ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইস্তাম্বুল: নীল জলে পা ডুবিয়ে যে নগর থাকে অপেক্ষায় || ৩য় পর্ব

ফাতিমা জাহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইস্তাম্বুল: নীল জলে পা ডুবিয়ে যে নগর থাকে অপেক্ষায় || ৩য় পর্ব

ইস্তাম্বুলে আমার দ্বিতীয় দিন। ভ্রমণের ফরজ কাজ মেনে যেসব স্থান দেখা উচিৎ তার মধ্যে পড়ে টপকাপি বা তোপকাপি প্যালেস। আজকের গন্তব্য তোপকাপি প্যালেস যা আয়া সোফিয়ার পাশেই অবস্থিত।

রাস্তা আমার চেনা। আজ আরো শর্টকাট আরেকটা পথ খুঁজে বের করলাম। প্রাসাদে ঢোকার প্রথম দ্বারটির নাম ইম্পিরিয়াল গেইট বা রাজকীয়দ্বার। পাথরের তৈরি এ দ্বারের মাথায় কোরআনের আয়াত হীরের মত জ্বলজ্বল করছে। দ্বার পার হলে সামনে বিশাল গোলাপ বাগান। গোলাপ ফুটে বাগান ঝলমল করছে। আর ঝরা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে অনায়াসে পুরো এলাকা ঢেকে দেয়া যায়। সামনেই বসফরাস নীল নীল রং জ্বালিয়ে বসে আছে। আর বাম পাশে আরেক প্রস্থ গোলাপ বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে তবে পৌঁছানো যায় আসল প্রাসাদের আঙিনায়। এ বিশাল চত্বরটি সেনাবাহিনীর প্যারেডের জন্য বরাদ্দ ছিল সুলতানদের আমলে। এই চত্বরটি প্রাসাদের প্রথম প্রাঙ্গণ।

তোপকাপি প্যালেসের দ্বিতীয় দ্বারটিও বিশাল। দ্বারের দু'পাশে লাগোয়া মিনারাতের মতো দু'টো স্তম্ভ। এই দ্বারটিকেই প্রাসাদের মূল দ্বার হিসেবে বিভিন্ন ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়। এখান থেকে দ্বিতীয় প্রাঙ্গণের শুরু। অটোম্যান শাসনামলে  এই গেইটটি পার হবার সময় শুধু সুলতান এবং রাজমাতা ঘোড়ায় বা অন্য বাহনে চড়ে পার হতেন, বাকিদের বাহন থেকে নেমে হেঁটে পার হতে হতো। দ্বিতীয় প্রাঙ্গণটি মনোরম ফুলবাগানে ঘেরা, ফুলবাগানগুলো একেকটি দ্বীপের মতো যার ফাঁকে ফাঁকে প্রাসাদের ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে। একই সময়ের অন্যান্য ইউরোপীয় প্রাসাদের আদলে নির্মিত এ প্রাসাদ প্রাঙ্গণের সারি সারি ভবন ব্যবহার করা হতো সেনানিবাস, রাষ্ট্রীয় কার্যালয়, রসুইঘর, সম্রাট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আবাস, কোষাগার ইত্যাদি কাজে।

সুলতান মেহমেত (২) রোমান সম্রাটের কাছ থেকে তুরস্ক দখল করে নেবার পর সিদ্ধান্ত নিলেন একটি রাজকীয় প্রাসাদ নির্মাণের। অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন তখন বেয়াযিত নামক স্থানে যা গ্রান্ডবাজারের পাশেই অবস্থিত। ১৪৫৯ সালে শুরু হয় প্রাসাদ নির্মাণের কাজ, শেষ হতে লেগে যায় প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর। প্রাসাদটি গ্রীক ও রোমান সম্রাটের প্রাসাদ দুর্গের স্থানেই নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশের সবচেয়ে নামী ভাস্কর, শিল্পী আর মিস্ত্রিদের ওপর ন্যস্ত করা হয় প্রাসাদ নির্মাণের দায়িত্ব। প্রাসাদের প্রধান পরিকল্পনাকারী সুলতান নিজে। তিনি প্রাসাদের স্থাপনকৌশল প্রণয়ন করেন। পরে ষোড়শ শতাব্দীতে স্থাপত্যবিদ আলাউদ্দিন দাউদ আগা সুলতান সুলেমানের নির্দেশে বর্ধিত অংশের নকশা করেন। এরপর সুলতান সেলিম (২) প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ মিমার সিনানকে প্রাসাদের হারেম, ব্যক্তিগত কক্ষ, স্নানঘর, রসুইঘর পূননির্মাণের বা পরিবর্তন, পরিবর্ধনের দায়িত্ব দেন। প্রাসাদের মূল নকশা করার সময় সুলতান মেহমেত (২) ব্যক্তিগত কক্ষ পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মাণের পরিকল্পনা করেন যেখান থেকে বসফরাস দেখতে পাওয়া যায়।

