সুদামেরিকানার ম্যাচে ভয়াবহ সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যু, শতাধিক গ্রেপ্তার
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স প্রদেশের আভেয়ানেদায় বুধবার রাতে কোপা সুদামেরিকানা ফুটবল ম্যাচে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তে ও ইউনিভার্সিদাদ দে চিলের মধ্যকার লড়াই হঠাৎই রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন, যার মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া এই ঘটনায় ১০০-রও বেশি চিলিয়ান সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় পুলিশ।
স্টেডিয়ামের ভেতর থেকে আসা ছবিগুলো ছিল যেন আতঙ্কের দলিল। কেউ বাঁচতে গ্যালারির উঁচু দিক থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েছেন, কেউ মাথায় লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার অর্ধনগ্ন অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে পালাতে গিয়ে রক্তে ভিজে গেছেন।
প্রথমে ম্যাচটি স্বাভাবিকভাবে চলছিল। তবে বিরতির সময় ১-১ সমতায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, উপরের গ্যালারিতে থাকা চিলিয়ান সমর্থকেরা চেয়ার ভেঙে ও টয়লেটের জিনিসপত্র ছুড়ে মারতে থাকে নিচে বসা আর্জেন্টাইন সমর্থকদের দিকে। এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পুলিশ সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে শুধু মাইকিং করে সতর্ক করে। কিন্তু পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এরপরই ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তের মুখোশধারী সমর্থকেরা ভিআইপি অংশের দরজা ভেঙে অতিথি গ্যালারিতে প্রবেশ করে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে হামলা চালায়। জীবন বাঁচাতে গঞ্জালো আলফারো নামের এক চিলিয়ান সমর্থক গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে অস্ত্রোপচার করতে হয় এবং বর্তমানে তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। আরও ১৮ জন চিলিয়ান সমর্থক বিভিন্ন ধরনের আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনার পর ১২৫ জন চিলিয়ান সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে ১০১ জনকে এখনও আটক রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কোনো অবস্থাতেই গণপিটুনি ন্যায়সঙ্গত নয়। কিছুতেই নয়।” তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বুয়েনস আয়ার্সে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং ভুক্তভোগী চিলিয়ান সমর্থকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আশ্বাস দেন।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এক বিবৃতিতে সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “ফুটবলে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। খেলোয়াড়, সমর্থক, কর্মকর্তা—যে-ই হোন না কেন, সবাইকে নিরাপদ পরিবেশে খেলা উপভোগ করতে দিতে হবে।”
দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এটি দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে প্রথম সহিংস ঘটনা নয়। এর আগেও ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও চিলির মাঠে সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। গত বছর কোপা লিবার্তাদোরেসের ম্যাচে প্রাণও হারিয়েছিলেন দুই সমর্থক। এবার ছাড়িয়ে গেল সেই সংখ্যা।
ঢাকা/আমিনুল