ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কষ্টার্জিত জয়ে সুপার টুয়েলভের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

মাসকট থেকে সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২০ অক্টোবর ২০২১  
কষ্টার্জিত জয়ে সুপার টুয়েলভের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

রয়্যাল পুলিশ বারবার সরে যেতে বলছিলেন প্রবাসী বাঙালিদের। অনড় বাঙালিরা তবুও সরেন না! বেশ কয়েকটি বড় বড় জটলা মিলে শ-তিনেক মানুষতো হবেই। তাদের দাঁড়িয়ে থাকার একটাই কারণ, পাশেই আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে লাল সবুজের দল লড়ছিল স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে। টিকিট পাননি তাই উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখতেতো বারণ নেই। কঠোর আইনের শহর মাসকটের পুলিশও হাল ছেড়ে দেন। কারণ এই প্রবাসী বাঙালিরা জয় না দেখে যাবেন না। 

শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ' মিছিল করে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেছেন তারা। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ওমানকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর দল জয় পেয়েছে ২৬ রানে। ওমানি ব্যাটসম্যানদের বারবার চোখ রাঙানির পরও মোস্তাফিজুর রহমানের কাটার ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ বাঁচিয়ে রাখে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের আশা। এই জয়ের পর গ্রুপ বি'তে বাংলাদেশের অবস্থান ওমানের পরে তৃতীয় স্থানে। দুই ম্যাচ খেলে একটি করে জয়ের পরও রানরেটে এগিয়ে থেকে ওমান অবস্থান করছে দ্বিতীয় স্থানে। স্কটল্যান্ড দুই জয়ে রয়েছে শীর্ষে।  

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এবার পাপুয়া নিউ গিনি। তাদের বিপক্ষে জয়ের সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে স্কটল্যান্ড-ওমানের ম্যাচেও। বাংলাদেশ যদি পাপুয়া নিউ গিনিকে হারাতে পারে আর স্কটিশরা যদি ওমানের বিপক্ষে জয় পায় তাহলে মাহমুদউল্লাহদের রাস্তা পরিস্কার। না হয় যেতে হবে কঠিন সমীকরণে। রান রেটের ম্যারপ্যাচে কার কপাল খুলবে কে জানে!

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু করে স্বাগতিক ওমান। তাসকিনের আহমেদের প্রথম ওভারে তুলে নেয় ১২ রান। পরের ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান উইকেট নিলেও এলোমেলো বোলিংয়ে দেন আরও ১২ রান। পাঁচ ওয়াইডসহ ওই ওভার শেষ হয় ১১ বলে। 

দলটি পাওয়ার প্লে’তে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান তোলে। এক পাশে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও আরেক পাশে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন জতিন্দর সিং। ইনিংসের ১৩তম ওভারের শেষ বলে সাকিব আল হাসান জতিন্দরকে স্কয়ারলেগে লিটনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান। দূর করেন পথের কাটা। এনে দেন স্বস্তি। এর আগে ১০ রানে ক্যাচ তুলেছিলেন মোস্তাফিজের বলে। কিন্তু বল হাতের মুঠোয় জমাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। 

৩৩ বলে ৪০ রান করা জতিন্দরের আউটের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। পরের ৭ ওভারে ৩৭ রান নিতে ওমান হারায় ৫ উইকেট। দুই ওভার পর আবার বোলিংয়ে এসে জোড়া আঘাত করেন সাকিব। মোস্তাফিজ ঠিক পরের ওভারে এসে নেন আরো ২ উইকেট। জতিন্দরের ৪০ রান ছাড়া ২০ রানের উপর করেছেন মাত্র ১ ব্যাটসম্যান। তিনে ক্যাশপ প্রজাপাতি খেলেছেন ১৮ বলে ২১ রানের ইনিংস। এছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান ২০ রানের ঘর পেরোতে পারেননি। ১২ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন মোহাম্মদ নাদিম। 

বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। সমান ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন সাকিব। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে প্রাণ ফেরানো মেহেদী ৪ ওভারে ১৪ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। তার বোলিং স্পেলে ডট বল ছিল ১২টি।   

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের হাফসেঞ্চুরি ও সাকিবের ব্যাটে ভর করে দেড়শ পার করে লাল সবুজের দল। আগের ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৫০ বলে ৬৪ রান। ৪টি ছয় ও ৩টি চারের মারে এই রান করেন নাঈম। এ ছাড়া সাকিব ২৯ বলে ৪২ রান করেন। তার ইনিংসে ৬টি চারের মার ছিল। দুইজনের জুটি থেকে আসে ৮০ রান।

সাকিব-নাঈম ছাড়া সর্বোচ্চ রান আসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে (১৭)। এ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দেখেননি দুই অঙ্কের মুখ। সৌম্যর পরিবর্তে নাঈমকে নামানো ছাড়াও ব্যাটিং অর্ডারে বেশকিছু অদল বদল নিয়ে এসেছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। এই খেলাকে কেন্দ্র করে এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। সাকিবের পরিবর্তে তিনে নিয়ে আসায় হয় মেহেদী হাসানকে। ৪ বল খেলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি। তিনের পরিবর্তে চারে নামেন সাকিব। 

নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেনকে নিয়ে আসা হয় মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আগে। দুজনেই বাট হাতে ব্যর্থ। ৪ বলে ৩ রান নিয়ে সোহান ও ৫ বলে ১ রান নিয়ে আফিফ ফেরেন সাজঘরে। এরপর মাহমুদউল্লাহ এসে ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেললেও মুশফিকুর রহিম ছিলেন ব্যর্থ। তার ব্যাট থেকে আসে  ৪ বলে ৩ রান। ইনিংসের সবশেষ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ততক্ষণে ১৫৩ রানের পুঁজি গড়ে ডমিঙ্গোর শিষ্যরা 

ওমানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট করে নেন বিল্লাল খান ও ফয়েজ বাট। এ ছাড়া ২টি উইকেট নেন কালিমুল্লাহ। ১ উইকেট জমা পড়ে জিসান মাকসুদের ঝুলিতে। 

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর কষ্টার্জিত হয়ে স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে মিশন এখনও পূর্ণ হয়নি। সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করতে পারলেই মাহমুদউল্লাহরা হাসতে পারবেন। এমন কথা সাকিব পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বলে গিয়েছেন। 

 

মাসকট/রিয়াদ/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়