ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সৌন্দর্যে মোড়ানো নেপিয়ারে অবিশ্বাস্য বিড়ম্বনা

রবিউল মিলটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১২, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:৩০, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
সৌন্দর্যে মোড়ানো নেপিয়ারে অবিশ্বাস্য বিড়ম্বনা

নেপিয়ারে এসেই পড়তে হলো বিড়ম্বনায়! নাহ্ আমি পড়িনি, বিড়ম্বনায় পড়েছে ওরা দুজন। মাহমুদ এবং জয়ন্ত। ঢাকাসহ আশপাশে আবাসন খাতে আমরা অনেকরকম ভোগান্তির কথা শুনেছি। ভুয়া ব্যবসায়ী বা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং দিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার নজিরও অনেক। অনেকে আবার প্লট বুকিং দিয়ে রাখে ঠিকই, কিন্তু বছরের পর বছর প্লটের পানি আর শুকায় না, প্লটও সময় মতো বুঝে পায় না। অথবা এক জায়গা দেখিয়ে অন্য জায়গা গুছিয়ে দেয় দালাল বা সিন্ডিকেট করা জমির মালিক।  

এমন ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ। তাই বলে নেপিয়ারেও- নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে? অন্য কোনো দেশ হলে বিশ্বাস হতো। নিউজিল্যান্ডে এমন ঘটনা কেউ শুনলেও আমাদের পাগল ভাবতে পারেন। অথচ সত্যি সত্যি এমন ঘটনা ঘটেছে। তার আগে নেলসন থেকে নেপিয়ার আসার পথটা শেয়ার করি। নেলসন থেকে আমরা আজ এসেছি নেপিয়ারে। আমার আর মাহমুদের এক ঘণ্টা আগে জয়ন্তর ফ্লাইট থাকায় ও আগে এসেছে। তবে আমরা নেপিয়ার এয়ারপোর্টে নেমে ওকে পেয়ে যাই। তখন অবাক হয়ে মাহমুদ জানতে চাইল- আপনার ফ্লাইট আগে ছিল না? এখনও এয়ারপোর্টে কেন? 

ওরা কথা বলতে বলতে আমি ভাবছিলাম ওর ফ্লাইট সম্ভবত দেরিতে ছেড়েছিল অথবা লাগেজ পেতে দেরি হয়েছে। কিন্তু জয়ন্ত একগাল হেসে বলল, সেসব কিছু না। আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি। একা একা গিয়ে কি করতাম? তাছাড়া একটু অপেক্ষা করে এক ট্যাক্সিতে গেলে সবারই লাভ। 

রুমের সামনে বসে আছে মাহমুদ। বাইরের সৌন্দর্যে সেও মুগ্ধ

জয়ন্ত সত্যি বলেছে। বিদেশে ট্যুরে আপন বলতে দেশ থেকে যারা ট্যুর কাভার করতে যায় তারাই। প্রথমত লাভ এটাই। দ্বিতীয় লাভ অর্থনৈতিক সাশ্রয়। দুই, তিন, চারজন একসঙ্গে চলাফেরা করলে পরিবহন খরচ, খাওয়া-দাওয়ার খরচসহ সব কিছুতেই সাশ্রয় হয় কিছুটা। আর বিদেশ বিভূঁইয়ে নিঃসঙ্গতাও কাটে অনেকটা। জয়ন্ত এয়ারপোর্টে থেকে যাওয়ার আরও একটি কারন হলো, মাহমুদ আমার সাথে একই ফ্লাইটে এলেও নেপিয়ারে থাকার জন্য ওরা দুজন একসাথে হোটেল বুক করেছিল। বিপত্তি বা বিড়ম্বনা ঘটেছে এখানেই। 

ওদের দুজনের পরিচয় দেয়া হয়নি। দুজনই ক্রীড়া সাংবাদিক। মেধাবী। মাহমুদ কাজ করছে বিডিক্রিক টাইমে। আর জয়ন্ত ক্রিক ফ্রেনজিতে। খেলাধুলা বিষয়ক অনলাইন ভিত্তিক এই পোর্টাল দুটি পাঠক চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। দুজনই অত্যন্ত মার্জিত, বিনয়ী। আমাদের একজন শিক্ষক বলতেন- জীবনে বড় হতে হলে বিনয়ী হতে হবে। বিনয়ী হলে কাজ একটু কম বুঝলেও পার পেয়ে যাবে। কিন্তু তুমি যদি ভালো কাজ করেও দম্ভ বা অহমিকা পোষণ করো তাহলে তোমার চলার পথ কঠিন হবে। গুরুজন, শিক্ষক, পিতামাতা এসব শিক্ষা সবাইকেই নিশ্চয়ই দিয়েছেন। এটা স্বাভাবিক।  

