ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : এইডস হচ্ছে, এইচআইভি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে।

এইডস এবং এইচআইভি সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য আছে যা সম্পর্কে হয়তো আমরা জানি না। এইডস এবং এইচআইভি সম্পর্কে ১৩টি তথ্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

১. টাইমিংই সবকিছু

যারা ৮০’র মাঝামাঝিতে পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক ছিল তাদের তুলনায় জার (এক্স) প্রজন্ম, মিলেনিয়াল প্রজন্ম এবং এর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এইডসকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখা হয়। যদি আপনার মধ্যে ১৯৮৫ সালে এইডস নির্ণীত হতো, আপনি হয়তো ইতোমধ্যে মারা যেতেন, কিন্তু যদি ১৯৯৫ সালে এইডস নির্ণীত হতো, আপনি হয়তো এখনো জীবিত থাকতে পারতেন।

কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস ফর দ্য আমেরিকান কাউন্সিল অন সায়েন্স অ্যান্ড হেলথের পরিচালক জোশ ব্লুম বলেন, ‘এর কারণ হচ্ছে- এই ভাইরাস শণাক্তকরণের পর প্রথম ওষুধ এজেডটি, এটি অনুমোদিত হতে আট বছর লেগে যায় এবং ১৯৮৯ সালে তা অনুমোদিত হয়।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এজেডটি কাজ করে করেনি।’ তিনি যোগ করেন, ‘রোশে কর্তৃক আবিষ্কৃত প্রথম কার্যকরী ওষুধ ইনভারেজ অনুমোদিত হতে আরো ছয় লেগে যায় এবং এটি ১৯৯৫ সালে অনুমোদিত হয়।’ দৈবাধীনের বছরগুলোতে এইডস জনিত মৃত্যুহার না কমলেও বর্তমানে হ্রাস পাচ্ছে এবং এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়।

২. এইচআইভি রোগীরা বার্ধক্যগ্রস্ত হচ্ছে

এইচআইভি সংক্রমিত লোকেরা দীর্ঘ জীবনযাপন করছেন, যার জন্য উচ্চ কার্যকরী চিকিৎসা অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু বার্ধক্য তাদেরকে গ্রাস করছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, ২০১৪ সালে আনুমানিক ৪৫ শতাংশ এইচআইভি নির্ণীত আমেরিকানের বয়স ছিল ৫০ বছর, ২৭ শতাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছর এবং ৬ শতাংশের বয়স ছিল ৬৫ বছর। ধারণা করা হচ্ছে যে কয়েক বছরের মধ্যে এইচআইভিতে ভোগা লোকদের অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৫০ বছর পার হবে। দ্য ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিক্যাল সেন্টার ডিভিশন অব ইনফেকশাস ডিজিজের ডাক্তার কার্লোস ম্যালভেসটুট্টো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াগনোসিসের সময় তরুণ লোকদের তুলনায় বার্ধক্যগ্রস্ত লোকদের মধ্যে আরো উন্নত এইচআইভি ইনফেকশন নির্ণীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ তিনি যোগ করেন, ‘বার্ধক্যগ্রস্ত ব্যক্তিরা নিজেদেরকে এইচআইভি ইনফেকশনের ঝুঁকিতে আছেন বলে বিবেচনা না করার সম্ভাবনা রয়েছে, অথবা স্বাভাবিক বার্ধক্যগ্রস্ততার কারণে এইচআইভি উপসর্গ নির্ণয়ে ভুল করতে পারে।’ অনেক বার্ধক্যগ্রস্ত লোক যৌনক্রিয়ায় সক্রিয় থাকে এবং তাদের এইচআইভি প্রতিরোধের জ্ঞানের অভাব থাকতে পারে। বয়স যতই হোক না কেন, ডা. ম্যালভেসটুট্টো এইচআইভি টেস্টের গুরুত্বের ওপর জোর দেন, তিনি রোগীদের সঙ্গে যৌনক্রিয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের ওপর খোলামেলা আলোচনার জন্যও জোর দেন।

৩. অনেকেই জানে না তাদের এইচআইভি আছে

সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, এইচআইভি স্ট্যাটাস নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও এইচআইভি নিয়ে বাস করা প্রায় ৭ জনের মধ্যে ১ জন অথবা প্রায় ১৫ শতাংশ আমেরিকান এটি সম্পর্কে জানে না। ডা. ম্যালভেসটুট্টো বলেন, ‘এইচআইভি পরীক্ষা খুব সংবেদনশীল ও দ্রুত পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে, যা প্রায় ৪০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল প্রদান করতে পারে এবং খুব সম্প্রতি অর্জিত এইচআইভি ইনফেকশন শণাক্ত করতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘সিডিসির গাইডলাইনে ১৩ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে এইচআইভি পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হলেও এইচআইভি থাকা অনেক লোক রোগটি অগ্রসর পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত সচেতন হয় না।’ এ কারণে সকলের কাছে এইচআইভি পরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা উচিত যাতে সকল রোগীর এইচআইভি নির্ণীত হয় এবং যত দ্রুত সম্ভব এইচআইভির চিকিৎসা শুরু করা যায়।