তোপকাপি প্যালেসের প্রবেশদ্বারের একাংশ

 

অটোম্যান সম্রাটরা এই প্রাসাদকে আশীর্বাদ ও সুখের প্রাসাদ নামে আখ্যা দিয়েছিলেন। প্রাসাদটি উদারভাবে বিস্তৃত ছিল এবং প্রায় সব ভবনই একতলা। প্রাসাদে চারটি আলাদা প্রাঙ্গণ করা হয়েছে যার মাঝে প্রথম প্রাঙ্গণে প্রবেশে তেমন কোনো বাধা ছিলো না আর নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া হারেম ও চতুর্থ প্রাঙ্গণে প্রবেশ ছিল অপরাধ। ১৭৩ একর জায়গাজুড়ে প্রাসাদটির দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ রয়েছে ফুলবাগানে ঘেরা যার নাম গুলহানে পার্ক।

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে তোপকাপি প্যালেসের প্রতি সুলতান আকর্ষণ হারাতে থাকেন। তখনকার অন্যান্য ইউরোপীয় প্রাসাদ গড়ে উঠেছিল আরো আধুনিক সাজসজ্জা ও সুযোগ-সুবিধায়। এরপর বসফরাসের তীরে ডলমাবাহচে প্যালেস নির্মাণ করা হয়, যেখানে সুলতান সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতেন। ১৮৫৬ সালে সুলতান আব্দুল মাজিদ (১) রাজকীয় প্রাসাদ ও কার্যালয় তোপকাপি থেকে সরিয়ে ডলমাবাহচে স্থানান্তরিত করেন। তোপকাপি শুধু রয়ে যায় রাজকীয় কোষাগার, টাকশাল ও গ্রন্থাগার হিসেবে। ১৯২৩ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটলে তোপকাপি প্যালেসকে মিউজিয়াম হিসেবে পরিবর্তিত করা হয় এবং সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। ১৯৮৫ সালে ইস্তাম্বুলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সাথে সাথে তোপকাপি প্যালেসকেও ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’- এর আওতায় আনা হয়।

প্রাসাদের দ্বিতীয় প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কোন ভবন দিয়ে আজকের পদচারণা শুরু করা যায়! হারেম প্রাসাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজ পরিবারের মহিলাদের প্রাসাদ। ইসলামিক পর্দাপ্রথা অনুসরণ করে হারেমের নকশা করা হয়েছে। হারেমের আক্ষরিক অর্থ নিষিদ্ধ। হারেমে সম্রাট, রাজকুমার ও শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভৃত্য ছাড়া অন্য যে কোনো পুরুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল। সাম্রাজ্যের রাজমাতা, রানী, রাজকুমারী, রক্ষিতাদের জন্য আলাদা অংশ বরাদ্দ ছিল হারেমে। সম্রাটের ব্যক্তিগত কক্ষ তখনকার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যবিদকে দিয়ে নকশা করানো হতো।

