কিছু ছিল না। বাংলাদেশ তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে খেললে ব্যাটিং একটু দুর্বল হয়ে পড়ে। অফ স্পিনার নাঈম হাসান ব্যাটিং টাও মন্দ নয়। খেলার পরিস্থিতি থেকে বলাই যায় আবু জায়েদ রাহির স্থানে নাঈম হাসানকে খেলানো হলে দল ব্যাটিং বোলিং দুটো থেকেই সুবিধা পেতো। শ্রীলঙ্কা কিন্তু নবীন জুটি প্রবীণ জয়াবিক্রমা এবং রমেশ মেন্ডিস সহ তিন স্পিনার নিয়ে খেলছে। বাংলাদেশ সেই তিন পেসার এবং দুই স্পিনার! কেউ কি বলবেন দুই টেস্টে আবু জায়েদ রাহির অবদান কতটুকু? এখানে তো রাহীর কিছু করারই ছিল না? যা কিছু করেছে তাসকিন তার গতি আর অ্যাকুরেসি দিয়ে।

টস জয় শ্রীলঙ্কা দলের জন্য বিশাল আশীর্বাদ ছিল। উইকেটের সবচেয়ে ব্যাটিং উপযোগী সময়ে তারা প্রথম দুই দিন ব্যাটিং করেছে। তবুও তাসকিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বোলিং ইউনিট প্রথম দুই দিনের প্রথম দুই সেশন স্বাগতিক দলকে চেপে ধরেছিলো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস না হলে বাংলাদেশ অনেক সুবিধাজনক অন্যস্থানে থাকতো।
হয়নি সেটা শ্রীলঙ্কা দলের ব্যাটসম্যানরা মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কাজের কাজটি করেছে। দিমুথ করুনারত্নে (১১৮), লাহিরু থিরিমান্নে (১৪০), ফারনান্দো (৮১), নিরোশান ডিকওয়ালা (৭৭*) করে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচের চালকের আসনে নিয়ে যান। বাংলাদেশের সূচনাও অবশ্য মন্দ হয় নি। তৃতীয় দিনের চা বিরতি পর্যন্ত যখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৩১/৪ অনুমান করা যায় নি কী নাটক অপেক্ষা করছে ম্যাচের ভাগ্যে? হঠাৎই যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো জেগে উঠলো উইকেট।

দুই নবীন স্পিনারের বল যেই বাক এবং বাড়তি বাউন্স নিলো, সঙ্গে সঙ্গেই মুড়ি মুড়কির মতো বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়লো। দল গুটিয়ে গেলো ২৫১ রানে। ম্যাচের ভাগ্যলিপি সেখানেই লেখা হয়ে গেলো। অভিষিক্ত প্রবীণ (৬/৯২) একাই ধসিয়ে দিলো বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ প্রমাণ করলো শুধু বাউন্সি উইকেটেই নয় টার্নিং উইকেটে স্পিনারদের বিরুদ্ধেও আমাদের দক্ষতায় ঘাটতি যথেষ্ট।

শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৪৩৭ রানের টার্গেটে বাংলাদেশ নিজেদের প্রয়োগ করে কিছু অর্জন করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে পারতো। কিন্তু তামিম, সাইফ, শান্তর কৌশল কোনো ভাবে টেস্ট মেজাজের ছিল না। চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল ও মুশফিক। ফল যা হবার তাই, ২২৭ রানে অলআউট বাংলাদেশ। ২০৯ রানের বিশাল পর্যায়।

গত কিছু দিন যাবৎ দেশ বিদেশে ক্রমাগত টেস্ট ক্রিকেটে হেরে চলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এখন শ্রীলঙ্কা। কারো কী চেতনার উদ্রেক হয় না? নামি দামি কোচ বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বিসিবি ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম ধনী সংস্থা। অনেক গুণী লোকের সমাবেশ। শোনা  যায় টেস্ট র্য্যাকিংয়ে প্রথম পাঁচ দলে উত্তরণের উচ্চাশা।  কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে ক্রমান্বয়ে তলিয়ে যাচ্ছে। পেছনে হাটছে!

ঢাকা/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়