ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভাষার মাসে ভাষা নিয়ে যত বিপত্তি

সজীব বণিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাষার মাসে ভাষা নিয়ে যত বিপত্তি

শাম্মী বিথী, আফসান সারওয়ার, শাকিলা সরকার, মাহমুদুল হাসান লিটন, রেজাউল করিম, রেজাউল করিম রাজু (ঘড়ির কাটার দিকে)

সজীব বণিক : ফেব্রুয়ারি প্রত্যয়দীপ্ত একটি মাস শুধু নয়, স্বাধীনতার সোপান, জাতীয় মূল্যবোধ ও ভাবাদর্শের বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনের মতো বিশেষ ঘটনা ও ভাষার জন্যে সালাম, জব্বার, রফিক, শফিকদের আদর্শগত আত্মত্যাগ সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে আমাদের জীবনে। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন আমাদের তরুণ প্রজন্ম? জানতে আমরা কথা বলেছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

মাহমুদুল হাসান, বাংলা বিভাগ, শাবিপ্রবি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমউদদীনের মতো অনেক কবি এই ভাষায় সমাদৃত হয়েছেন, খ্যাতি লাভ করেছেন। অথচ সেই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পরবর্তী সময়ে তেমন কোনো উদ্যেগ নিতে দেখা যায়নি। প্রযুক্তির অভিঘাতে সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। বিদেশি ভাষার প্রতি অতি আকর্ষণে অনেককে দেখা যায় বাংলা ভাষার প্রতি চরম উদাসীনতা।’

আমাদের ইতিহাস রয়েছে, ত্যাগ রয়েছে এবং মাতৃভাষাকে না জানলে কোনোভাবেই অন্য ভাষায় দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। বাংলা ভাষার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণে অবশ্যই সরকার সুদৃষ্টি দেবেন বলে মাহমুদুল হাসান মনে করেন।

রেজাউল করিম, বাংলা বিভাগ, জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রসঙ্গে বলতে গেলে সর্বপ্রথম রফিক, শফিক, জব্বার যে চেতনা বুকে ধারণ করে ভাষা আন্দোলনে আদর্শগত আত্মত্যাগ করেছিল তার কতোটুকু বাস্তবায়ন এ সময়ে হয়েছে এই প্রশ্ন আজ জাতির কাছে! ১৯৫২ সালের পর থেকে ভাষা দিবস পালিত হলেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়েছে কি? এখনো সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়নি। উচ্চ আদালত ও প্রশাসনসহ সর্বত্র এখনও ইংরেজির দাপট। এমনকি সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনসহ সবকিছুতেই ইংরেজির ছড়াছড়ি যা বাংলা ভাষার অতীত ইতিহাসকে অবজ্ঞা করে।’ 

তিনি আরো বলেন, ভাষার মাসে বাংলা ভাষার সর্বত্র ব্যবহারের আইনবিধি করার কোনো বিকল্প হতে পারে না।

শাম্মী বিথী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাষা সচেতনতার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। তারা না বাংলা, না ইংরেজি, না হিন্দি ভাষা বলছে-লিখছে অর্থাৎ কোনো ভাষাতেই সুনির্দিষ্টভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না। হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজিকে একসঙ্গে জগাখিচুড়ি করে বাংলাভাষার গুরুত্ব ও ঐতিহ্যকে তারা অবহেলা করছে। বাংলা ভাষার ইতিহাস ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য সবার সচেনতা তৈরির বিকল্প কিছু হতে পারে না। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা তাই এ ভাষার যথাযথ ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব।’

আফসান সারওয়ার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসান সারওয়ার বলেন, ‘ভাষার মাসে বইমেলায় হাজার হাজার বইয়ের ছড়াছড়ি দেখা যায়। লেখার মান অতটা ভালো না হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষা না জেনেই অনেকে বিভিন্ন বই বের করছে। লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় অনেকে বাংলা-ইংরেজি মিশ্রণের গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস লিখছে যা ভাষা বিকৃতির নামান্তর। এমন গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাস লিখে যারা নিজেদের লেখকের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তারা আসলে জানেন না যে, বাংলা ভাষা শুধু আমাদের দেশের নয়, ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও সমাদৃত। তাই এর ব্যবহার বিধি আমাদের অবশ্যই জানা উচিত এবং মেনে চলা উচিত।’

শাকিলা সরকার, বাংলা বিভাগ, কুবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিলা বলেন, ‘মানুষ তার দৈনন্দিন রুচি পাল্টাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পাশ্চাত্যের আদলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে এক ব্যর্থ প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছে। এসব থেকে তরুণদের বের করে আনার জন্যে বাংলা ভাষার সর্বত্র ব্যবহার ও ভাষাকেন্দ্রিক চেতনা, উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলা ভাষার প্রতি প্রবল অনুরাগ ও দেশের সংস্কৃতির ওপর মমত্ববোধ সৃষ্টিতে অবশ্যই বইকেন্দ্রিক একটি সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে আমাদের সবার সুদৃষ্টি দিতে হবে।’

রেজাউল করিম রাজু, রসায়ন বিভাগ, চবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম বলেন, ‘বিশ্বায়নের যুগে বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র করা প্রায় অসম্ভব। তবুও যেটুকু সম্ভব শুদ্ধভাবে যেন বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হয়। তা হতে পারে নাটকে, কবিতায়, গল্পে কিংবা সিনেমায়। বাংলা শব্দের সঙ্গে ইংরেজি, আরবি বা হিন্দি মিশ্রণে কোনো বীরত্ব নেই। বরং সঠিক এবং সুন্দরভাবে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি চর্চাই আমাদের আদর্শ জাতি হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পারে।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়