তোপকাপি প্রাসাদে ঢোকার জন্য সাধারণ টিকেট কাটার পর হারেমে প্রবেশের জন্যও আলাদা টিকেট কাটার প্রয়োজন হয়। হারেমে প্রবেশ করে দিশেহারা হয়ে গেলাম। বিশাল পরিসরে তৈরি  হারেমে কক্ষের সংখ্যা চারশ। লম্বা প্যাসেজ পার হয়ে ডানে বায়ে অসংখ্য কক্ষ, কক্ষের দেয়াল ইযনিক ধাঁচের সিরামিক টাইলস দিয়ে আবৃত। ইযনিক হলো হাতে আঁকা ফুল পাতার সূক্ষ্ম চিত্র, যেখানে নীল ও সমুদ্রাভ সবুজ রঙের আধিক্য থাকে। পুরো হারেম ইযনিক টাইলস দিয়ে সাজানো আর একটির চেয়ে আরেকটির নকশা মনোরম। কক্ষগুলোর মাঝে ভিন্ন ভিন্ন আঙিনা রাজমাতা, রানী, রাজকুমারী ও রক্ষিতাদের জন্য।

হেরেমের কারুকাজ

 

রাজমাতা সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হারেম এবং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। সম্রাট তার অনুমতি ব্যতীত সাম্রাজ্য পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বোধ করতেন। তাঁর কক্ষটি বিশাল, দেয়াল এবং বিশাল ফায়ারপ্লেস ইযনিক টাইলস দিয়ে আবৃত। ছাদে বারোক ধাঁচের নকশা আকা। একপাশে বিশাল আয়না। রাজপ্রাসাদে বহুমূল্যবান আয়নার ছড়াছড়ি দেখেছি। প্রায় প্রতিটি কক্ষেই দেয়ালজুড়ে আয়না যা সোনা দিয়ে বাধানো।

পরপর কয়েকজন সুলতানের কক্ষ পার হলাম। সবগুলোর বৈশিষ্ট্যই ইযনিক টাইলস, বিশাল ফারারপ্লেস, মাদার অফ পার্ল খোদাইকৃত মজবুত কাঠের দরজা, ছাদের মনোরম বারোক নকশা আর যার স্থানে স্থানে সোনার গিল্ড করা।

হারেমের একপাশে রক্ষিতাদের কোয়ার্টার। তাদের জন্য আলাদা উঠোনও আছে। হারেমের মহিলাদের বাইরে বের হবার নিয়ম ছিলো না বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া। তাদের মনোরঞ্জন হতো গানবাজনা করে, বই পড়ে, ছবি এঁকে, সাজগোজে, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনায় মত্ত থেকে এই উঠোনে।

সুলতান মুরাদ (৩) এর ব্যক্তিগত কক্ষ হলো হারেমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কক্ষ। প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ মিমার সিনান এর নকশা করেন। এ কক্ষে নীলের সাথে চিত্রকর্মে লাল ও সোনালী রঙের আধিক্য দেখা যায়। সবগুলো দেয়াল আর ছাদে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা। বসবার ঘরের একপাশে বারান্দা। দরজায় প্রথাগত নকশার বদলে আঁকা হয়েছে ইউরোপীয় নকশা। আসবাবপত্রও তেমন রাজকীয় যার এতটুকু ক্ষয় হয়নি কয়েকশ বছরে। অবশ্য খুব বেশি আসবাবপত্র রাখাও নেই হারেমে। বেশিরভাগ কক্ষই ফাঁকা। লম্বা প্যাসেজের যে দেয়ালে টাইলস নেই তা শ্বেতপাথর দিয়ে আবৃত। কয়েকটি কক্ষ পরেই ক্রাউন প্রিন্স বা পরবর্তী সম্রাটের কক্ষ। সেখানেও শিল্প, রাজকীয় ঐশ্বর্যের ছড়াছড়ি। আরো কয়েক কদম পেরোলে কয়েদখানা যেখানে বিদ্রোহী রাজকুমারদের বন্দী করে রাখা হতো। সুলতানের ব্যক্তিগত স্নানঘর যার গ্রিল সোনা দিয়ে গিল্ড করা। হামাম বা স্নানঘরের দেয়াল শ্বেতপাথরের। অন্যান্য হামামে শ্বেতপাথরে খোদাই করা নকশার আধিক্য দেখতে পাওয়া যায়। হারেমের নিজস্ব নামাজঘর আছে এক কোণায় দোতলায় যেখানে রাজমাতা, রানী, রাজকন্যা ও সুলতান পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নামাজ আদায় করতেন। হারেমের আরেকপাশে দাসী ও হাবসি ভৃত্যদের কক্ষ। হাবসি ভৃত্যদের নির্বীজিত করে রাখা হতো। তারা যথেষ্ট অনুগতও ছিল প্রভুদের প্রতি। আমার মনে হচ্ছিল খোদ হারেম দেখতেই দিন পার হয়ে যাবে, যদিও হারেমের সবগুলো কক্ষ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।