আমরা তিনজন নেলসন থেকে সকালের ফ্লাইটে এসেছিলাম অকল্যান্ডে। সেখানে আমার এবং মাহমুদের ট্রানজিট ছিল সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। অর্থাৎ অকল্যান্ড এয়ারপোর্টে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বসে থেকে তারপর বিকালের ফ্লাইটে নেপিয়ার। ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে এতো সময় বসে থাকতে হবে ভেবে আগেই টায়ার্ড ফিল করছিলাম আমরা। দুজনে সিদ্ধান্ত নিলাম এই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আমরা কাজে লাগাতে পারি। আমরা সাঁটল বাসে চলে যেতে পারি অকল্যান্ড সিটিতে। রওনা হওয়ার সময় পূর্ব পরিচিত দুজনের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। তাদের একজন শাম্মি আপু। অন্যজন জয় ভাই। শাম্মি আপু আমাদের ইচ্ছের কথা শুনেই বললেন, আমরা যদি যাই তাহলে তিনি অফিস থেকে আগেই বের হবেন। আর জয় ভাই বললেন, তার একটু কাজ আছে। শেষ করে আমাদের এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে আসবেন।

অকল্যান্ড কুইন্স স্ট্রিট বা সিটি সেন্টার থেকে এয়ারপোর্টের দূরত্ব প্রায় আধা ঘণ্টার। আজ আবার ওয়ার্কিং ডে। তাই কিছুটা ট্র্যাফিক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শাম্মি আপু নিউজিল্যান্ডে থিতু হয়েছেন বছর ছয়েকের একটু বেশি। ঢাকায় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে চাকরি করতেন। কিন্তু তার বর সম্রাট ভাইয়ের সুবাদে এখানেই স্থায়ী হয়েছেন। অকল্যান্ডে তিনিও একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। আর জয় ভাই এখানে তেইশ বছর বাস করছেন। জয় ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ভাই বাংলাদেশে গ্রামের বাড়ি কোথায়? তিনি জানালেন, ঢাকার বাসিন্দা। মাহমুদ জিজ্ঞাসা করেছিল, ঢাকার বাসিন্দা বুঝলাম, কিন্তু অরিজিনালিটি কোন জেলার? তিনি বললেন আমরা ছয় জেনারেশন ঢাকায় আছি। তবে পূর্ব পুরুষ আফগানিস্তান থেকে এসেছিলেন। মাহমুদ চুপ। কি বুঝল জানি না। আমি ড্রাইভিং সিটের পাশের সিট থেকে ঘার ঘুরিয়ে পেছনে বসা মাহমুদের দিকে তাকালাম। বললাম মাহমুদ, আপনার আমার পূর্ব পুরুষেরাও ওই আফগানি। মাহমুদের চোখ জোড়া গাড়ির কাচ গলে এতক্ষণে বাইরে চলে গেছে। অকল্যান্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করছে মাহমুদ। কিছুটা অন্যমনস্ক। সম্বিৎ ফিরতেই বলল, জী ভাই, ওই তো খ্রিস্টাব্দ বারশোর দিকে এদেশে আফগানদের আবির্ভাব হয়েছিল। 

