ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তাদের হাতে আলোর মশাল

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ৫ আগস্ট ২০২১  
তাদের হাতে আলোর মশাল

পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের শিবিরে তখন ভয়, ৩০ বলে প্রয়োজন ৩২ রান। ক্রিজে দুই তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব ও নুরুল হাসান সোহান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা অনেক সহজ মনে হলেও ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কঠিনই। আর বোলিং প্রান্তে যদি মিচেল স্টার্ক কিংবা জশ হ্যাজেলউড থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই।

সেই ভয়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন আফিফ-সোহানরা। শঙ্কা কাটিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন হাসি। ১৬তম ওভারে স্টার্কের প্রথম বলে গতিকে কাজে লাগিয়ে নান্দনিক ফ্লিকে সোহান পাঠিয়ে দিলেন সীমানার ওপারে। এক বল পরেই আফিফ যেটা করলেন, তা অবিশ্বাস্য। পজিশন-প্লেসমেন্ট-পাওয়ার-নার্ভ সব ঠিক রেখে চোখ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার ওপারে।

যে শটে সিদ্ধহস্ত ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি-কুমার সাঙ্গাকারারার মতো কিংবদন্তিরা। সেই শটে আফিফ মুগ্ধ করলেন সবাইকে। অজি বধের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘুরছে আফিফের কাভার ড্রাইভের ক্লিপ।

এই দুইজন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে ৫৬ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে জিতিয়েছেন ৮ বল বাকি থাকতেই। এই জুটিতে দেখা যাচ্ছে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের আগামীর গল্প; দিচ্ছে নতুন দিনের বিজ্ঞাপন, তাদের হাতেই থাকবে আলোর মশাল।

তরুণদের সাহসিকতা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কণ্ঠে ঝরেছে স্তুতিবাক্য, 'আগে তো বাংলাদেশ খেলতে নামলেই আমরা ভাবতাম তারা হেরে যাবে। হার মেনে নিয়েই খেলতাম। কিন্তু এখন এই হার-জিত বড় কথা না, ছোট ছোট তরুণ ছেলেরা সাহস নিয়ে মাঠে নামে, ফিল্ডিং দেয় তাদের সমস্তটা দিয়ে।'

নাজমুল আরো বলেছেন, 'অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার পর আমার মনে হয়, তরুণদের বিশ্বাসটা আরো বেড়ে গেছে। ওরা এখন নামেই জেতার জন্য, যার সঙ্গেই হোক, ভয় পায় না।'

শুধু তাই নয়, এর আগের ম্যাচে স্টার্ককে মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে ছয় মেরে রানের খাতা খোলেন মোহাম্মদ নাঈম। এ ছাড়া আফিফ শেষ দিকে ১৭ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন। যার জন্য বাংলাদেশ ১৩২ রানের লক্ষ্য দিতে সক্ষম হয়। ব্যাটিংয়ে আফিফ-নাঈম-সোহানরা দেখিয়েছেন পরিপক্বতার ছাপ।

আর বোলিংয়ে মেহেদী হাসান তো দুই ম্যাচেই এনে দিয়েছেন প্রথম সাফল্য। নাসুম আহমেদ ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে (৪ উইকেট) একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। মোস্তাফিজের সঙ্গে শরিফুলের বোলিং ছিল ধারালো। ডেথ ওভারে বোলিংয়ে যুব বিশ্বকাপজয়ী এই বোলার দেখিয়েছেন তার দক্ষতা-প্রয়োজনীয়তা।

বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এই শামীম, আফিফ, নাঈম, মেহেদী এরা তো এসব বড় প্লেয়ারের সামনে খেলা তো দুরে থাক, দেখা হয়েছে কি না সন্দেহ। আপনি মিচেল স্টার্ক, হ্যাজেলউড, জাম্পা- ওদের টপ ক্লাস বোলারদের সামনে প্রথমে নেমে সাহস করে খেলছে এটাই তো অনেক ব্যাপার।’

এ ছাড়া নাঈম-সোহানের ব্যাটিংয়ে দুশ্চিন্তা কমার কথা জানিয়েছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘আফিফ ও সোহানকে এভাবে ব্যাট করতে দেখা অনেক স্বস্তির। দুইজনে আমাদের জয় পর্যন্ত নিয়ে গেছে। পরিপক্বতা দেখিয়েছে। দ্রুত কিছু উইকেট হারানোর পর ড্রেসিংরুমে দুশ্চিন্তা কাজ করছিল। কিন্তু আফিফ ও সোহান যেভাবে ব্যাট করেছে, তাতে দুশ্চিন্তা কমে গেছে।’

‘তরুণ অথবা অন্যকিছু এটা আমার কাছে কোনো বিষয় না। আমাকে এটা আমার দলের জন্য করতে হবে। এটাই আমার দায়িত্ব’-৩৩ বলে ৩৭ রান করে দলকে জেতানোর পর আফিফ এভাবেই বলেছিলেন। নিখুঁত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কথায় অভিজ্ঞতা আর সাহসিকতার ছাপ।

এর আগেই অভিষেক সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলকে জিতিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। আফিফ-নাঈম-সোহান কিংবা শরিফুলের মতো তরুণরা এখনো বেশি ম্যাচ খেলেননি। কিন্তু দলের হয়ে ছোট অবদানগুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখে দলের জয়ে। সবসময় তারা ম্যাচসেরা হন না, কিন্তু তাদের অবদানগুলোতেই শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসে বাংলাদেশ। তাদের তাড়না আর হার না মানার মানসিকতা দিচ্ছে আশার আলো। সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের দায়িত্ব যে নিতে হবে আফিফ-নাঈম-সোহান-শামীম ও শরিফুলকেই। সেই সম্ভাবানার আলোর ঝলকানি দিচ্ছে আফিফ-শরিফুলদের পারফরম্যান্সে।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়