হেরেমে রানী মাতার কক্ষে ইযনিক টাইলস

 

হারেমের ঘোর নিয়ে বের হলাম রাজকীয় রন্ধনশালা দেখতে। রন্ধনশালায় প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মানুষের খাবার তৈরি হতো আর তাতে কাজ করতেন প্রায় আটশ বাবুর্চি আর তার সহযোগীরা। উনুনঘর ছাড়াও এখানে পানীয়, বেকারি, দুগ্ধজাত দ্রব্য ইত্যাদির জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। বিশাল বিশাল উনুনে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রাজকীয় খাবার তৈরি হতো। বলা হয়ে থাকে প্রতিবার খাবারের আগে সম্রাটের খাবার চেখে দেখার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ ছিল। প্রথমে তাঁকে দিয়ে খাবার চেখে দেখানো হতো খাবারে বিষ বা অন্য ক্ষতিকারক কিছু মেশানো আছে কি না, তারপর সম্রাট খাবার খেতেন। উনুনের ধোঁয়া বাইরে বের হবার জন্য ২০টি চিমনি স্থাপন করা হয়েছিল।

রন্ধনশালার পাশেই সুলতানের নিজস্ব সংগ্রহের রূপো ও পোরসেলিন বা চীনামাটির বাসনপত্রের বিশাল সংগ্রহালয়। চিনামাটির ডিনার সেটের শখ সুলতানদের পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই। সুলতানদের সংগ্রহে প্রায় সাড়ে ষোলো হাজার পিস চীনামাটির বাসনপত্র ছিল। এর মধ্যে কিছু পাত্রে খাবার রাখলে তার রং পরিবর্তন হতো যদি তাতে বিষ মেশানো থাকত। রাজকীয় রান্নাঘরে তুর্কী রান্নার সুবাসে মশগুল হতে হতে ( অবশ্যই কল্পনায়) ভাবলাম একবার এদের সংসদ ভবন ঘুরে আসি। গোলাপ বাগান পার হলে সংসদ ভবন। সুলতানদের সব কিছুই বিশালাকৃতির, এমনকি গোলাপ ঝাড়ও যে গোলাপ নাড়িয়ে হাওয়া দিচ্ছে তার আকার আমাদের নাস্তা খাবার প্লেটের সমান। সুলতানের সংসদ ভবন বা মন্ত্রীসভার কার্যালয়ের স্থাপত্যকলা যে কোনো প্রাসাদের চেয়ে কম নয়, দেয়ালের চিত্রে রোকোকো বা ইউরোপীয় চিত্রকলা অনুসরণ করা হয়েছে। বারান্দার ভেতরের ছাদে কাঠের ওপর সবুজ রং করা আর তাতে স্বর্ণের কারুকাজ। ভবনে ঢোকার রাজকীয় জানালা পুরোটাই রূপোর উপর সোনার গিল্ট করা গ্রিলে ঢাকা। গ্রিল বসানোর কারণ যেন বাইরে থেকে যথেষ্ট পরিমান আলোহাওয়া প্রবেশ করতে পারে। এ ভবনে তিনটি বিশালাকার কক্ষের প্রথমটি সভাকক্ষ, দ্বিতীয়টি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দপ্তর ও তৃতীয়টি নথিপত্র বা দলিল বা রেকর্ড রুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

হেরেমের সিলিং আর্ট

 