আমার রুমে রাতের খাবার খাচ্ছে মাহমুদ, জয়ন্ত

নেপিয়ার এয়ারপোর্ট থেকে আমরা ট্যাক্সি নিলাম। এ কয়দিনে নিউজিল্যান্ডে ট্যাক্সির ব্যবহার ভালো করে বুঝে গিয়েছি। অন্যান্য দেশ বা শহরের তুলনায় এ দেশে ট্যাক্সি চালকরা মার্জিত, সহজ-সরল। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো খুব অতিথিপরায়ণ। সারাক্ষণ এদের মুখে হাসি লেগে থাকে। স্যরি, পারডন মি, এপলজাইস- শব্দগুলো এদের ঠোঁটের আগায় থাকে। স্কুলে শিশুদের নাকি এ ধরনের বিষয়- নৈতিকতা, মানবিকতার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আমার দেখা পৃথিবীর সেরা সুখী এবং সভ্য দেশ মনে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। আমাদের তিনজনের রুট দুটি। তবে কাছেপিঠেই। ভাড়া ঠিক করে উঠে পরলাম। আমি সামনের সিটে বসে বয়স্ক চালককে আমার হোটেলের নাম আর ঠিকানা দেখালাম। তিনি চেনেন বললেন। আরো বললেন, খুব ভালো হোটেল। একেবারে সাগর পাড়ে। মিনিট বিশেক পর আমাকে হোটেলে নামিয়ে দিলেন তিনি। পেছনের সিটে মাহমুদ আর জয়ন্ত বলল- ভাই, আমরাও তো আশেপাশেই থাকছি। কাল দুপুরে মাঠে বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে যাব। আপনি ফ্রি থাকলে চলে আসবেন। আমি ওদের বললাম- আপনাদের কাজ দুপুরে, আমার বিকালে। মাঠ সাজানোর কাজ শুরু হবে সকাল থেকেই। তবে বিকালে গিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানের ভালোমন্দ ব্যাপারটা তদারকি আমাকে করতে হয়।

ওরা চলে গেলো। এখন স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে সাতটা। হ্যাঁ তাই-ই। কারণ, নিউজিল্যান্ডের নেপিয়ারে নয়টার পর সূর্য ডোবে। তাহলে তো এই নয়টা পর্যন্ত অন্তত সন্ধ্যা, তাই না? ওরা বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর আমি হোটেল রিসিপশনে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। কাচ গলে ভেতরে চোখ রাখার চেষ্টা করলাম। অন্ধকার ভেতরে, কেউ নেই। মহা বিপদ। নিউজিল্যান্ডে বিকাল পাঁচটার পর অফিস বন্ধ। এখন তো অনেক বেজে গেছে। তাহলে? রিসিপশনের দরজায় একটা ফোন নম্বর পেয়ে ফোন করলাম। কেউ ধরল না। আমার রুম বুক দেয়া ছিল আগে থেকেই। অফিস টাইম শেষ বলে এখন আর কেউ ফোন ধরবে না  বুঝলাম, তাই বলে আমার মতো সম্মানিত অতিথি কোথায় রাত্রিযাপন করবে সেটা তারা ভাববে না? হ্যাঁ, ভেবেছে! আমি বুকিং ডটকম থেকে রুম বুকিং করেছিলাম। আমার মেইলে একটা কনফার্মেশন বুকিং-এর বার্তা এসেছিল। মোবাইলে মেইল ওপেন করে ওটায় একটা ফোন নম্বর পেয়ে কল করলাম। একজন মহিলা রিসিভ করলেন। আমি জানালাম আমার নাম মিলটন। আজ একটা রুম বুক দেয়া ছিল। কিন্তু অবস্থা তো এই!

ভদ্রমহিলা আমার বুকিং নম্বর চেক করে ফোনেই আমাকে গাইডলাইন দিলেন। সেটা এরকম– তুমি রিসিপশন থেকে রাইটে যাও। শেষ মাথায় তিন নম্বর কক্ষের সামনে যাবে। আমি কথা বলতে বলতে এগোতে থাকলাম। তিনি জানালেন তিন নম্বর রুমের সামনে একটা ম্যাট আছে। আমি দেখলাম ওটা পাপোশ। তিনি বললেন ওর নিচে তোমার বুক করা রুমের চাবি আছে। আমি চাবি নিলাম। ধন্যবাদ দিলাম তাকে। সেও আমাকে এনজয় অ্যান্ড গুড নাইট জানাল। আমি ফোন কেটে দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। ক্ষুধার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে পেটের অবস্থা। সে অবস্থা শরীরে, মনেও বিরাজমান। এর মধ্যে হোটেলের রুম না পেয়ে উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গিয়েছিল। দুপুরে কোনো রকম খেয়েছিলাম অকল্যান্ড সিটিতে গিয়ে। শর্মা জাতীয় ইন্ডিয়ান খাবার। রুটির ভেতরে কিছু লতা আর ঘাস পাতা জাতীয় অর্থাৎ বাধাকপি, পেঁয়াজ আর গাজর কুচি। সাথে ভেড়ার মাংস স্লাইস করে মোড়ানো। ভাতের জাতি আমরা। আগের রাতেও নেলসনে ভাত জোটেনি। পাইনি তাই খাইনি। তবে পেটপুরে টার্কিশ খাবার খেয়েছিলাম। কোথায় যেন পড়েছিলাম আমরা যে ভাত খাই এটা নিতান্তই নেশা ছাড়া কিছু না। আসলেই তাই। দুই একবেলা অথবা দুই চারদিন ভাত না খেলে আমরা অস্থির হয়ে যাই। অনেকে অসুস্থ অনুভব করেন। এটা ওই নেশা হওয়ার কারণিই নাকি।

