ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সাফল্যে মোড়ানো ‘মিশন জিম্বাবুয়ে’

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ২৬ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৯:০১, ২৬ জুলাই ২০২১
সাফল্যে মোড়ানো ‘মিশন জিম্বাবুয়ে’

অভাবনীয় এক সাফল্যের গল্প এবারের বিদেশ সফরে। ৮ বছর পর জিম্বাবুয়ের মাটিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতেই তারা কেবল দুর্দান্ত, এমন ‘প্রবাদ’ প্রায় এক মাসের সফর শেষে মুছে দেওয়ার মতো পারফরম্যান্স করেছে। চাঁদেরও যেমন কলঙ্ক আছে, তেমন এই সাফল্যেও টাইগারদের একটাই আক্ষেপ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পরাজয়। কিন্তু একটা ম্যাচ হেরে যাওয়া মানে এই নয় যে, বাংলাদেশ খারাপ খেলেছে। ২৩ রানে হারের পর ওই দিন মাহমুদউল্লাহ যেমনটা বলছিলেন, ‘একটা ম্যাচে ভালো না খেলা মানে এই নয় যে, আমরা খারাপ দল হয়ে গেছি।’ আসলেই তাই, গোটা সিরিজে ওই ম্যাচ ছাড়া ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। সাফল্যে মোড়ানো থাকবে ‘মিশন জিম্বাবুয়ের’ এই গল্প।

টেস্ট জিততে যেন ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে হারানোর পর পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছে সিরিজ। এই বাংলাদেশ প্রায় এক দশক পর জিম্বাবুয়েতে গিয়ে দেশের বাইরে সবচেয়ে বড় ব্যবধান ২২০ রানে জিতেছে। আর বিদেশের মাটিতে যা ছিল তাদের দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজ জয়, ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ের পর প্রথম। এই ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ। মনেই হয়নি যে ১৬ মাস পর সাদা পোশাক তার গায়ে। ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন প্রথম ইনিংসে। তাকে কেন্দ্র করে লিটন দাস (৯৫) ও তাসকিন আহমেদের (৭৫) ব্যাটিং দৃঢ়তা বাংলাদেশকে বিরাট সাফল্যের ভিত গড়ে দেয়।

পরে দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ১১৫ ও ১১৭ রানে চড়ে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এবার নেন চার উইকেট, আর তাসকিনও সমান উইকেট পান। একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসান ব্যাটিংয়ে এক ইনিংস খেলে করেন ৩ রান। তবে তিনি তার জাদু দেখানোর অপেক্ষায় ছিলেন।

তামিম ইকবালকে ছাড়াই টেস্টে সাফল্যের পর হঠাৎ করে ওয়ানডে সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন মুশফিকুর রহিম। পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে যান। তবে তামিম ইনজুরি নিয়েই ফেরেন একদিনের ক্রিকেটে। নেতৃত্বও দেন তিনি। শুধুমাত্র সুপার লিগ বলে হাঁটুর চোট ম্যানেজ করে তিন ম্যাচের সবগুলো খেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অবশ্য প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ডাক মারেন তামিম। অধিনায়কের এই ব্যর্থতার দিনে ব্যাট হাতে লিটন দাস, আর বোলিংয়ে সাকিব দাপট দেখান। ১০২ রান করেন লিটন। ২৭৬ রান করা বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে গুটিয়ে দেয় ১২১ রানে, যাতে সাকিব নেন ৫ উইকেট। বিদেশের মাটিতে ১৫৫ রানের রেকর্ড জয়ে ওয়ানডে শুরু করে টাইগাররা।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ব্যর্থ তামিম। তার মতো অন্যরাও ছিলেন ছন্নছাড়া, কেবল সাকিব দ্যুতি ছড়ান। ২৪১ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৭৩ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব, হন ম্যাচসেরা। ২৮তম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের হাসি নিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে পুরো ৩০ পয়েন্ট অর্জনের।

শেষ ম্যাচটি খেলার আগেই তামিম ঘোষণা দেন, তিনি বিশ্রামে যাচ্ছেন। খেলবেন না টি-টোয়েন্টি সিরিজে। তবে শেষ ম্যাচটা তিনি রাঙিয়ে দেন ঝড়ো সেঞ্চুরিতে। ২৯৯ রানের লক্ষ্যে নেমে তার ১১২ রান ছিল সময়ের দাবি। ৫ উইকেটে পাওয়া এই ৫০তম জয়ের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তামিম। সিরিজ সেরা হন তিন ম্যাচ মিলে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪৫ রান ও সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নেওয়া সাকিব।

বাংলাদেশের শেষ মিশন টি-টোয়েন্টি। ব্যাটিংয়ে নেই তামিম ও মুশফিক। দুই ব্যাটিং স্তম্ভকে হারিয়েও বাংলাদেশ যে দাঁড়ানোর মতো শক্তিশালী হয়েছে, তা প্রমাণিত। দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরে এবার ঝলক দেখান সৌম্য সরকার। দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে যার শুরু, বল হাতে এক উইকেট আর ব্যাটিংয়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন ৫০ রান করে। সঙ্গে নাঈম শেখের ইনিংস সেরা অপরাজিত ৬৩ রান। জিম্বাবুয়ের ১৫৩ রানের লক্ষ্য ৮ উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

উড়তে থাকা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ম্যাচে মাটিতে নামায় জিম্বাবুয়ে। ১৬৭ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন একেবারে বিবর্ণ। এক বল বাকি থাকতে ১৪৩ রানে অলআউট তারা। কিন্তু এই পরাজয়ের তিক্ততার মধ্যেও আশার আলো হয়ে দেখা দেয়ে শামীম হোসেন পাটোয়ারির ব্যাটিং। ১৩ বলে ২৯ রান করেন তিনি। আর তারই ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পায় ‘ফাইনাল’ জয়ের স্বাদ। যদিও তৃতীয় ম্যাচে সৌম্যর ক্যারিয়ার সেরা ৬৮ রান ছিল জয়ের ভিত।

তবে ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে টানা চার মেরে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন শামীম। শেষ দুই ওভারে লাগত ১৫ রান। শেষের আগের ওভারেও চার মেরে শেষ ওভারে ব্যবধান কমিয়ে আনেন পাঁচ রানে। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে একটি চার ও সিঙ্গেল নিয়ে দলকে জেতান দ্বিতীয় ম্যাচে অভিষিক্ত শামীম। তার জয়ের ক্ষুধা মুগ্ধ করেছে মাহমুদউল্লাহ ও সিরিজ সেরা সৌম্যকে। ৫ উইকেটে জয়ে সিরিজও জেতে তারা।

এবার সামনে অস্ট্রেলিয়া। এই দলটি নিয়েই লড়বে বাংলাদেশ। একে তো দেশের মাটিতে সিরিজ, আর সঙ্গে জিম্বাবুয়েতে বিজয় নিশান উড়ানোর তরতাজা স্মৃতি। মনে রাখার মতোই লড়াই করবেন মাহমুদউল্লাহরা। সাফল্য পাবেন কি না সেই প্রশ্ন তোলা থাক বাকির খাতায়!

ঢাকা/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়