ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমরা ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে

সুমন্ত গুপ্ত   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ২১ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:১২, ২১ জানুয়ারি ২০২১
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমরা ভারতের সীমানায় দাঁড়িয়ে

ওই দেখা যায় ঝুলন্ত সেতু

অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি মাত্র, হঠাৎ মোবাইলফোন বেজে উঠল। ভাবলাম কোনো গ্রাহক হয়তো ফোন দিয়েছেন। কিন্তু তা নয়। দেখলাম সমীরণ ফোন দিয়েছে। ফোন ধরতেই ওপর প্রান্ত থেকে সমীরণ বলল- আগামীকাল পিকনিকের কথা মনে আছে তো? বললাম, আছে। কাল সময়মতো পাবে আমাকে।

রাতে ঘুমাতে একটু বিলম্ব হয়ে গেল। যদিও ইচ্ছে ছিল একটু আগেই শুয়ে পড়ব, কিন্তু হলো না। সাতসকালে ফোন বেজে উঠল। এবার উঠতেই হলো। দ্রুত তৈরি হয়ে নিলাম। বাসা থেকে সোজা গেলাম জিন্দাবাজার নেহার মার্কেটের সামনে। সেখানে বন্ধুরা অপেক্ষা করছিল। ও কথায় কথায় বলাই হলো না- কোথায় যাচ্ছি? আমরা যাচ্ছি মেঘালয়ের কন্যা জাফলং ঘুরতে। সঙ্গী স্কুলবেলার সব বন্ধুরা। বন্দরবাজার, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ পেড়িয়ে আমাদের বাস এগিয়ে চলছে। পথে প্রাতঃরাশের জন্য বিরতি।

ভারতীয় সীমান্তে রঙিন নৌকা

 

বিরতির পর আবার চলা শুরু। একসময় পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। শীতকাল, তাই জাফলংয়ের অন্যরূপ। প্রকৃতির রূপের পরিবর্তনের সঙ্গে জাফলংয়ের রূপেরও পরিবর্তন হয়। আমরা পদব্রজে  এগিয়ে যেতে থাকলাম। শতাধিক সিঁড়ি পেড়িয়ে আমরা চলছি এগিয়ে। শীতকাল, তাই ডাউকি অগভীর, মৃদু শান্ত। অথচ বর্ষা এলেই এর রূপ পালটে যায়। তখন এখানে জল থইথই করে! সেই প্রবল জলস্রোত বহুদূর থেকে ভাসিয়ে আনে শত শত টন ওজনের প্রকাণ্ড পাথরের বোল্ডার।

আশপাশ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ভটভট আওয়াজ তুলে এদিক-ওদিক চলে যাচ্ছে। সেগুলো সৌখিন পর্যটকদের জন্য। আরেক ধরনের নৌকা আছে- সরু লম্বা আর গভীর খোলবিশিষ্ট। ওগুলো কাজের নৌকা। স্থানীয়দের জীবিকা অর্জনের সহায়। নৌকা ভর্তি করে নুড়ি পাথর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে মহাজনের মোকামে। আমরা পদব্রজেই জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এগিয়ে যেতে লাগলাম। পাথুরে বেলা ভূমি পেড়িয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম জিরো পয়েন্টে। এই শীতে ভেবেছিলাম তেমন পর্যটক দেখতে পাবো না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল! হাজার হাজার পর্যটকের কলরবে মুখরিত পুরো এলাকা। কিছু দূর যাওয়ার পর শুনতে পেলাম বাঁশির শব্দ। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম আমাদের বর্ডার গার্ড আর ভারতের বিএসএফ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীদের সরিয়ে দিচ্ছে।

শতাধিক সিঁড়ি পেরিয়ে ওঠা-নামা করতে হয়

 

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমরা বাংলাদেশের সীমানা পেড়িয়ে ভারতে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সামনেই পিয়াইন নদীর জলে দাপাদাপি করছে শিশু থেকে নবীন, প্রবীণ। ছোট ছোট ডিঙি নৌকার দেখা পেলাম। নদীতে বেশ কয়েকটি বড় নৌকা ভেসে বেড়াতেও দেখলাম। আমি মনে মনে ভাবলাম নৌকায় ভেসে বেড়াতে পাড়লে মন্দ হতো না। একটু এগিয়ে যেতেই একজন বললেন, এখানে নৌকায় চড়া যাবে না। আমাদের বন্ধু অরবিন্দু বলে উঠল- তাহলে তারা চড়েছেন কীভাবে? লোকটি বললেন, যাদের ভেসে বেড়াতে দেখছেন তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক। তাছাড়া বেশি দূর যেতেও পারবেন না।

কিছুটা মন খারাপ হলো আমাদের। কিন্তু আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের মন ভুলিয়ে দিলো। চোখের সামনে দেখতে পেলাম সেই ঝুলন্ত ব্রিজ। ছোটবেলায় নৌকা করে জিরো পয়েন্টে এসে দূর থেকে ব্রিজ দেখতাম। আজ চোখের একদম সামনে ঝুলন্ত ব্রিজ! কয়েক ক্রোশ এগিয়ে গেলেই ছুঁতে পারবো! কিন্তু শত ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারবো না। বর্ডারের সীমারেখা আমাদের বেঁধে রেখেছে।

পেছনে পাহাড় রেখে লেখকের সেলফি 

 

বাংলাদেশের পিয়াইন নদীর অববাহিকায় ভারতের মেঘালয় প্রদেশের গা ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং অবস্থিত। সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকি অঞ্চল। আসামের ওম নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে ডাউকি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ওম নদী আবার উৎপন্ন হয়েছে আসামের জৈন্তা পাহাড় থেকে। এই ডাউকি নদীই বাংলাদেশে ‘পিয়াইন’ নদী নামে পরিচিত। এই পিয়াইন নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে জাফলং। একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে নদী। এই দুয়ের সম্মিলনী এই স্থানকে দিয়েছে অপূর্ব এক ব্যঞ্জনা! ফলে ভ্রমণপিপাসু বাংলাদেশিদের কাছে এটি হয়ে উঠেছে অতি প্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রে।

কীভাবে যাবেন
জাফলং যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে সিলেট। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেনযোগে সিলেটের ভাড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা। সিলেট শহর থেকে জাফলংয়ের দূরত্ব ৬০ কি.মি.। সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। রাস্তা মোটামুটি ভালো। অবশ্য ভালো পথ শুধু তামাবিল পর্যন্ত। এরপর প্রায় কাঁচা রাস্তা। সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড, শিশুপার্ক, সোবহানীঘাট- এই তিনটি জায়গা থেকে জাফলং যাওয়ার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬০ টাকা।  
 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়