ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঢাকায় হত্যা মিশন, কারফিউ জারি ঘরে ঘরে তল্লাশি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকায় হত্যা মিশন, কারফিউ জারি  ঘরে ঘরে তল্লাশি

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার পথে আগত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা

শাহ মতিন টিপু : ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরের দিনগুলো যতই পার হচ্ছিল, পাকসেনারা ততই উন্মত্ত হয়ে উঠছিল। এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে বাংলার মেধাবী সন্তানদের হত্যার মিশনে নেমে পড়ে তারা।

১৯৭১ সালের এইদিনে একজন সাহসী সংবাদকর্মীকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সাংবাদিকতার মাধ্যমে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন অকুতোভয় সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিবিসিতে তার পাঠানো সংবাদ বেতারে শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত এ দেশের সাধারণ মানুষ। তার নির্ভীক সংবাদ পরিবেশন মুক্তিযুদ্ধে প্রাণপণে অবতীর্ণ হওয়ার সাহস সঞ্চার করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল।

পাক হানাদাররা তাকে পুরান ঢাকার ১২/সি, রোকনপুরের বাসা থেকে চোখ বেঁধে গেঞ্জি পরিহিত অবস্থাতেই ধরে নিয়ে যায় । সে সময় ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসি কর্তৃপক্ষ প্রায় আধাঘন্টা সময় নিয়ে তার জীবনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে একটি মন্তব্য অনুষ্ঠান প্রচার করেছিল। পরদিনই তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি এই নির্ভিক সাংবাদিককে।

আর অন্যদিকে একাত্তরের এইদিনে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলই কার্যত স্বাধীন। এ দিন বঙ্গোপসাগর থেকে ২৪ ঘণ্টার দূরত্বে মার্কিন সপ্তম নৌবহর নিশ্চল দাঁড়িয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ততদিনে পাকিস্তানী বাহিনী পালিয়েছে। অধিকাংশ অঞ্চলই তখন কার্যত স্বাধীন হয়ে পড়ে। আর ঢাকার বিজয় নিশ্চিত করা তখন শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে পাক-হানাদারদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রায় নগ্ন হয়েই মাঠে নামে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে এ দুটি দেশের শেষ চেষ্টা আবার ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় আরও এক ধাপ।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান টেলিফোন করে জেনারেল নিয়াজীকে আশ্বস্ত করেন, ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিক থেকে বন্ধুরা এসে পড়বেন। গুল হাসানের কাছ থেকে এ আশ্বাস শুনে ঢাকায় পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতিরক্ষার আয়োজন নিরঙ্কুশ করতে ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালায়। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ দেশিয় দোসর আলবদর বাহিনী পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের আটক ও হত্যা শুরু করে।

অন্যদিকে চারদিকে তখন শুধুই মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়, আর পাক-হানাদারদের পরাজয়ের খবর। একাত্তরের এ দিনে গাইবান্ধা, নরসিংদী, সরিষাবাড়ী, ভেড়ামারা, শ্রীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। ঢাকাবাসী এ সময় অভীষ্ট আনন্দ আর অজানা আশঙ্কার এক অদ্ভুত দোলাচলে সময় পার করছেন। স্বাধীনতার ওই মাহেন্দ্রক্ষণটি কখন আসবে সেই মুহুর্তটি দেখতে অধীর অপেক্ষায় ঢাকাবাসী।

এদিকে ঢাকা বিজয় করতে চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঘেরাও করে ফেলে। এ দিন বিকেলেই ভারতের চার গার্ডস ইউনিট ঢাকার ডেমরা ঘাটের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যায়। সূর্যাস্তের আগেই জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিক থেকে জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলা ও যৌথবাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানী বাহিনী বিভিন্ন এলাকার ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়