ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ক্যাচ মিসেই সব শেষ

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, শারজা থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৪ অক্টোবর ২০২১  
ক্যাচ মিসেই সব শেষ

ম্যাচ শেষ হলো মিনিট ১৫ আগে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘুরে ঘুরে গ্যালারিতে ছড়িয়ে থাকা দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন। দর্শকদের সঙ্গে উল্লাস করছেন তারা। এখন তো সময় তাদেরই।

অথচ গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। শারজার গ্যালারিতে লাল সবুজের গর্জন, স্কোরবোর্ডে রান, আর শুরুতেই উইকেট তুলে নেওয়া; কিন্তু এলোমেলো বোলিং আর ক্যাচ মিসেই সব ম্লান হয়ে যায়। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ঐতিহাসিক শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চেনা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ রাঙাতে পারেনি বাংলাদেশ। জয়ের মঞ্চ তৈরি করেও হার নিয়েই ছাড়তে হয়েছে মাঠ।

ব্যাট হাতে মোহাম্মদ নাঈম ও মুশফিকুর রহিম নির্ভরতা এনে দিয়েছিলেন। আর বল হাতে ইনিংসের শুরুতেই নাসুম আহেমদ আর মাঝে সাকিব আল হাসান ম্যাচের নাটাই নিজেদের দিকে নেন। কিন্তু এক লিটন দাসের দুই ক্যাচ মিসে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ১৭১ রান করে ৪ উইকেট হারিয়ে। জবাবে খেলতে নেমে ৭ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেট হারিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা। চারিথ আসালানকা ৮০ ও দাসুন শানাকা ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। জীবন পাওয়ার পর ম্যাচের চিত্রনাট্যই বদলে দিয়েছেন ভানুকা রাজাপাকসা। ১৪ রানে স্কয়ার লেগে জীবন পেয়েছিলেন তিনি। আফিফের বলে উড়িয়ে মেরেছিলেন, বাউন্ডারি লাইনের আগেই বল পড়ছিল। কিন্তু লিটন তালুবন্দি করতে পারেননি।

সেই রাজাপাকসা চার-ছয়ের ঝড় তুলে মাত্র ৩১ বলে ৩টি করে চার-ছয়ে ৫৩ রান করে থামেন। লিটন শুধু রাজাপাকসাকে জীবন দেননি, ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা আসালানকা ৬৩ রানের সময় পয়েন্টে বেঁচে যান লিটনের হাত থেকেই। ১৫তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে পয়েন্টে দ্বিতীয়বারের মতো ক্যাচ ছাড়েন লিটন। এরপর তিনি আরো ১৭ রান যোগ করেন। ৪৯ বলে ৫টি করে চার-ছয়ের মারে ৮০ রান করেন আসালানকা।

অথচ বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নাসুম সুপার টুয়েলভের আসল লড়াইয়ে এসে নিজের জাত চেনালেন ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই। বোল্ড করে মাত্র ১ রানে ফেরান কুশল পেরেরাকে। প্রথম ওভারে উইকেট হারানোর পরও ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। আসালানকা-পাথুম নিশানকা জুটি গড়ে উল্টো ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন। একের পর এক চার-ছয়, আর সিঙ্গেলস-ডাবলসে বিপর্যস্ত করে ফেলেন বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। বলে বলে ফিল্ডার পরিবর্তন, বোলার পরিবর্তন কোনো কাজই আসছিল না।

দলীয় নবম ওভারে এসে সাকিব ব্রেক থ্রু এনে দেন। নিশানকাকে বোল্ড করার পাশাপাশি ফেরান নতুন ব্যাটসম্যান আভিষ্কা ফার্নান্ডোকে। নিশানকার উইকেট নেওয়ার পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফ্রিদিকে ছড়িয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হন সাকিব। আফ্রিদির উইকেট ৩৯টি আর সাকিবের এখন ৪১টি। এছাড়াও পুরো ম্যাচ জুড়ে সাকিবকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। বোলিং পরিবর্তন, বোলারদের পরামর্শ দেওয়া, ফিল্ডার পরিবর্তন সবকিছুই করেছেন।

