ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

টেস্ট সংস্কৃতির জন্য ভাবনার বদল চাইলেন শান্ত

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ১৯ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ১৫:৪৭, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
টেস্ট সংস্কৃতির জন্য ভাবনার বদল চাইলেন শান্ত

‘‘আমাদের দেশে টেস্টের সংস্কৃতিটা ছিল না কখনও, এখনও নেই।’’

২০২২ সালে সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান গণমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেছিলেন। তার বক্তব্যে বিস্ফোরণ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ফল আসেনি। তাইতো তিন বছর পরও একই প্রশ্নর মুখোমুখি বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিন বছর কেন, টেস্ট অভিষেকের ২৫ বছর চলার পথে সংস্কৃতি গড়ে না উঠায় পুরো বিষয়টিকেই ‘দুঃখ জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন শান্ত।

আরো পড়ুন:

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। ঘাম ঝরানো অনুশীলন শেষে হাসিমুখে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শান্ত। যেখানে প্রথম প্রশ্নটাই হয়েছিল দেশের টেস্ট সংস্কৃতির ঘাটতি নিয়ে।

২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। ওই বছরের নভেম্বরেই টেস্ট অঙ্গনে পা রাখে বাংলাদেশ। দুই যুগেরও বেশি হয়েছে পথ চলা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, হোঁচট খেয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থানে যাওয়ার কথা ছিল তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। কালেভাদ্রে এসেছে সাফল্য। সে সাফল্যের ছিল না ধারাবাহিকতা।

এর পেছনে বড় কারণ টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তুলতে না পারা। যার দায় ক্রিকেট প্রশাসন থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দেরও। এদেশের ক্রিকেট প্রশাসকদের ভাবনা, তাদের ক্রিকেট পরিচালনার ধরণ, ক্রিকেটারদের গড়ে উঠার প্রক্রিয়া, তাদের মানসিকতা, ক্রিকেট কাঠামো সবকিছুই সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটটা এগিয়ে যাওয়ার অন্তরায়। টেস্ট ক্রিকেটের আলাদা যে আমেজ, এগিয়ে যাওয়ার যেই নিবেদন ও পরিকল্পনা থাকার কথা তা একেবারেই অনুপস্থিত। দুই একটা বিচ্ছিন্ন সাফল্যে ক্রিকেটার, কর্তরা খুশি হয়ে যান। ব্যর্থতায় আবার আশ্বাস দেন নিজেদের শোধরানোর। কিন্তু হিতে বিপরীত হয় বারবারই।

এজন্য টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তোলার জোর আহ্বান শান্তর, ‘‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ (টেস্ট সংস্কৃতি)। এত বছর টেস্ট খেলার পরও যখন আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে হয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক।’’

সেই প্রক্রিয়া শান্ত শুরু করেছেন বলে দাবি করলেন, ‘‘তবে আমরা যদি গত বছর থেকে শুরু করি, আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ১২টি ম্যাচের মধ্যে চারটি জিতেছিলাম এবং চারটি জয়ই বড় দলের বিপক্ষে। গত বছর থেকে এই দলটা একটা সংস্কৃতি তৈরি করতে এবং আমরা কিভাবে খেলতে চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে কথার্বাতা হচ্ছিল এবং নতুন কোচ আসার পর তার একটা পরিকল্পনা আছে এবং সে আসলে দলটাকে কিভাবে সামনে নিয়ে যেতে চায় এরই মধ্যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি আমরা যারা খেলছি তাদের একটা ইনপুট তো ছিলই। আমি আশা করব এ বছর আমাদের যেই পাঁচটি-ছয়টি টেস্ট ম্যাচ আছে নতুন কিছু আমরা দেখতে পারব।’’

শান্তর নজরে এসেছে বিশেষ কিছু। সফররত জিম্বাবুয়ে দলকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা, মজাও করা হয় অনেক সময়। গণমাধ্যমে আসে অনেক কিছু। আবার প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ‘আপদ’। যেখানে পান থেকে চূণ খসলেই করা হয় কটাক্ষ। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাফল্যে মেলে না করতালি। এজন্য ভাবনার বদলের জোর দাবি জানিয়ে রাখলেন অধিনায়ক।

