ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

অধিনায়ক মুমিনুল পারছেন না!   

এম. এম. কায়সার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১১ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ২১:৩৬, ১১ এপ্রিল ২০২২
অধিনায়ক মুমিনুল পারছেন না!   

ক্রিকেট অধিনায়ক নিয়ে অনেক জনপ্রিয় সংজ্ঞা আছে। সেই তালিকায় ভারতের সাবেক অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদির উক্তিটা দারুণ স্মরণীয়। তিনি বলেছিলেন- ‘অধিনায়ক সাধারণত দুই ধরনের। হয় তিনি পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে দলকে সামনে বাড়াবেন। নয়তো সামনে থেকে লড়ে টেনে তুলবেন।’

আমাদের টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হকের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স জানাচ্ছে- এই দুটোর কোনটিই তিনি করতে পারছেন না। বরং যা অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে দলই এখন অধিনায়ককে বয়ে বেড়াচ্ছে। অধিনায়ক বলেই তিনি অটো চয়েস হিসেবে একাদশে! তিনি বিপদে পড়া দলকে টেনে তোলা তো দূরের কথা, উল্টো ব্যাটসম্যান-অধিনায়ক দুই ভূমিকায় দলকে আরো গর্তে ঠেলছেন!

দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজের পুরোটা জুড়েই যেন সেই জলজ্যান্ত প্রমাণ। পুরো সিরিজে ব্যাটসম্যান বা অধিনায়ক; কোনো হিসেবেই ক্যারেক্টারই প্লে করতে পারেননি মুমিনুল। বরং প্রথম টেস্টে হারের পর মাঠের বাইরে এসে দ.আফ্রিকার ক্রিকেটারদের স্লেজিং নিয়ে যা বলেছেন, তাতে তাকে ছিঁচকাঁদুনে বালক ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। আবার পরের টেস্টে খেলতে নামার আগে নিজের বলা সেই কথা তিনিই অস্বীকার করেছেন। তিনি কি জানেন না, মাইকের সামনে এসে যা বলছেন তার পুরোটাই রেকর্ড হচ্ছে? তাই দু’দিন আগে বলা কথা পরদিন অস্বীকার করে তিনি শুধু নিজেকেই হাস্যাস্পদই করে তুলেননি, ভঙ্গুর ব্যক্তিত্বের পরিচয়ও দিয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

একটি দেশের টেস্ট অধিনায়ক এতো এলেবেলে কেন হবেন? দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতার হিসাব মেলাতে বসা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অধিনায়কের এই নিষ্প্রভ কারণও খুঁজবে নিশ্চয়ই?

মুশফিক রিভার্স সুইপ খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন। যে কায়দায় এবং ম্যাচের যে পরিস্থিতিতে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন, তাতে দলের বিপদ আরো বাড়ল। খোদ টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমন শটে বিরক্ত। বলছেন- ‘মুশফিকের ওই শট অবশ্যই প্রত্যাশিত ছিল না। বিরতির আর ৫ মিনিট বাকি ছিল। জানতাম যে, আর ৪৩ রান করলে আমরা ফলোঅন বাঁচাব। ওরকম সময়ে এমন শট? মুশফিক আমাদের অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওর কাছ থেকে অমন শট আমরা কেউ আশা করিনি। ব্যাখ্যা মুশিই দিতে পারবে। সে জানে, ওই পরিস্থিতিতে সে ব্যাট করেছে, কেন করেছে; সে বলতে পারবে। তবে কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে আমরা এই শট মেনে নিই। কিন্তু টেস্টে কেন এমন শট? এটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত।’

অথচ মুশফিকের সেই রিভার্স সুইপ শটকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক! উল্টো প্রশ্ন তুলতেই মানা করছেন। বলছেন- ‘আপনারা যদি জিনিসটা (রিভার্স সুইপ শট) নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা করেন, জিনিসটা নিয়ে যদি উনাকে বলতে থাকেন; উনার নিজের জন্য খারাপ। আমাদের দলের জন্য খারাপ। বাংলাদেশ দলের জন্যও খারাপ, এমনকি আপনার দেশের জন্য খারাপ।’

অধিনায়ক তার খেলোয়াড়কে অবশ্যই সমর্থন করবেন। তাকে সব সমালোচনা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু সেটা হতে হবে নিখাদ যুক্তির নিরিখে। অক্রিকেটীয় ভঙ্গিতে গোঁয়ার গোবিন্দোর মতো না, যা আপনাকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেয়। 

মনে রাখতে হবে, আপনি একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আপনার বলা প্রতিটা কথা, শব্দ বিশ্ব শুনছে। এটা কোন পিকনিক নয়!

দ.আফ্রিকা সিরিজজুড়ে পুরোটা সময় মুমিনুলকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগা অধিনায়ক মনে হয়েছে। যিনি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কিছু ঘটলে অসহায়ভাবে আশপাশে তাকান সাহায্যের আশায়। সেই দ্বিধা, বিভ্রান্তি, বিহ্বলতা কাটিয়ে যখন সিদ্ধান্ত নেন, ততক্ষণে রিভিউ টাইম আউট! 

সিরিজের প্রথম টেস্টে টস জয়ের পর ফিল্ডিংয়ের ভুল সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কারো পরামর্শ শুনেননি। শুনলেন দলের দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও মুশফিক রহিমের পরামর্শ। ব্যাটিং উইকেটে নিলেন বোলিং। একাদশ বাছাইয়ে সিদ্ধান্তহীন তিনি। দলের সেরা স্পিনার তাইজুলকে প্রথম টেস্টের একাদশেই রাখলেন না। মাঠে এবং মাঠের বাইরে প্রায় প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে অধিনায়ক যখন অসহায় আর্তি নিয়ে অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তখন তাকে আর যাইহোক দলনেতা বলা যায় না! আমরা পাপেট পার্লামেন্টের কথা শুনেছি। এখন কর্তৃত্বহীন অধিনায়কও দেখতে হচ্ছে। 

অধিনায়ক হিসেবে মাঠে-বাইরে সর্বত্রই মুমিনুল পুরোদস্তুর নিষ্প্রভ ব্যক্তিত্ব। এই সিরিজে চার ইনিংসে তার সবমিলিয়ে রান ১৩। সংখ্যাটা অপয়া।

কোনকিছুই অধিনায়ক মুমিনুলের পক্ষে যাচ্ছে না। আরেকটু বৃহত্তর ব্যাখ্যায়- অধিনায়ক মুমিনুল পারছেন না! 

বছরের শুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঢাকা টেস্টে কেমন উইকেট চান- এই প্রশ্নের উত্তরে মুমিনুল যা বলেছিলেন তাতেই স্পষ্ট তিনি আসলে ‘অভিমতহীন অধিনায়ক’। নিজ মাটিতে খেলা। স্বদেশী অধিনায়ক হিসেবে তো তার দলের জন্য কেমন উইকেট চাই, সেই দাবিটা তো অন্তত তিনি বোর্ডের কাছে করতেই পারেন। অথচ সেই তিনিই বলছেন- ‘আমাদের ধানক্ষেতে দিলে সেখানেই খেলতে হবে!’

এমন অসহায় আর্তির অধিনায়কে দলের কোমর তো আরো ভাঙবে।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, রাইজিংবিডি ও ক্রিকেট বিশ্লেষক।
 

ঢাকা/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়