হোটেল রুমের সামনে নেপিয়ার ঘাসের লন

রুকে ঢুকেই মন প্রশান্তিতে ভরে গেলো। বিশাল বড় রুম! লাগেজ একপাশে রেখে রুমের আরেক মাথায় গিয়ে পর্দা সরালাম দুই পাশে। এবার মুগ্ধ হলাম পূর্ণরূপে। কাঁচের দরজার ওপাশে চওড়া লন। বিশ্বজুড়ে যে ঘাসের নাম এতদিন শুধু শুনেছি সেই নেপিয়ার ঘাসে লনটাকে মনে হচ্ছে সবুজ আর পবিত্র কার্পেট বিছিয়ে রাখা। চওড়া লন পেরিয়ে চোখ যায় আরও সামনে। তারপর? তারপর নীল সমুদ্র। যে নীলের শেষ দেখা যায় না। আর সমুদ্রের উপরে অনন্ত অম্বর। আমার মন অজান্তেই বলে দিলো- এই জায়গা ছেড়ে আর কোথাও যাব না। এ রকম স্বর্গীয় সুন্দর আর কোথাও নেই। আজীবন এখানেই থেকে গেলেই বুঝি জীবন সার্থক। 

আমি কেডসজোড়া খুলে দরজা গলে বাইরে বের হলাম। নেপিয়ারের সবুজ গালিচায় পা ডুবিয়ে সারা শরীরে নরম অনুভূতি মেখে নিলাম। হাঁটতে হাঁটতে লন পেরিয়ে আমি সাগর পাড়ে চলে এলাম। ছোট মৃদু ঢেউয়ের সাথে সমুদ্রের তাজা বাতাস বুক ভরে নিলাম। পকেটে ফোন বেজে উঠতেই আমি স্বপ্ন জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম। মাহমুদ ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে মাহমুদ আর জয়ন্তের হাহাকার। কি হয়েছে জানতে চাইলে মাহমুদ বলল ভাই, আমরা থাকার জন্য যে হোটেল বুক করেছিলাম সেটা তো আসলে হোটেল না। মানে কি? তাহলে কি বুকিং দিয়েছিলেন? ওরা বলল, আমরা তো হোটেল হিসেবেই দুজনের থাকার জন্য বুক করেছিলাম। কিন্তু এটা আসলে অন্য জিনিস। কি সেটা? নেপিয়ার পুরোদস্তুর পর্যটকদের জায়গা। তাছাড়া সামনে বড়দিনের জন্য লম্বা ছুটি এদের। এখানে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ ছাড়াও জমি ভাড়া দেয়া হয়। কি বলেন এসব? জমি ভাড়া নিয়ে কী করে? মাহমুদ বলল ভাই, খোলা জায়গায় মাঠের মধ্যে নাম্বার দিয়ে রাখা হয়েছে। বুকিং ডটকমের মাধ্যমে হোটেলের মতো এরকম জায়গা বুক করা যায়। এভাবে ভাড়া নিয়ে পর্যটকরা অনেকেই ক্যারাভ্যান নিয়ে এসে কয়েকজন থাকে। অনেকে আবার তাঁবু নিয়ে আসে থাকার জন্য। আমাদেরও জিজ্ঞাসা করেছে আমরা তাঁবু এনেছি কিনা? এটা কেমন কথা ভাই আপনিই বলেন? এখন কী করবো আমরা? 