সাকিবের এক ওভারে জোড়া আঘাতের পর আরো ১ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সাইফউদ্দিন-মাহমুদউল্লাহদের এলোমেলো করে আসালানকা-রাজাপাকসা পঞ্চম উইকেটের জুটিতে মাত্র ৫২ বলে ৮৬ রান যোগ করেন। এখানেই ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ।

সাকিব ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। নাসুম ২.৫ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। দুই ওভারের বেশি করা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান দেন সাইফউদ্দিন। তিনি ৩ ওভারে মাত্র ৩৮ রান দেন।

এর আগে উত্তপ্ত শারজায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মুগ্ধতা ছড়ানো ব্যাটিংয়ে আরো উত্তাপ ছড়িয়েছে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খালি হাতে ফেরা ওপেনার নাঈমের ব্যাটে ছুটেছে রানের ফোয়ারা। আর নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা মুশফিকুর রহিমের ব্যাট রূপ নিয়েছিল ক্ষুরধার তরবারিতে। দুজনের অর্ধশতকে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ। অপরাজিত ছিলেন মুশফিকুর রহিম (৫৭) ও মাহমুদউল্লাহ (১০)। 

নাঈম ওপেনিংয়ে নেমে ৫২ বলে ৬২ রান করেন। ৬টি দৃষ্টিনন্দন চারের মার  ছিল এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ইনিংসে। লাহিরু কুমারার মাথার উপর দিয়ে চার মেরে পেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের ২৫টি ম্যাচে এটি তার চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। এদিকে প্রায় দুই বছর পর মুশফিক হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। মাত্র ৩২ বলে মিড অনে সিঙ্গেল নিয়ে দেখা পান হাফ সেঞ্চুরির। ১২ ম্যাচ পর মুশফিক খেলেছেন চল্লিশের বেশি রানের ইনিংস। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৩ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেবার বাংলাদেশ জিতেছিল। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৫৭ রান। ৫টি চার ও ২টি ছয়ের মার ছিল ইনিংসে। তাকে আউটের রাস্তাই খুঁজে পায়নি শ্রীলঙ্কা। দুজনে তৃতীয় উইকেটের জুটিতে ৫১ বলে ৭৩ রান যোগ করেন।

এই ম্যাচেও লিটন সেট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ১৬ বলে ২ চারের মারে ১৬ রান করে আউট হয়ে যান। তার আউটেই বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ৬ ওভার পর্যন্ত ৪ বোলার ব্যবহার করেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিল না শ্রীলঙ্কা। উইকেটের জন্য মরিয়া দ্বীপরাষ্ট্রটির ক্রিকেটাররা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তখন। বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন লিটনের সঙ্গে। এরপর আম্পায়ারের হস্তক্ষেপে তা থামে। লাহিরু-লিটনের বাদানুবাদ শুরুতেই শারজাকে আরও উত্তপ্ত করে ফেলে।

ক্রিজে এসেই সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় বলেই চারিথ আসালানকাকে চার মারেন। তবে এদিন সাকিবকে আত্মবিশ্বাসী দেখালেও ৭ বলে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। আফিফ হোসেন রানআউট হয়ে ফেরেন ৬ বলে ৭ রান করে। মুশফিকের সঙ্গে ৫ বলে ১০ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৭ বোলার ব্যাবহার করেছে। তবুও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রানের চাকা থামাতে পারেনি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন বিনুরা ফার্নান্ডো ও লাহিরু কুমারা। সর্বোচ্চ চার ওভার করে বোলিং করেছেন লাহিরু ও দুষ্মন্ত চামিরা। লাহিরু ২৯ রান দিয়ে উইকেট পেলেও চামিরা দেখা পাননি উইকেটের।

শারজা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়