৪. সকল এইচআইভি রক্ত পরীক্ষা একরকম নয়

বিভিন্ন রকম এইচআইভি পরীক্ষা আছে, যেমন- এইচআইভি অ্যান্টিবডি টেস্ট এবং এইচআইভি অ্যান্টিবডি/অ্যান্টিজেন টেস্ট, যাদের প্রত্যেকটির নিজস্ব সুবিধা ও শণাক্তকরণ পদ্ধতি আছে। অ্যাবটের একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী মেরি রজার্স বলেন, ‘মূলত, পরীক্ষাসমূহের কাজ করার আগেই ভাইরাসটির প্রতি শরীরের ইমিউন প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠা প্রয়োজন হয়।’ এইচআইভি অ্যান্টিবডি টেস্ট হল একটি রক্ত পরীক্ষা যা অ্যান্টিবডির জন্য রক্তের নমুনা খোঁজে যা এইচআইভির প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইমিউন সিস্টেম দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল। এইচআইভি ভাইরাসের প্রতি প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার শরীরের পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি উৎপাদনে তিন থেকে বার সপ্তাহ লেগে যায় এবং এইচআইভি পরীক্ষায় নির্ভুল ফলাফল পেতেও সময়ের এ রেঞ্জ লাগতে পারে।’ অন্যদিকে, এইচআইভি অ্যান্টিবডি/অ্যান্টিজেন টেস্ট অ্যান্টিবডির সঙ্গে অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত প্রকৃত ভাইরাসের প্রকৃতিও শণাক্ত করতে পারে, তাই এই সমন্বয় পরীক্ষা তাড়াতাড়ি এইচআইভি উদঘাটনে সমর্থ হয়। ডা. ম্যালভেসটুট্টো বলেন, ‘আপনার রক্তে যথেষ্ট অ্যান্টিজেন হতে মাত্র দুই থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে।’

৫. চিকিৎসা অধিক কার্যকরী, সুবিধাজনক ও সহনীয় হচ্ছে

পূর্বে ওষুধের একটি ককটেলে অনেক পিল অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং দিনে অনেকবার সেবন করতে হতো এবং এ স্বাস্থ্যবিধির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, শরীরের চর্বির পুনর্বিন্যাস, কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি, মাথা ঘোরা, প্রাণবন্ত স্বপ্ন (যে স্বপ্নকে বাস্তবতা থেকে আলাদা ভাবা কঠিন) এবং বিষণ্নতার মতো অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জড়িত ছিল। ডা. ম্যালভেসটুট্টো বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের অনেক সমন্বিত স্বাস্থ্যবিধি আছে যা প্রবলভাবে কার্যকর এবং যৎসামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যদি থাকে) সৃষ্টি করে।’ আজকের এইডস রোগীরা প্রয়োজনীয় সমস্ত ওষুধ তাদের সুবিধার্থে এক-পিল-এক-দিন স্বাস্থ্যবিধির আওতায় একসঙ্গে পেতে পারে। নিকট ভবিষ্যতে আমরা দীর্ঘ-কার্যকরী ওষুধ পেতে পারি, যেখানে এমনকি দিনে একটি পিলেরও প্রয়োজন হবে না, এর পরিবর্তে আমরা ইনজেক্ট্যাবল ওষুধ (গবেষণাধীন) প্রয়োগ করতে পারি, যা দুই মাসে একবার প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং তা মৌখিক চিকিৎসা স্বাস্থ্যবিধির মতো ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৬. উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের এইচআইভি অর্জন ঠেকাতে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে

যদিও এইচআইভি প্রতিরোধযোগ্য টিকা এখনো পাওয়া যায় না, কিন্তু যারা এইচআইভি অর্জনের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে তাদের জন্য এইচআইভি ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্য প্রতিদিন মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ আছে। ডা. ম্যালভেসটুট্টো বলেন, ‘সম্প্রতি অনুমোদিত ওষুধটি একটি পিল যা দুটি ওষুধের সমন্বয় (টেনোফোভার এবং এমট্রিসিটাবিন) এবং এটি উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা অসংক্রমিত লোকদের এইচআইভি অর্জন প্রতিরোধ করতে ৯৪ শতাংশেরও বেশি কার্যকর।’ এরকম প্রতিরোধকে প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস বলে। ডা. ম্যালভেসটুট্টো বলেন, ‘২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্তৃক এটি অনুমোদিত হয় এবং সারাবিশ্বে এটি সম্পর্কে সচেতনতা ও এটির প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ অনেক শহরে এটি সমন্বিত এইচআইভি কন্ট্রোল সার্জারির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আশা করা হচ্ছে যে, নিকট ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস পাওয়া যাবে যেখানে দৈনিক পিল সেবনের প্রয়োজন হবে না, যেমন- ভ্যাজাইনাল রিং, সাবকিউট্যানিয়াস ইমপ্লান্ট (যা ধীরে ধীরে ওষুধ রিলিজ করবে) এবং দীর্ঘ-কার্যকরী ইনজেক্ট্যাবল ওষুধ (যা প্রতি আট সপ্তাহে একবার প্রয়োগ করা হবে)।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন : 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়