ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পেনশনের পুরোনো ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পেনশনের পুরোনো ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবি

কেএমএ হাসনাত : সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রস পেনশন শতভাগ সমর্পণের সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। পুরোনো ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্তকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

গত ৯ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের পুরো টাকা তুলে নেওয়ার সুবিধা প্রত্যাহার  করা হয়। এর পরিবর্তে পেনশনের মোট অর্থের ৫০ শতাংশ এককালীন এবং বাকি ৫০ শতাংশ মাসে মাসে তুলে নেওয়ার বিধান জারি করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বেসামরিক ও সামরিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন এ বিধান চালু করে। পেনশনধারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার স্বার্থে বিধানটি চালু করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

প্রজ্ঞাপন জারির ছয় দিন পর বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ১৫ জানুয়ারি এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে সংগঠনের সভাপতি মো. আলী উদ্দিন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন, বাংলাদেশ সচিবালয় হিসাব রক্ষণ সমিতির সভাপতি নিলুফার আক্তার, বাংলাদেশ সচিবালয় চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ সচিবালয় পার্সোনাল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ স্বাক্ষর করেছেন। 

বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বেতন কমিশন, ২০১৫ কর্তৃক ২০ শতাংশ হারে সচিবালয় ভাতা চালুর সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণ ব্যাংকের মতো ৫ শতাংশ সুদে সর্বনিম্ন ৪০ লাখ টাকা সহজ কিস্তিতে দেওয়া, মোটরসাইকেল ক্রয় ঋণ সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা করার দাবি জানানো হয়।

অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই নতুন বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ এ বছরের ৩০ জুন বা তারপর যাদের অবসর-উত্তর ছুটি শেষ হবে, তারাই নতুন নিয়মের আওতায় আসবেন। তবে পেনশনার বা পারিবারিক পেনশনাররা মাসিক পেনশনের ওপর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এটাও কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।

বর্তমানে কেউ চাইলে পুরো টাকা তুলে নিয়ে যেতে পারেন, আবার মাসে মাসেও নিতে পারেন। অর্থাৎ দুটি পথই খোলা আছে। নতুন বিধানের মাধ্যমে পেনশনের ৫০ শতাংশ মাসিক ভিত্তিতে নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি কর্মচারীদের শতভাগ পেনশনের টাকা তুলে নেওয়ার পরিবর্তে ৫০ শতাংশ তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দেখেছি পুরো টাকা একসঙ্গে তুলে নিয়ে অনেক পেনশনার বিপদে পড়েছেন। কেউ ব্যবসা করতে গিয়ে মার খেয়েছেন, কেউ সর্বস্বান্ত হয়েছেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। তাদের অনেকে এখন সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন মন্ত্রণালয়ে। পুরো টাকা তুলে না নিলে এ শোচনীয় পরিস্থিতি তৈরি হতো না। পেনশনধারীদের সামাজিক সুরক্ষা দিতেই নতুন বিধানটি চালু করা হয়েছে।’

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পেনশন নিয়ে তার নতুন পরিকল্পনা এবং প্রবীণদের জন্য তার দরদের কথা বলেছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এত বয়সে কোথায় হাত পাতবেন প্রবীণেরা?’ বাজেট বক্তব্যে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চাহিদা পূরণের সহায়ক তহবিল সৃষ্টির কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, এতে দেশের আর্থিক খাতের গভীরতাও নিশ্চিত হবে।

নতুন প্রজ্ঞাপনটি হঠাৎ জারি করা হয়নি জানিয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই নতুন পেনশন-পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করে। বিভাগটি এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্রও তৈরি করে, যা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয় গত আগস্টে।’

ওই কর্মকর্তা  আরো বলেন, পেনশন নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে তা পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ নেই। সরকারি চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এ বিধান জারি করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ/ এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়