পৈত্রিক বাড়িতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ কতদূর
শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম
পাবনা শহরের হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি
যার ভুবন ভোলানো হাসিতে আজও বুদ হন চলচ্চিত্র প্রেমীরা তার নাম সুচিত্রা সেন। আসল নাম রমা সেন। একজন বাঙলী নারী থেকে মহানায়িকা হয়ে ওঠা সুচিত্রা সেনের আজ নবম প্রয়াণ দিবস।
মৃত্যুর পর পাবনায় কিংবদন্তী সুচিত্রা সেনের স্মৃতি বিজরিত পৈত্রিক ভিটা দখলমুক্ত হলেও সেটি এখনো অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। জেলা প্রশাসনের দখলে থাকা বাড়িটি যেন প্রাণহীন। বাড়ির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। বাড়ি উদ্ধারের প্রায় ৯ বছর পার হলেও বাড়িতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ গড়ে তোলার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। নামমাত্র একটি সংগ্রহশালার ফলক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হতে হয় দর্শনার্থীদের।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে মারা যান বাংলার কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর ছয় মাস পর ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই উচ্চ আদালতের নির্দেশে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি দখলদার মুক্ত করা হয়। তারপর থেকে সেখানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা নামফলক লিখে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়।
বাড়ির ভেতরে সুচিত্রা সেনের বিভিন্ন সিনেমার পোস্টার সাটানো রয়েছে। একটি টেলিভিশনে তার অভিনীত সিনেমার গান বাজানো হয়। এছাড়া কিছু নেই। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে বাড়িটি।
সুচিত্রা সেন তার স্কুল জীবনের ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন পাবনা জেলা শহরের দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সুচিত্রা সেনকে হারানোর শোক যেন এখনও তাড়া করে ফিরছে পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সবাইকে। সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক ভিটায় ‘সুচিত্রা স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করার দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় সাংস্কৃতিককর্মীদের আক্ষেপের শেষ নেই।
সুচিত্রা সেন
অভিনয় গুণে সুচিত্রা সেন হয়ে উঠেছিলেন এপার-ওপার বাংলার চলচ্চিত্র প্রেমীদের মহানায়িকা। যার অভিনয়-সৌন্দর্য আজও দাগ কেটে আছে সবার মনে। যার শৈশবের একটি অংশ কেটেছে পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। যে বাড়ির প্রতি কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে সুচিত্রা সেনের ছুটোছুটির দিনগুলো।
সাংস্কৃতিক কর্মী আবুল কাশেম বলেন, ‘পাবনাবাসী যে উদ্যোম নিয়ে যে প্রত্যাশা নিয়ে সুচিত্রা সেনের বাড়ি উদ্ধার করেছিল, সেই প্রত্যাশার পারদ ক্রমান্বয়ে নিচে নামছে। কারণ সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা করার দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ৯ বছর পার হলো, আর কতদিন গেলে সংগ্রহশালা বাস্তবায়ন হবে তা জানা নেই।’
সংগীত শিল্পী ফাহমিদা চাঁদনী বলেন, ‘সুচিত্রা সেনের যে অভিনয়শৈলী, তার লিপসিং, তার তাকানো, তার হাসি সবকিছুই অতুলনীয়। অনেকেই তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার মতো আজ পর্যন্ত কেউ হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি তো আমাদের গৌরব। তার স্মৃতিকে ধরে রাখা দরকার।’
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, ‘সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটিতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেটি আজও প্রস্তাবনা হিসেবে পড়ে আছে। কোনো উদ্যোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুচিত্রা সেনের বাড়িসহ সারাদেশে এমন আরও অন্তত ১২টি স্মৃতি বিজরিত বাড়ি ও স্থাপনা নিয়ে একটি প্যাকেজ প্রকল্প রয়েছে। যেটির পরিকল্পনা এগোচ্ছে না। এখানে যদি সেই প্যাকেজ প্রকল্প থেকে সুচিত্রা সেনের বাড়িটি আলাদা করে প্রকল্প গ্রহণ করা যায় তাহলে একটি গতি হতে পারে।’
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে স্মৃতি সংগ্রহশালা করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেটি এখনও প্রক্রিয়াধীন। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা না আসলে আমাদের কিছু করার নেই।’
মাসুদ