আমি দেখলাম অবস্থা বেগতিক। বললাম, আপনার চলে আসেন আমার এখানে। সারাদিন অনেক জার্নি করেছেন, পেটে ক্ষুধাও যথেষ্ট। এত মানসিক চাপ নিতে পারবেন না। আসেন আসেন। ওরা বলল ভাই, আপনি একার জন্য রুম নিয়েছেন, আপনাকে জ্বালাব এখন? তাছাড়া তিনজনকে থাকতে দেবে কেন এক রুমে? আমি বললাম আসেন তো আগে, পরেরটা পরে দেখা যাবে। ওরা ইতস্তত করতে করতে রাজী হলো।  আমি ভাবলাম ওদের যদি আমার এখানে ডেকে না আনি তাহলে নির্ঘাত রাস্তায় রাত্রি যাপন অবধারিত। এই ঠাণ্ডার মধ্যে লেপ কাঁথা ছাড়া দুরূহ ব্যাপার। আমার এখানে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে বললে শুনবে হয়তো। কারণ এ দেশের মানুষ অত্যন্ত মানবিক। আমরা তো এখানে অতিথি। 

খানিক পর ওরা একটা ট্যাক্সি করে চলে এলা আমার এখানে। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকল। অনেক হয়েছে এবার ফ্রেশ হয়ে নেন রাতের খাবার খেতে বের হতে হবে। শো এতক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। রাত দশটার কাছাকাছি বাজে এখন। ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। ভাতের দেখা পাইনি গত দুদিন। এখনও যদি না খেয়ে বা কুকিজ টুকিজ খেয়ে ঘুমাতে হয় তাহলে মুশকিল। মাহমুদ নিমিষে তৈরি হয়ে নিল। আর জয়ন্ত? সবসময় লেট। তিনজন বের হতে হতে অনলাইনে ইন্ডিয়ান রেস্তরাঁ খুজতে শুরু করলাম। পেয়েও গেলাম ছয় সাত মিনিট হাঁটা দূরত্বে। জয়ন্ত কল দিলো- রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে জানালো। তবে খাবার পার্সেল দিতে পারবে। আমি বললাম ওটাই সই। ফোনে খাবার অর্ডার দিলাম আমরা। দশ মিনিটের বেশি লাগলো রেস্তরাঁ খুঁজে পেতে। আমরা যাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই খাবার দিয়ে দিলো।

নেপিয়ার এয়ারপোর্টের বাইরে লেখক

রুমে এসে মাহমুদ জিজ্ঞাসা করলো ভাই, খাবো কীভাবে? আমি রুমের সাথে লাগোয়া কিচেন কেবিনেট খুললাম। মাহমুদ তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো। এই কেবিনেটের তাকে তাকে সাজানো খাবার প্লেট, গ্লাস, মগ, চামচ, কাটা চামচ, ওভেন, পানি গরম করা কেটলি, তিন চার রকমের চায়ের টি ব্যাগ, কফির প্যাকেট, গুঁড়া দুধ, প্যাকেট চিনি, বিস্কিট ইত্যাদি। বাহ, তাহলে তো আর কথাই নেই বলে মাহমুদের দু’গাল হাসিতে দুপাশে চওড়া হয়ে গেলো। জয়ন্ত ছোট টেবিলে খাবার সাজাতে হিমশিম খাচ্ছে দেখে আমি বললাম নিচেই বসি আমরা। জায়গা বড় আছে। জয়ন্ত খাবার নিয়ে কার্পেটের উপর বসে পড়ল। হাতে হাতে তিনজনই খাবারের প্লেট, বাটি, চামচ ধুয়ে বসে পড়লাম খেতে। 

ছাত্রজীবনের হলের এবং ম্যাচের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আজকে আমরা খাবার অর্ডার করেছি ভেড়ার মাংস, ডাল মাখানি আর বাসমতী চালের ভাত। তা হলে হবে কী, আমার কাছে মনে হচ্ছিলো এ যেন ছাত্রজীবনে হোস্টেল বা ম্যাচের রান্না করা ভাত, আলু ভর্তা, ডাল আর ডিমভাজা। এককথায় অমৃত!  

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়