প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, শান্ত চান সবাইকে এক চোখে দেখতে। বোলার যে-ই হোক তাকে শক্তিশালী হিসেবেই মূল্যায়ন করার নিবেদন অধিনায়কের, ‘‘না আমরা সেভাবে দেখছি না (জিম্বাবুয়েকে ছোট দল হিসেবে)। এই জিনিসগুলো অনেক সময় আপনাদের থেকে আসে। আবার সাধারণ মানুষ যারা খেলা অনুসরণ করেন তারা এই জিনিসগুলো তুলনা করে থাকেন। যেটা, জিম্বাবুয়ে বা ছোট দল নাকি বড় দল এই জিনিসগুলো।’’

‘‘পেশাদার ক্রিকেটে হিসেবে আমরা বল বাই বল চিন্তা করি। কিভাবে ওই বলটার সঙ্গে আমরা লড়াই করে জিততে পারি। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কিভাবে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারি, প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন। একটু আগে বললাম, সংস্কৃতি। আমরা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যেভাবে খেলবো, সেই মন মানসিকতায়, সেই শারীরিক ভাষা, সেই চিন্তাভাবনা যেন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে থাকে বা একটা বড় দলের বিপক্ষে থাকে। এই জায়গায় যেন আপনাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি না হয়।’’

জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই ভাবনার বদলের দাবি তুললেন শান্ত, ‘‘আমি মনে করি, আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে এরকম ভাবনা নেই যে, ছোট দলের বিপক্ষে খেলছি বা বড় দেলর বিপক্ষে খেলছি। উন্নতির জায়গা আছে। আমি মনে করি এখান থেকে আমরা সেই শুরুটা করতে পারি।’’

শান্ত সাহায্য চাইলেন সবার, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে আমি যেটা চিন্তা করি, প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জেতার জন্য খেলি। এখানে স্রেফ ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারোরই নেই। আমি একটু আগে বললাম, নতুন কিছু আমরা চেষ্টা করব এবং এটাও শুরু হবে আগামীকাল থেকে। এটার জন্য যে ধরণের মন মানসিকতা, প্রস্তুতি থাকার কথা সেটা খেলোয়াড়রা নিচ্ছে। আমি আশা করব যারা আমাদেরকে হেল্প করেন, যারা ম্যানেজমেন্টে আছেন, যারা ক্রিকেট বোর্ডে আছেন তারাও আমাদের হেল্প করবেন। আমি বিশ্বাস করি, যেহেতু আমাদের ২০-২২ বছর টেস্ট ক্রিকেট একই ধরণের ছিল এবং খুব বেশি উন্নতি হয়নি তারমানে এই জায়গাটাতে নিশ্চয়ই কিছু পরিবর্তনের দরকার আছে। ওই পরিবর্তনটা করার আমরা চিন্তা করছি। আমি আশা করব এই পরিবর্তনটা টেস্ট ক্রিকেটে কাজে আসবে।’’

অবকাঠামোরও উন্নতি চাইলেন শান্ত, ‘‘ফ্যাসিলিটিজটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমরা যখন বাইরে খেলতে যাই তখন উইকেটগুলো ভিন্ন থাকে। উইকেট একটা বড় বিষয়। আমরা যেন ভালো উইকেটে অনুশীলন করতে পারি। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যেন ওই ধরণের উইকেটে খেলতে পারি। এই বিষয়গুলো আছে। আবার কিছু সময়ে কিছু খেলোয়াড় ফেল করবে। তাদেরকে যেন ব্যাক করা হয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে টুকটাক আলোচনা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ক্রিকেট বোর্ড ওই খেলোয়াড়দের পাশে থাকবে। পরিবর্তন যখন হবে, শুরুতে রেজাল্ট হওয়াটা কঠিন। ওই শুরুর সময়ে কোনো খেলোয়াড় যদি পারফর্ম না করে তাহলে ওই খেলোয়াড়টাকে যেন সবাই মিলে ব্যাক করে।’’

সিলেট/ইয়াসিন/নাভিদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়