মন্ত্রীসভা পেরোলে তৃতীয় প্রাঙ্গণ, সুলতানের দরবার বা রাজদরবার। এখানে বসে সুলতান বিদেশী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতেন এবং রাজকার্য পরিচালনা করতেন। সুলতানের দরবারের পাশেই বিশালাকার রাজকীয় গ্রন্থাগার। সুলতান আহমেত (৩) এর সংগ্রহের বই ছাড়াও সুলতানদের ব্যবহৃত পোশাক এখানে প্রদর্শিত আছে। সোনা, রূপা, বিভিন্ন হীরে জহরতের বুননে শোভাময়ী অঙরাখা, আনুষ্ঠানিক পোশাক, উর্দি সুলতানের শান শওকতের কথা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়। কয়েক দিন এখানে পার করে দেয়া যায় সুলতানের বিশাল প্রাসাদ আর তার জাঁকজমক দেখে। পাশেই রাজকীয় কোষাগার। এখন কোষাগার ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছে সুলতানের সংগ্রহের মূল্যবান অলংকার বা হীরে জহরত, চিত্রকলা ইত্যাদি সংগ্রহালয় হিসেবে। এ কক্ষ তিনটিতে সুলতান সুলেমানের মূল্যবান হীরা জহরতখচিত তরবারি রয়েছে, রয়েছে সুলতান আহমেত (১) এর সিংহাসন যা মাদার অফ পার্ল দিয়ে সাজানো, সুলতানের যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত সোনার তৈরি দেহোত্রান বা বর্ম। আরো আকর্ষণীয় জিনিসটি হচ্ছে, রাজকীয় ছোরা বা ড্যাগার যার বাট সোনার তৈরি, এর ওপর তিনটি বড় বড় পান্না বসানো তার চারপাশে হীরে জহরতে খচিত। ছোরার খাপখানিও সোনার তৈরি। সোনার তৈরি খাবার পাত্র। সুলতান ও তাদের নিজস্ব ঘোড়ার পরিধেয় গহনা দেখে প্রাচীন যুগের বাহারী জীবনের কথা সহজেই কল্পনা করা যায়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় অলংকারটি হলো স্পুনমেইকার্স ডায়মন্ড। হীরেটি অশ্রুবিন্দু আকারের ৮৬ ক্যারেটের এবং আরো ৪৯টি ছোট ছোট হীরে দিয়ে দুই সারিতে ঘেরা। সুলতান মেহমেত (৪) যেদিন সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সেদিন তিনি এটি পরিধান করেছিলেন। এই কক্ষে ছবি তোলা নিষেধ বলে মনের ভেতর সব অলংকারের ছবি গেঁথে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।     

অস্ত্র সংগ্রহালয় হিসেবে আরেকটি ভবনের দ্বার পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে ১৪৫৩ থেকে শুরু করে ১৯২৩ সাল অবধি অটোম্যান সম্রাটদের ব্যবহৃত অস্ত্র যেমন ঢাল তলোয়ার, বর্ম, শিরোস্ত্রাণ, তীর, ধনুক, বন্দুক, পিস্তল, ছোরা ইত্যাদি রাখা আছে। প্রত্যেকটি অস্ত্র বা তার বাট সোনা ও মূল্যবান পাথর  দিয়ে কারুকাজ করা। অস্ত্র সংগ্রহালয় পার হলে ফুলবাগান আর তার পরের ভবনের নাম পবিত্র কক্ষ বা সুলতানের ব্যক্তিগত বা গোপনীয় কক্ষ। যেহেতু পবিত্র কক্ষ তাই ভেবেছিলাম ভেতরে হয়তোবা ধর্মীয় পুস্তক ইত্যাদির দেখা মিলবে। ঢোকার প্যাসেজে রাখা আছে উনিশ শ' শতকের কাবা শরিফের গিলাফ, হাজরে আসওয়াদ আবৃত করে রাখা সোনার আচ্ছাদন, কাবা শরিফের দরজার হাতল ইত্যাদি। কিন্তু মূল কক্ষের ভেতরে যে আমার জন্য এত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করবে ভাবতেই পারিনি। (চলবে)

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়